নস্ট্যালজিয়ার টানে এবং মানসিক শান্তির খোঁজে লেগো এখন আর শুধু শিশুদের খেলনা নয়—বয়স্কদের কাছেও এটি হয়ে উঠেছে সৃজনশীলতা, বিশ্রাম এবং শখের বড় মাধ্যম।
সাহারা হানির গল্প—অভ্যাস না থাকা থেকে আগাধ ভালোবাসা
৩৬ বছর বয়সী সাহারা হানি প্রথমবার লেগো হাতে নিয়ে খুব একটা ভালোবাসেননি। স্বামীকে নিয়ে ডেট নাইটে ছোট একটি সেট কিনেছিলেন। তাদের ভালো লাগেনি।
কিন্তু বছরখানেক আগে নিজের হোম অফিস সাজাতে গিয়ে তিনি লেগোর ফুলের সেট—গোলাপ আর সূর্যমুখী — খুঁজে পান। সেটি জোড়া লাগাতে গিয়ে তিনি মুগ্ধ হন। জানান, এতে তার মাথা যেন বন্ধ হয়ে যায়— একধরনের আরাম অনুভব করেন।
এখন তিনি নিয়মিতই লেগো কিনছেন। মাঝে মাঝে মাসে তার খরচ ১,০০০ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। তার সাজানো ১০০ টিরও বেশি লেগো সেট বাড়িতে শোভাবর্ধন করছে।
বয়স্কদের লেগো বাজার—নস্ট্যালজিয়া এক বড় চালিকা শক্তি
দ্য টয় বুক-এর সম্পাদক জেমস জাহ্ন জানান, বয়স্কদের লেগো ক্রেজের পেছনে নস্ট্যালজিয়াই প্রধান কারণ।
শিশুকালের উষ্ণ স্মৃতি জাগিয়ে তোলা খেলনা সবসময়ই জনপ্রিয়। লেগোও সেই ধারারই অংশ।
পুরনো ধরনের মডেল কিট—গাড়ি বা প্লেন—এখন কম জনপ্রিয়। সেই জায়গা দখল করছে লেগোর উন্নত, জটিল আর দৃষ্টিনন্দন সেটগুলো।
স্টার ওয়ার্স, হ্যারি পটার, মার্ভেল বা ডিসি–র মতো ফ্র্যাঞ্চাইজির লাইসেন্স পাওয়ার পর লেগোর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।
বর্তমানে ১৮-প্লাস বয়সীদের জন্য শো খানেকেরও বেশি লেগো সেট রয়েছে। নতুন এফ-ওয়ান সিরিজেও শিশু থেকে প্রবীণদের জন্য আলাদা আলাদা সেট বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
লেগো এখন বিনিয়োগও
অনেকেই লেগোর সিল করা বাক্স রেখে দেন ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে। কিছু লেগো সেটের মূল্য বৃদ্ধির হার শেয়ারবাজারকেও হার মানায়।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেগোর লক্ষ্য—মাইন্ডফুলনেস, বিশ্রাম ও সৃজনশীলতা
লেগোর প্রাপ্তবয়স্ক বিভাগ প্রধান জেনেভিভ ক্রুজ বলেন, বয়স্কদের জন্য লেগো মানে শুধু খেলনা নয়—এটি মানসিক প্রশান্তির একটি মাধ্যম।
বোটানিক্যাল সিরিজের ফুলগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়, কারণ এগুলো ঘর সাজানো, মানসিক শান্তি আর নিজেকে সময় দেওয়ার অনুভূতি জাগায়।
পপ কালচারভিত্তিক লেগো আইকন সেটও বয়স্কদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
লেগো মানসিক শান্তির ‘ব্রেইন ব্রেক’
ডেনহাম স্প্রিংসের বাসিন্দা সাহারা জানান, ব্যস্ত পেশাজীবী জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেতে লেগো তাকে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, “আমার মাথা সারাক্ষণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। লেগো আমাকে থামতে শেখায়।”
মারিও, প্যাক-ম্যান বা গেম বয় থিমের সেটগুলো তাকে শৈশবের দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
লেগো নিয়ে ভিডিও বানানো শুরু করার পর তিনি অনলাইনে বিশাল কমিউনিটি খুঁজে পেয়েছেন যারা লেগোকে নিয়ে একই আবেগ ভাগ করেন।
শৈশবের আনন্দে ফিরে যাওয়া — সাইমন হেমিংসের অভিজ্ঞতা
৪৭ বছর বয়সী সাইমন হেমিংস ছোটবেলা থেকে লেগো ভালোবাসতেন। কলেজে কিছুদিন বিরতি থাকলেও পরে আর্কিটেকচার সিরিজ দেখে তার পুরনো আগ্রহ ফিরে আসে।
তিনি বলেন, “এটা এক ধরনের শান্তি। শব্দহীন এক জগৎ।”
তার মতে, লেগোর স্পর্শ, ইটগুলোর ‘ক্লিক’ শব্দ—সবকিছুই মনকে প্রশান্ত করে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি সেটগুলো—যেমন বিটলস থিমের ইয়েলো সাবমেরিন—তার জেনারেশনের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
শখের গুরুত্ব—মানসিক সুস্থতার অংশ
সাইমন মনে করেন, আজকের সমাজে শখকে যথেষ্ট মূল্য দেওয়া হয় না। কিন্তু নিজের জন্য কিছু সময় বের করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
লেগো তাকে সেই সুযোগ দেয়—একটু সময়ের জন্য মনকে শান্ত করতে, স্মৃতির গন্ধ অনুভব করতে এবং সৃজনশীলতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে।
#লেগো #নস্ট্যালজিয়া #বিনোদন #যুক্তরাষ্ট্র #মানসিকস্বাস্থ্য #খেলনাবাজার #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















