রংপুরের বদরগঞ্জের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তিনদিন আগে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকায় রওনা দিয়েছিলেন। স্ত্রী লাকী বেগম তখনও জানতেন—স্বামী ব্যস্ত, ঠিকই ফিরবেন। কিন্তু স্বামীর খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ যখন ঢাকায় মিলল ২৬ খণ্ডে, তখন বুঝলেন—সেই ব্যস্ততার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক নির্মম হত্যাকাণ্ড।
ঢাকার ড্রাম থেকে মিলল ২৬ খণ্ড মরদেহ
১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হাইকোর্টের পাশে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামের মধ্যে পাওয়া যায় মানবদেহের বহু টুকরো। মোট ২৬ খণ্ডের এই মরদেহ প্রথমে কার তা শনাক্ত করা না গেলেও পরে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করে—এটি আশরাফুল হকের দেহ।
কীভাবে জানল পরিবার? স্ত্রীর সন্দেহ থেকেই শুরু
তিনদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না পেয়ে স্ত্রী লাকী বেগম থানায় যান। এর আগে জরেজ মিয়া তার ফোন রিসিভ করে জানিয়েছিলেন, “আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।”
বুধবার বিকেল ৫টায় আশরাফুলের সঙ্গে স্ত্রীর শেষ কথা হয়। এরপর জরেজ ফোন ধরলেও স্বামীর ফোন “ড্রেনে কুড়ানো” বলে জানায়। সন্দেহ ও অস্বস্তিতে ভুগতে ভুগতে পরিবার বদরগঞ্জ থানায় গেলে জানতে পারে—ঢাকায় একটি খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

জরেজ মিয়া কি এই ঘটনায় জড়িত?
পরিবার বলছে, আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়া দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি নিয়মিত আশরাফুলের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। পরিবার দাবি করেছে, জরেজ আশরাফুলের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা ধার চাইছিলেন।
ঘটনার পর থেকে তার আচরণ, ফোন ধরার ধরন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে পরিবারের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
ব্যবসায়ী আশরাফুল: সহজসরল মানুষের শেষ পরিণতি
আশরাফুল ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ–আলু আমদানি করতেন। ছিলেন সরকারি লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী। হিলি থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন।
পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষায়—তিনি সহজসরল, সমাজসেবী, মানুষের উপকারে সদা প্রস্তুত ছিলেন।
তাদের প্রশ্ন—এত শান্ত স্বভাবের মানুষকে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো কেন?
হত্যাকাণ্ডের আগে শেষ দিনগুলোর কার্যক্রম
ঘটনার আগে মঙ্গলবার দুপুরে আশরাফুল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ওয়ারিশ সনদ ও জমির রেজিস্ট্রির কাজে ছিলেন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। রাতেই অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় রওনা দেন।
তারপর আর বাড়ি ফেরেননি—ফিরেছে শুধু মরদেহ।

তদন্ত: দুই থানার সমন্বয়ে চলছে কাজ
বদরগঞ্জ থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান জানিয়েছেন—পরিবারের দেওয়া তথ্য রমনা এবং শাহবাগ থানার সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। ঢাকায় মামলা হবে এবং তদন্তও সেখানেই পরিচালিত হবে।
পরিবারের দাবি: দ্রুত গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচার
নিহতের স্বজনরা বলছেন—
- “এভাবে কাউকে হত্যা করা যায়?”
- “দোষীরা যত প্রভাবশালীই হোক, গ্রেপ্তার হতেই হবে।”
- “আমরা দ্রুত বিচার চাই।”*
পুরো গ্রাম এখন শোক, ক্ষোভ আর প্রশ্নে ভারী।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















