গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও হাজারো পরিবার এখনো অন্ধকারে জীবন কাটাচ্ছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন এই জনপদে মানুষজন টিকে আছে ন্যূনতম আলো, সৌর চার্জিং পয়েন্ট কিংবা অস্থায়ী জেনারেটরের ওপর নির্ভর করে। মৌলিক চাহিদা পূরণ করাই আজ তাদের জন্য সবচেয়ে বড় লড়াই।
পরিবারের কঠিন বাস্তবতা
নুসেইরাতের একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে বসবাস করছেন ৩১ বছরের হানান আল-জুজু। তিন সন্তানের এই মা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সম্পূর্ণ অন্ধকারে খাবার তৈরি করেন। কখনো টর্চলাইট জ্বলে, কখনো জ্বলে না।
হানান বলেন,
“সূর্য ডোবা আর মাগরিব আজানের পরই পুরো শিবির অন্ধকারে ঢেকে যায়। টর্চ চার্জ না থাকলে আমরা আলো বা খাবার—কিছুই পাই না।”
কিছুদিন মোমবাতি ব্যবহার করলেও আগুন লাগার ঝুঁকিতে তা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন তারা। সস্তা একটি এলইডি বাতিও ভেঙে গেছে—মেরামতের মতো সামর্থ্য নেই।
যুদ্ধের আগে গাজায় বিদ্যুতের অবস্থা
যুদ্ধ শুরুর আগেই গাজার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল অনিশ্চিত:
• ইসরায়েল থেকে ১২০ মেগাওয়াট
• গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৬০ মেগাওয়াট
কিন্তু ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজাকে “সম্পূর্ণ অবরোধে” রাখে। কয়েক দিনের মধ্যেই গাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান অবস্থা: শূন্য সরবরাহ
গাজা বিদ্যুৎ কোম্পানির মিডিয়া পরিচালক মোহাম্মদ থাবেত জানান,
“গত দুই বছর ধরে গাজায় এক ইউনিট বিদ্যুৎও প্রবেশ করেনি। যুদ্ধের আগে আমাদের দৈনিক প্রয়োজন ছিল ৬০০ মেগাওয়াট।”
ইসরায়েলি হামলায় গাজার বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্কের ৮০% এর বেশি ধ্বংস হয়েছে। প্রথম হিসাব অনুযায়ী অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ক্ষতি প্রায় ৭২৮ মিলিয়ন ডলার।
আলো পাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা
কিছু বাসিন্দা সৌরশক্তিচালিত চার্জিং পয়েন্ট বা ব্যক্তিগত জেনারেটরের ওপর নির্ভর করেন। তবে সেটিও নিরাপদ নয়।
মোহাম্মদ আল-হোর বলেন,
“আমরা বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের একটি চার্জিং পয়েন্ট চালাতাম। ইসরায়েলি বোমা হামলায় বাড়ি ধ্বংস হয়, চার্জিং স্টেশনও উড়ে যায়। ওই হামলায় আমার ভাইও শহীদ হন।”
ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়—বেসামরিক অবকাঠামো তাদের লক্ষ্য নয়, তবে হামাসের অবস্থান বেসামরিক এলাকাতেই হওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হয়।
২০২৪ সালের মার্চে ইসরায়েলি মন্ত্রী এলি কোহেন জানান, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাজায় বিদ্যুৎ বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি।

ইসরায়েলের দাবি—সাহায্য প্রবেশে সহযোগিতা
COGAT জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জ্বালানি-সমেত মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি তারা দিচ্ছে। পাশাপাশি কেরেম পাওয়ার লাইন এর মাধ্যমে দুটি লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে খান ইউনুসের একটি জাতিসংঘ-পরিচালিত লবণমুক্তকরণ প্ল্যান্টেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।
গাজার মানুষের স্থায়ী অনিশ্চয়তা
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও বাস্তবে গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবন যুদ্ধের মতোই কঠিন। অন্ধকারে রান্না, অন্ধকারে পড়াশোনা, রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া—এই জীবন যেন শেষই হচ্ছে না।
কবে গাজায় আবার নিয়মিত বিদ্যুৎ আসবে, তা কেউ জানে না। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট—এখনকার পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সম্পূর্ণ নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন, যা সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
#গাজা #মধ্যপ্রাচ্য# ইসরায়েল-হামাস#মানবিক_সংকট# বিদ্যুৎ_সংকট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















