বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক সারা দেশে ৪৫০টি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যক্যাম্প, র্যালি ও সচেতনতা কার্যক্রম আয়োজন করে। পরীক্ষাসেবা ও পরামর্শ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
দেশজুড়ে স্বাস্থ্যক্যাম্প ও র্যালিতে সাড়া
সারা দেশে ব্র্যাকের উদ্যোগে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও র্যালির মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ আয়োজন করা হয়।
সারাদেশে ৪৫০টি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যক্যাম্প, সচেতনতামূলক র্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি দিবসটি পালন করে। দেশের ২৭৫টি উপজেলায় পরিচালিত এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের (এনসিডি) পরীক্ষা, সেবা ও পরামর্শ সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ উদ্যোগ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেখানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা এবং সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

গত এক দশকে ব্র্যাক সারা দেশে প্রায় ৫৮ লাখ মানুষের এনসিডি স্ক্রিনিং করেছে। ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ ও পরিচর্যায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার ফলে এখন সাধারণ মানুষ আগেভাগে রোগ শনাক্ত করতে ও চিকিৎসা পেতে সক্ষম হচ্ছে। সবার জন্য পরীক্ষার সুযোগ ও দীর্ঘমেয়াদি সেবা নিশ্চিত করতে ব্র্যাক ভবিষ্যতে এ উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
ডায়াবেটিস বাড়ছে: আগাম শনাক্তই প্রধান সুরক্ষা
বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। এ অবস্থায় আগাম শনাক্তকরণ ও নিয়মিত চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু এখনো অনেক মানুষ পরীক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ব্র্যাকের কমিউনিটি-ভিত্তিক মডেল মানুষের বাড়ির কাছেই তাৎক্ষণিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সম্পর্কে পরামর্শ এবং সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদি সেবার পথ নির্দেশনা দিচ্ছে।
নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিশেষ সহায়তা
সরকারি উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে ব্র্যাক স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এতে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী—বিশেষ করে শহুরে বস্তি, গ্রাম এবং শহরতলির মানুষ।

রংপুর ও নারায়ণগঞ্জে এনসিডি প্রকল্প পরিদর্শন
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রংপুর বিভাগ ও নারায়ণগঞ্জে ব্র্যাক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মেডট্রনিকস ল্যাবসের যৌথভাবে পরিচালিত এনসিডি প্রকল্প পরিদর্শন করেন সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীর তথ্য সরকারি হাসপাতালের এনসিডি কর্নারের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে প্রাথমিক শনাক্তের পর নিয়মিত ফলো-আপ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।
স্ক্রিনিং থেকে আজীবন সেবা—ব্র্যাকের লক্ষ্য
ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সিনিয়র পরিচালক ডা. মো. আক্রামুল ইসলাম বলেন,
“অনেক দিন ধরে দেশের লাখো মানুষ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য এনসিডির প্রাথমিক স্ক্রিনিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন আমরা দেখছি, আগাম শনাক্তকরণের সুফল বিভিন্ন কমিউনিটি উপভোগ করছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্ক্রিনিংয়ের পর রোগীরা যেন আজীবন সেবা পান—এ জন্য ডিজিটাল সিস্টেম ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয় আরও শক্তিশালী করা।”

সরকার–ব্র্যাক অংশীদারত্বে এনসিডি সেবার উন্নয়ন
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন,
“এনসিডিসি ও ব্র্যাকের অংশীদারত্ব দেখিয়েছে কীভাবে সরকারি নেতৃত্ব, কমিউনিটি পর্যায়ের সেবা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের সমন্বয় ডায়াবেটিস ও এনসিডি সেবা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২৫-এর ‘জীবনের প্রতিটি ধাপে ডায়াবেটিস সেবা’ প্রতিপাদ্যকে আমরা বাস্তবে রূপ দিচ্ছি—যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সমান ও মানসম্মত সেবা পান।”
অসংক্রামক রোগে সর্বোচ্চ মৃত্যু: বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা
সম্প্রতি ব্র্যাক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের বেশি ঘটে দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যব্যয়ের প্রায় ৬৮ শতাংশ নিজের পকেট থেকে বহন করতে হয়—ফলে অনেক পরিবার দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়ে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত থাকে।
# ব্র্যাক • ডায়াবেটিস • স্বাস্থ্যক্যাম্প • এনসিডি • বিশ্ব_ডায়াবেটিস_দিবস
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















