ওয়াশিংটন ডিসির খ্যাতনামা ফিলিপস কালেকশন আগামী ২০ নভেম্বর নিউইয়র্কে সথেবিজের নিলামে জর্জিয়া ও’কিফ, আর্থার ডভ এবং জর্জ স্যুরার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম বিক্রি করতে যাচ্ছে। নতুন শিল্পীদের কাজ কমিশন করার জন্য অর্থ সংগ্রহের এই পরিকল্পনা জাদুঘরের প্রভাবশালী সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি করেছে।
নিলামে উঠছে যে মাস্টারপিসগুলো
ও’কিফের “Large Dark Red Leaves on White” চিত্রকর্মের মূল্য অনুমান ৬–৮ মিলিয়ন ডলার।
স্যুরার কন্টে ক্রেয়ন আঁকার সম্ভাব্য মূল্য ৩–৫ মিলিয়ন ডলার।
আর্থার ডভের একটি চিত্রকর্মের মূল্য ধরা হয়েছে ১.২–১.৮ মিলিয়ন ডলার।
এই শিল্পকর্মগুলো জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ডানকান ফিলিপস ও তাঁর স্ত্রী মার্জোরি ফিলিপস নিজের হাতে সংগ্রহ করেছিলেন।
সমর্থক ও সদস্যদের তীব্র আপত্তি
ফিলিপস কালেকশনের সাবেক প্রধান কিউরেটর এলিজা র্যাথবোন বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতার দৃষ্টিভঙ্গিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডানকান ফিলিপসের নাতনি ও বোর্ডের চেয়ার লিজা ফিলিপসও গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, এসব শিল্পকর্ম জনসাধারণের সম্পদ; ব্যক্তিগত মালিকানায় চলে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখের।
১৮ মাসের গোপন বিরোধ—শেষ মুহূর্তে সমঝোতা
দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে পর্দার আড়ালে চলা বিতর্ক গত সপ্তাহে তীব্র আকার ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব এবং সদস্যপক্ষ এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছায়, যাতে চলমান বিক্রি বাধাগ্রস্ত না হয়, তবে ভবিষ্যতের বিক্রিতে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়।

ডি-অ্যাকসেশন নীতি বদলে গেলো
২০০০ সাল থেকে প্রচলিত নীতিতে “The Eye of Duncan Phillips” গ্রন্থে তালিকাভুক্ত শিল্পকর্মগুলোকে মূল সংগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং এগুলো বিক্রি করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বইটিতে জাদুঘরের পুরো সংগ্রহের মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ ছিল।
নতুন সমঝোতা অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালের “The Phillips Collection: A Summary Catalogue”–এ থাকা সব শিল্পকর্ম এখন থেকে মূল সংগ্রহ হিসেবে গণ্য হবে, এবং বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া এগুলো বিক্রি করা যাবে না।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষের যুক্তি
জাদুঘরের পরিচালক জোনাথন বেনস্টক বলেছেন, বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ স্থায়ী তহবিলে যাবে এবং এই তহবিল ব্যবহৃত হবে নতুন শিল্পীদের কাজ কমিশন করতে। তাঁর দাবি, ডানকান ফিলিপস জীবিত শিল্পীদের সমর্থন করতেন, তাই এই পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠাতার ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, যেসব কাজ বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো জাদুঘরের মূল বার্তা বা শিল্পীর প্রাধান্য বোঝাতে অপরিহার্য নয়। বিক্রির সিদ্ধান্ত ট্রাস্টিদের সর্বসম্মত অনুমোদন পেয়েছে।
আরও যেসব কাজ বিক্রি হবে
অ্যানিশ কাপুর, লেল্যান্ড বেল ও হাওয়ার্ড মেহরিং-এর কাজ ১৯ নভেম্বর সমকালীন শিল্প নিলামে উঠবে।
১৯ শতকের ফরাসি শিল্পী অঁরি ফাঁতাঁ-লাতুরের একটি স্থিরচিত্র ২১ নভেম্বর বিক্রি হবে।
পাবলো পিকাসোর একটি ভাস্কর্য এবং মিল্টন অ্যাভেরির একটি কাগজে আঁকা কাজ পরবর্তী ধাপে বিক্রি করা হবে।
ডি-অ্যাকসেশন নিয়ে শিল্পজগতে দীর্ঘ বিতর্ক
করোনার পর আর্থিক চাপে থাকা বহু জাদুঘর তাদের সংগ্রহের মূল্যবান শিল্পকর্ম বিক্রির চেষ্টা করছে। সমালোচকদের মতে, এটি জনআস্থার লঙ্ঘন, দানশীলতা নিরুৎসাহিত করে এবং নন–প্রফিট প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
জাদুঘর নির্দেশক সমিতির বোর্ড সদস্য হিসেবে বেনস্টক বলেছেন, এসব সমালোচনা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
সদস্যদের পাল্টা যুক্তি
র্যাথবোনের নেতৃত্বে সদস্যরা যুক্তি দেন, স্যুরার এই ড্রয়িংটি ৮৫ বছর ধরে ফিলিপসে আছে এবং এটি নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামের বিখ্যাত স্যুরার চিত্রকর্ম ‘Circus Sideshow’-এর প্রথম স্টাডি। তাঁদের মতে, এটি বিক্রি হলে তা ‘প্রথম সারির ট্র্যাজেডি’ হবে।
ও’কিফের চিত্রকর্মকে তারা সংগ্রহের প্রতীকধর্মী ও ইউনিটভিত্তিক সংগ্রহ ধারণার অপরিহার্য উপাদান বলে মনে করেন। তাই এই ইউনিট ভেঙে ফেলা অবিবেচনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেন তারা।
ফিলিপস কি সত্যিই বিক্রির পক্ষপাতী ছিলেন?
ডানকান ফিলিপস ও তাঁর স্ত্রী মার্জোরি অতীতে কিছু কাজ বিক্রি করেছিলেন। আর্থিক সংকটে কখনো কখনো বিক্রি করা তাঁদের জন্য অপরিহার্য ছিল। ফিলিপস বলেছিলেন, “শুধু ভালো কাজই বিক্রি হয়, তাই ভালো কাজকেই ত্যাগ করতে হয়।”
তবে র্যাথবোনের মতে, পরবর্তী সময়ে এমন মাস্টারপিস বিক্রির কথা আর কখনো ওঠেনি।

পরিবারের ক্ষোভ
লিজা ফিলিপস বলেছেন, সংগ্রহকে সাংগঠনিকভাবে হালনাগাদকরণ প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু প্রথম পথ হওয়া উচিত তহবিল সংগ্রহ। পরিবারের কেউ কখনো ভাবেনি যে এই মানের মাস্টারপিস বিক্রি করা হতে পারে।
ফিলিপস কালেকশনের এই বিক্রির সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ বিরোধ, নৈতিক প্রশ্ন ও দীর্ঘদিনের নীতি পুনর্বিবেচনার জন্ম দিয়েছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিল্পীদের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও সমালোচকেরা মনে করেন, এটি জাদুঘরের ঐতিহ্য, সংগ্রহের পরিচয় এবং প্রতিষ্ঠাতার দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে বড় আঘাত।
# Phillips Collection #Sothebys Auction #Art Deaccessioning #Georgia O’Keeffe #Georges Seurat #Arthur Dove #Museum Policy #Washington DC
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















