স্থানীয় ভাষা আর সংস্কৃতিতে টিউন করা নতুন মডেল
জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আলাদা করে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন নিয়ে যে আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছিল, টোকিওভিত্তিক স্টার্টআপ সাকানা এআই সেই শূন্যতাকেই ব্যবসায়িক সুযোগে পরিণত করার চেষ্টা করছে। গুগলের সাবেক গবেষক ডেভিড হা, লিওন জোনস ও রেন ইতো প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি প্রায় দুই বছরে এসে পেল নতুন করে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ডলার, বা আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ইয়েনের সিরিজ বি বিনিয়োগ। নতুন এ তহবিলের মাধ্যমে সাকানার মূল্য দাঁড়িয়েছে ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার—জাপানে এ ধরনের এআই কোম্পানির জন্য বিরল উচ্চ মূল্যায়ন।
সাকানা এআই শুরু থেকেই বলছে, ইংরেজি-কেন্দ্রিক বড় মডেল দিয়ে জাপানি বাস্তবতা পুরোপুরি ধরা যায় না। ভদ্রতার বিভিন্ন স্তর, জটিল কানজি, অফিসিয়াল নথির সূক্ষ্ম ভাষা—এসব জায়গায় ভুল হলে ব্যাংকিং, আইনি সেবা বা সরকারি দপ্তরে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই তারা তুলনামূলকভাবে ছোট, দক্ষ মডেল বানাতে চায়, যেগুলো স্থানীয় ডেটায় ট্রেন করা এবং কোম্পানির নিজস্ব সার্ভার বা দেশীয় ক্লাউডে চালানো সহজ। নতুন তহবিলের অর্থের বড় অংশ যাবে গবেষক নিয়োগ, কম্পিউটিং অবকাঠামো বাড়ানো এবং কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সলিউশন তৈরি করার কাজে।

ইতিমধ্যেই কয়েকটি ব্যাংক, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া হাউস সাকানার মডেল ব্যবহার করে নথি খসড়া, গ্রাহকসেবা চ্যাটবট ও ডেটা বিশ্লেষণের পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালাচ্ছে। কোম্পানির দাবি, ছোট ডেটাসেটেও তাদের মডেল ভালো পারফর্ম করে, ফলে মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীরাও ব্যয় সাশ্রয়ে এআই কাজে লাগাতে পারবে।
প্রতিযোগিতা ও নীতিনিয়মের ভেতর এগোনোর চ্যালেঞ্জ
এই সাফল্যের মাঝেও প্রতিযোগিতার ছবি কঠিনই রয়ে গেছে। বড় মার্কিন ও চীনা প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেদের চ্যাটবটের জাপানি সংস্করণ চালু করেছে; টেলিকম কোম্পানি ও চিপ নির্মাতারাও নিজস্ব মডেল নিয়ে কাজ করছে। সাকানা এআই কিছু টুল ওপেন সোর্স করবে, আবার সবচেয়ে সক্ষম মডেলগুলো থাকবে বাণিজ্যিক লাইসেন্সে—এমন দ্বৈত কৌশলে তারা আশপাশে একটি ডেভেলপার ইকোসিস্টেম গড়তে চায়, যেখানে নতুন স্টার্টআপগুলো স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন বা সৃজনশীল শিল্পের মতো নির্দিষ্ট খাতে মডেল ফাইন-টিউন করবে।
জাপান সরকার “বিশ্বস্ত এআই” ধারণা সামনে রেখে যে নিয়মকাঠামো গড়ছে, তাতে স্বচ্ছতা ও ডেটা সুরক্ষার উপর জোর বেশি। সাকানা ঘোষণা দিয়েছে, তারা মডেলের নিরাপত্তা মূল্যায়ন, প্রশিক্ষণ ডেটার উৎস এবং গার্ডরেল সম্পর্কিত নথি প্রকাশ করবে, যাতে নিয়ন্ত্রক ও ক্লায়েন্ট—দু’পক্ষই আশ্বস্ত থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ সফল হলে জাপান হয়তো বিশাল মডেল তৈরির প্রতিযোগিতায় না থাকলেও মধ্যম আকারের, বিশেষায়িত এআই মডেলের আঞ্চলিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

এখন কোম্পানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো দ্রুত সম্প্রসারণের ঝুঁকি সামলানো। দক্ষ এআই বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, দীর্ঘমেয়াদি চিপ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং পরীক্ষামূলক প্রজেক্টের বাইরে গিয়ে বাস্তব ব্যবসায়িক কাজের মধ্যে মডেল বসিয়ে দেওয়া—সবই সময়সাপেক্ষ কাজ। তবু নতুন তহবিল আর দেশজুড়ে ডিজিটাল রূপান্তরের চাপ সাকানার জন্য সুযোগও তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠাতাদের বিশ্বাস, জাপানের ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়া “লোকাল” এআই-ই তাদের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হয়ে উঠবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















