০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

নতুন আয়রন-গ্রে পুলিশ ইউনিফর্ম নিয়ে জনমতের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন আয়রন-গ্রে রঙের ইউনিফর্ম জনসাধারণের নজর কেড়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শনিবার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে নতুন পোশাকে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়, যা বহু বছরের প্রচলিত ইউনিফর্ম থেকে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন।


উপস্থাপনায় নতুনত্ব: অনলাইনে প্রশংসা ও সমালোচনা

নতুন মেটালিক টোনের এই ইউনিফর্মের ছবি ও ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই এটিকে আধুনিক, পেশাদার ও সময়োপযোগী হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

তবে অন্য একদল মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন নতুন রঙের ব্যবহারিকতা, এর ব্যয় এবং শুধু পোশাক পরিবর্তন পুলিশিংয়ের মানোন্নয়নে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে।

পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, ইউনিফর্ম পরিবর্তন বৃহত্তর আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার অংশ, যার লক্ষ্য বাহিনীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি শক্তিশালী করা।

অনেকে মত দিয়েছেন, প্রকৃত সংস্কার পোশাকের বাইরে গিয়ে কর্মক্ষমতা, জবাবদিহি ও প্রতিষ্ঠানগত সততার ওপর ভিত্তি করে হতে হবে।


নতুন ইউনিফর্ম উন্মোচন: সরকারের আধুনিকায়ন উদ্যোগ

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি সরকার পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের জন্য পুনর্গঠিত নতুন ইউনিফর্ম উন্মোচন করে। প্রতিটি বাহিনীর জন্য আলাদা রঙ নির্ধারণ করা হয়, যা দৃশ্যমানতা ও পেশাদারিত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত।

গৃহ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তিন বাহিনীর জন্য তিনটি নতুন নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।

ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এতে জাতীয় বাজেটে বাড়তি চাপ পড়বে না।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, এই পরিবর্তন বাহিনীর ইমেজ উন্নয়ন ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।


পটভূমি: সংস্কার আলোচনার ধারাবাহিকতা

গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশ সংস্কার নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ইউনিফর্মের রঙ পরিবর্তনের দাবি তোলেন, যা প্রতিষ্ঠানগত মানসিকতার পরিবর্তন ও মনোবল বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখা হয়।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৪ সালে, যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ইউনিফর্ম থেকে নৌকা প্রতীক সরিয়ে দেয়। মহানগর পুলিশের জন্য হালকা অলিভ এবং জেলা পুলিশের জন্য গাঢ় নীল রঙ নির্ধারণ করা হয়। র‌্যাব গঠনের সময় থেকেই কালো ইউনিফর্ম ব্যবহার করছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পুনরায় ইউনিফর্মে নৌকা প্রতীক ফিরিয়ে আনে।


ইতিহাস থেকে শিক্ষা: ইউনিফর্ম পরিবর্তন ও রাজনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশে ইউনিফর্ম পরিবর্তনের পেছনে অনেক সময় রাজনৈতিক কারণও কাজ করেছে—বিশেষ প্রতীক বা রঙকে নির্দিষ্ট ঘটনা বা দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে দূরে রাখতে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে।

এমনই একটি উদাহরণ বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)। ২০০৯ সালের বিদ্রোহের পর ২০১১ সালে এর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়, সঙ্গে লোগো ও ইউনিফর্মেও পরিবর্তন আনা হয়।


#tags
বাংলাদেশ পুলিশ #ইউনিফর্ম পরিবর্তন #নতুন রঙ #সামাজিক প্রতিক্রিয়া#  পুলিশ আধুনিকায়ন

জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন আয়রন-গ্রে পুলিশ ইউনিফর্ম নিয়ে জনমতের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

০৪:২১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন আয়রন-গ্রে রঙের ইউনিফর্ম জনসাধারণের নজর কেড়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শনিবার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে নতুন পোশাকে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়, যা বহু বছরের প্রচলিত ইউনিফর্ম থেকে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন।


উপস্থাপনায় নতুনত্ব: অনলাইনে প্রশংসা ও সমালোচনা

নতুন মেটালিক টোনের এই ইউনিফর্মের ছবি ও ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই এটিকে আধুনিক, পেশাদার ও সময়োপযোগী হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

তবে অন্য একদল মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন নতুন রঙের ব্যবহারিকতা, এর ব্যয় এবং শুধু পোশাক পরিবর্তন পুলিশিংয়ের মানোন্নয়নে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে।

পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, ইউনিফর্ম পরিবর্তন বৃহত্তর আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার অংশ, যার লক্ষ্য বাহিনীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি শক্তিশালী করা।

অনেকে মত দিয়েছেন, প্রকৃত সংস্কার পোশাকের বাইরে গিয়ে কর্মক্ষমতা, জবাবদিহি ও প্রতিষ্ঠানগত সততার ওপর ভিত্তি করে হতে হবে।


নতুন ইউনিফর্ম উন্মোচন: সরকারের আধুনিকায়ন উদ্যোগ

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি সরকার পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের জন্য পুনর্গঠিত নতুন ইউনিফর্ম উন্মোচন করে। প্রতিটি বাহিনীর জন্য আলাদা রঙ নির্ধারণ করা হয়, যা দৃশ্যমানতা ও পেশাদারিত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত।

গৃহ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তিন বাহিনীর জন্য তিনটি নতুন নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।

ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এতে জাতীয় বাজেটে বাড়তি চাপ পড়বে না।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, এই পরিবর্তন বাহিনীর ইমেজ উন্নয়ন ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।


পটভূমি: সংস্কার আলোচনার ধারাবাহিকতা

গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশ সংস্কার নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ইউনিফর্মের রঙ পরিবর্তনের দাবি তোলেন, যা প্রতিষ্ঠানগত মানসিকতার পরিবর্তন ও মনোবল বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখা হয়।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৪ সালে, যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ইউনিফর্ম থেকে নৌকা প্রতীক সরিয়ে দেয়। মহানগর পুলিশের জন্য হালকা অলিভ এবং জেলা পুলিশের জন্য গাঢ় নীল রঙ নির্ধারণ করা হয়। র‌্যাব গঠনের সময় থেকেই কালো ইউনিফর্ম ব্যবহার করছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পুনরায় ইউনিফর্মে নৌকা প্রতীক ফিরিয়ে আনে।


ইতিহাস থেকে শিক্ষা: ইউনিফর্ম পরিবর্তন ও রাজনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশে ইউনিফর্ম পরিবর্তনের পেছনে অনেক সময় রাজনৈতিক কারণও কাজ করেছে—বিশেষ প্রতীক বা রঙকে নির্দিষ্ট ঘটনা বা দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে দূরে রাখতে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে।

এমনই একটি উদাহরণ বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)। ২০০৯ সালের বিদ্রোহের পর ২০১১ সালে এর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়, সঙ্গে লোগো ও ইউনিফর্মেও পরিবর্তন আনা হয়।


#tags
বাংলাদেশ পুলিশ #ইউনিফর্ম পরিবর্তন #নতুন রঙ #সামাজিক প্রতিক্রিয়া#  পুলিশ আধুনিকায়ন