জাপানে কর্মী সংকট দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের আকৃষ্ট করতে পোশাক-পরিচ্ছদের দীর্ঘদিনের কঠোর নিয়ম শিথিল করা শুরু করেছে। বিশেষ করে রিটেইল সেক্টর ও ছোট কোম্পানিগুলো কর্মীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
নতুন প্রজন্মের কর্মীদের দাবি
২২ বছর বয়সী হিনাকো মোরির অভিজ্ঞতা জানান দেয়, তরুণ কর্মীরা এখন চুলের রঙ বা ব্যক্তিগত স্টাইল নিয়ে কোনো আপস করতে চান না। টোকিওর ডন কুইহোটে নামের ডিসকাউন্ট রিটেইলার প্রতিষ্ঠানে তিনি পার্ট-টাইম চাকরি বেছে নিয়েছিলেন শুধু এই কারণে যে সেখানে চুলের রঙ নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
আগের চাকরিতে তাকে কালো বা গাঢ় বাদামি চুল রাখতে বাধ্য করা হতো। একবার চুল সোনালি করলে তাকে উইগ পরতে বলা হয়, যা তাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ফেলেছিল।
রিটেইল খাতে নিয়ম শিথিলের ধারা
ডন কুইহোটে প্রায় তিন বছর আগে থেকেই চুলের রঙ ও নেইল পলিশ সংক্রান্ত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাদের কর্মীদের প্রায় ২৫ শতাংশের চুলে এখন উজ্জ্বল রঙ দেখা যায়, এবং মোট ৫৫ শতাংশ কর্মীর চুল অ-কালো।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও নিয়ম শিথিল করছে। ফুজি ইয়াকুহিন এখন চুলের রঙ, নেইল আর্ট, ভারী মেকআপ ও আংটি—সবই অনুমোদন দিচ্ছে; আগে শুধুমাত্র বিবাহের আংটি পরা যেত। টোকিউ স্টোর সুপারমার্কেটও চুলের রঙ, স্টাইল, অ্যাকসেসরি, নেইল পলিশ ও পিয়ার্সিং—সব ক্ষেত্রে নিয়ম সহজ করেছে।
জাপানের কর্পোরেট সংস্কৃতিতে শিথিলতার বিস্তার
২০০৫ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘কুল বিজ’ উদ্যোগের মাধ্যমে জাপানে কর্পোরেট পোশাকে শিথিলতা শুরু হয়। স্যুট-টাইয়ের পরিবর্তে হালকা, আরামদায়ক পোশাক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
এরপর অনেক ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক থাকেনি। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সাদা দস্তানা পরা এখন ঐচ্ছিক। জাপান এয়ারলাইনস, টোকিও মেট্রো ও স্কাইমার্ক এয়ারলাইন সম্প্রতি কর্মীদের স্নিকার্স পরার অনুমতি দিয়েছে।
কর্মী সংকটের বাস্তব চাপ
জাপানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু অভিবাসনের হার কম। ১৯৯৫ সালের পর থেকে দেশটির কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, ফলে নতুন কর্মী নিয়োগ এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কর্মী সংকট তাদের ব্যবসায় গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কর্মী সংকট অনেক দেউলিয়াত্বের প্রধান কারণ ছিল। পাশাপাশি তরুণরা পার্ট-টাইম কাজে চাকরির নিয়ম-কানুন নিয়ে এখন আরও সচেতন।
যুবসমাজের প্রত্যাশা
একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে পার্ট-টাইম কাজে নিজের পছন্দমতো চেহারা বজায় রাখার অধিকার থাকা উচিত। একই জরিপে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, কঠোর পোশাকবিধির কারণে তারা চাকরির আবেদনই বাতিল করেছে।
সীমাবদ্ধতা এখনও রয়ে গেছে
যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়ম শিথিল করছে, তবুও জাপান সমাজের সাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতা এখনো পুরোপুরি বদলায়নি। কিছু কর্মস্থলে মুখে একাধিক পিয়ার্সিং বা ভারী গয়না গ্রহণযোগ্য নয়। উল্কি বা ট্যাটু থাকা কর্মীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ঢেকে রাখতে বলা হয়, কারণ সমাজে ট্যাটু নিয়ে এখনও নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।
বড় ও ঐতিহ্যবাহী কোম্পানিগুলোতে অলিখিত নিয়ম হিসেবে কর্মীরা যেন কোনো বিতর্ক সৃষ্টিকারী চেহারা না রাখে—এমন প্রত্যাশা বজায় রয়েছে।
জাপানে কর্মী সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের চাহিদা মেনে আরও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে পরিবর্তনটি দ্রুতগতিতে এগোলেও, জাপানের প্রচলিত কর্পোরেট সংস্কৃতিতে পুরোপুরি রূপান্তর আনতে এখনও সময় লাগবে।
# জাপান কর্মীসংকট #রিটেইল
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















