০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং জে কেলি: স্মৃতি, পরিবার ও শিল্পের মূল্য

 দুই চলচ্চিত্র, এক যৌথ অনুভূতি

নিউ ইয়র্কারের এই সমালোচনায় দুটি চলচ্চিত্র—জোয়াকিম ট্রিয়েরের সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং নোয়া বোমব্যাকের জে কেলি—কে পাশাপাশি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দু’টি ছবিই ব্যক্তিগত স্মৃতি, শিল্পীসত্তা, পারিবারিক টানাপোড়েন ও সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিয়ে নির্মিত।


সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু: বয়স, স্মৃতি ও ভাঙা সম্পর্ক

ছবির কেন্দ্রে আছেন নরওয়েজিয়ান পরিচালক গুস্তাভ বর্গ। বহু বছর পর তিনি দুই মেয়ে—নোরা ও অ্যাগনেসের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। মা মারা যাওয়ার পর হঠাৎ তিনি নোরাকে নিজের নতুন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
কিন্তু নোরা তাকে ঘৃণা করে, কারণ ছোটবেলায় গুস্তাভ তাদের ত্যাগ করেছিলেন। তার নতুন ছবির গল্পেও আছে নিজের জীবনের ছাপ—মায়ের আত্মহত্যা, পুরনো বাড়ি, স্মৃতি এবং শোক।


পারিবারিক বাড়ি: স্মৃতির পরিবেশ

গুস্তাভের পুরনো বাড়িটি শুধু একটি স্থান নয়—এটি ইতিহাস, স্মৃতি ও মানবিক টানাপোড়েনের প্রতীক। আলোয় ভরা এই বাড়ির ভেতরে জমে আছে পুরনো অন্ধকার। যুদ্ধকালীন স্মৃতি, পারিবারিক ট্র্যাজেডি—সব এখানে যেন ছড়ানো।
ট্রিয়ের বাড়িটিকে ছবির আবেগিক পরিবেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন, যদিও কখনও কখনও এটি পূর্ণাঙ্গ নাটকের বদলে একটি কাঠামোর মতো মনে হয়।

Film reviews: 'Jay Kelly' and 'Sentimental Value'

অভিনয়: ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক

নোরা চরিত্রে রেনাতে রেইনসভের অভিনয় ছবিতে প্রাণ এনে দিয়েছে। মঞ্চে ওঠার আগে তার ভয়, বাবার প্রতি ক্ষোভ ও শিল্পের সঙ্গে রক্তের টান—সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর এক দ্বন্দ্ব।
গুস্তাভ চরিত্রে স্টেলান স্কারসগার্ড কঠিন, রাগী এবং কোমল তিন দিকই সমানভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অ্যাগনেসের চরিত্রেও রয়েছে নীরব গভীরতা।
আর আমেরিকান অভিনেত্রী র‌্যাচেল (এল ফ্যানিং) ছবিতে নতুন ছন্দ যোগ করেছেন, তার সরাসরি কথা বলার ভঙ্গি ছবির চাপা আবহ ভেঙে নতুন আলোর জন্ম দেয়।


শিল্প বনাম জীবন

ছবিটি প্রশ্ন তোলে—শিল্প কি আমাদের ব্যথা উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পারে?
গুস্তাভ মনে করেন শিল্প তার পক্ষেই কথা বলবে। কিন্তু সমালোচকের মতে, ট্রিয়ের এই সত্যটি আবিষ্কার করেননি; বরং ধরে নিয়েছেন।
পরিবারের পুনর্মিলন ও শিল্পের নিরাময়ের শক্তি—সব কিছুই যেন খুব সহজে এসে যায়।


জে কেলি: তারকা জীবনের আড়ালের অপূর্ণতা

নোয়া বোমব্যাকের জে কেলি–র কেন্দ্রীয় চরিত্র এক বৃদ্ধ অভিনেতা—জে কেলি, যার ভূমিকায় জর্জ ক্লুনি। তার জীবনের স্মৃতিগুলো জড়িয়ে আছে করা অসংখ্য ছবির সঙ্গে।
কন্যা জেস ছোটবেলায় বাবাকে খুব কমই পেত, কারণ জে ছিলেন সবসময় শুটিংয়ে ব্যস্ত। এখন তিনি ছোট মেয়ে ডেইজির সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে চান এবং তার ইউরোপ ভ্রমণে হঠাৎ যোগ দেন।


স্মৃতি: ছোট ছোট দৃশ্যের মতো

জে তার অতীতকে ছোট ছোট সিনেমার মতো দেখেন।
পুরনো পরিচালককে সাহায্য না করার অপরাধবোধ, ক্যারিয়ার বদলে দেওয়া অডিশন—সবকিছুই যেন দূর থেকে দেখা স্মৃতি।
এই স্মৃতি-চিত্রগুলো দিয়ে বোমব্যাক দেখান—একজন তারকার সাফল্যের আড়ালে থাকে ভুলে যাওয়া সম্পর্ক ও লুকোনো আক্ষেপ।

The Bad Show-Biz Dads of “Sentimental Value” and “Jay Kelly” | The New Yorker

ইতালীয় ট্রেনে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য

ছবির অন্যতম দৃশ্যটি একটি ইতালীয় ট্রেনে, যেখানে মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে জে নানা যাত্রীর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন।
তার চারপাশে আছেন ম্যানেজার ও পাবলিসিস্ট—যারা তার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন বহু বছর সামলেছেন।


তারকা-মুখোশের আড়ালের শূন্যতা

ছবির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—জর্জ ক্লুনির তারকাস্বত্তা চরিত্রের ভঙ্গুরতাকে ঢেকে ফেলবে কিনা।
ক্লুনির স্বাভাবিক আকর্ষণ অনেক সময় চরিত্রের অভ্যন্তরীণ শূন্যতাকে পুরোপুরি ফুটতে বাধা দেয়।
অন্যদিকে অ্যাডাম স্যান্ডলার অভিনয়ে মানবিকতা, ক্লান্তি ও গভীর আবেগের দারুণ উপস্থিতি এনে দিয়েছেন।


সমাপনী কথা

সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং জে কেলি—দুই চলচ্চিত্রেই আছে শিল্পীসত্তা, পারিবারিক দূরত্ব, স্মৃতি ও অসম্পূর্ণ জীবনের গল্প।
কেউ অতীতকে সিনেমায় তুলে ধরে সমাধান খোঁজেন, কেউ তারকা জীবনের মুখোশ খুলে দেখেন।
উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়—অমীমাংসিত সম্পর্ক, অসমাপ্ত আবেগ এবং শিল্প ও জীবনের গভীর সংযোগ।


#film #review #cinema #hollywood #norway #family #drama

জনপ্রিয় সংবাদ

সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং জে কেলি: স্মৃতি, পরিবার ও শিল্পের মূল্য

০৬:০০:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

 দুই চলচ্চিত্র, এক যৌথ অনুভূতি

নিউ ইয়র্কারের এই সমালোচনায় দুটি চলচ্চিত্র—জোয়াকিম ট্রিয়েরের সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং নোয়া বোমব্যাকের জে কেলি—কে পাশাপাশি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দু’টি ছবিই ব্যক্তিগত স্মৃতি, শিল্পীসত্তা, পারিবারিক টানাপোড়েন ও সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিয়ে নির্মিত।


সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু: বয়স, স্মৃতি ও ভাঙা সম্পর্ক

ছবির কেন্দ্রে আছেন নরওয়েজিয়ান পরিচালক গুস্তাভ বর্গ। বহু বছর পর তিনি দুই মেয়ে—নোরা ও অ্যাগনেসের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। মা মারা যাওয়ার পর হঠাৎ তিনি নোরাকে নিজের নতুন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
কিন্তু নোরা তাকে ঘৃণা করে, কারণ ছোটবেলায় গুস্তাভ তাদের ত্যাগ করেছিলেন। তার নতুন ছবির গল্পেও আছে নিজের জীবনের ছাপ—মায়ের আত্মহত্যা, পুরনো বাড়ি, স্মৃতি এবং শোক।


পারিবারিক বাড়ি: স্মৃতির পরিবেশ

গুস্তাভের পুরনো বাড়িটি শুধু একটি স্থান নয়—এটি ইতিহাস, স্মৃতি ও মানবিক টানাপোড়েনের প্রতীক। আলোয় ভরা এই বাড়ির ভেতরে জমে আছে পুরনো অন্ধকার। যুদ্ধকালীন স্মৃতি, পারিবারিক ট্র্যাজেডি—সব এখানে যেন ছড়ানো।
ট্রিয়ের বাড়িটিকে ছবির আবেগিক পরিবেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন, যদিও কখনও কখনও এটি পূর্ণাঙ্গ নাটকের বদলে একটি কাঠামোর মতো মনে হয়।

Film reviews: 'Jay Kelly' and 'Sentimental Value'

অভিনয়: ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক

নোরা চরিত্রে রেনাতে রেইনসভের অভিনয় ছবিতে প্রাণ এনে দিয়েছে। মঞ্চে ওঠার আগে তার ভয়, বাবার প্রতি ক্ষোভ ও শিল্পের সঙ্গে রক্তের টান—সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর এক দ্বন্দ্ব।
গুস্তাভ চরিত্রে স্টেলান স্কারসগার্ড কঠিন, রাগী এবং কোমল তিন দিকই সমানভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অ্যাগনেসের চরিত্রেও রয়েছে নীরব গভীরতা।
আর আমেরিকান অভিনেত্রী র‌্যাচেল (এল ফ্যানিং) ছবিতে নতুন ছন্দ যোগ করেছেন, তার সরাসরি কথা বলার ভঙ্গি ছবির চাপা আবহ ভেঙে নতুন আলোর জন্ম দেয়।


শিল্প বনাম জীবন

ছবিটি প্রশ্ন তোলে—শিল্প কি আমাদের ব্যথা উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পারে?
গুস্তাভ মনে করেন শিল্প তার পক্ষেই কথা বলবে। কিন্তু সমালোচকের মতে, ট্রিয়ের এই সত্যটি আবিষ্কার করেননি; বরং ধরে নিয়েছেন।
পরিবারের পুনর্মিলন ও শিল্পের নিরাময়ের শক্তি—সব কিছুই যেন খুব সহজে এসে যায়।


জে কেলি: তারকা জীবনের আড়ালের অপূর্ণতা

নোয়া বোমব্যাকের জে কেলি–র কেন্দ্রীয় চরিত্র এক বৃদ্ধ অভিনেতা—জে কেলি, যার ভূমিকায় জর্জ ক্লুনি। তার জীবনের স্মৃতিগুলো জড়িয়ে আছে করা অসংখ্য ছবির সঙ্গে।
কন্যা জেস ছোটবেলায় বাবাকে খুব কমই পেত, কারণ জে ছিলেন সবসময় শুটিংয়ে ব্যস্ত। এখন তিনি ছোট মেয়ে ডেইজির সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে চান এবং তার ইউরোপ ভ্রমণে হঠাৎ যোগ দেন।


স্মৃতি: ছোট ছোট দৃশ্যের মতো

জে তার অতীতকে ছোট ছোট সিনেমার মতো দেখেন।
পুরনো পরিচালককে সাহায্য না করার অপরাধবোধ, ক্যারিয়ার বদলে দেওয়া অডিশন—সবকিছুই যেন দূর থেকে দেখা স্মৃতি।
এই স্মৃতি-চিত্রগুলো দিয়ে বোমব্যাক দেখান—একজন তারকার সাফল্যের আড়ালে থাকে ভুলে যাওয়া সম্পর্ক ও লুকোনো আক্ষেপ।

The Bad Show-Biz Dads of “Sentimental Value” and “Jay Kelly” | The New Yorker

ইতালীয় ট্রেনে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য

ছবির অন্যতম দৃশ্যটি একটি ইতালীয় ট্রেনে, যেখানে মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে জে নানা যাত্রীর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন।
তার চারপাশে আছেন ম্যানেজার ও পাবলিসিস্ট—যারা তার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন বহু বছর সামলেছেন।


তারকা-মুখোশের আড়ালের শূন্যতা

ছবির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—জর্জ ক্লুনির তারকাস্বত্তা চরিত্রের ভঙ্গুরতাকে ঢেকে ফেলবে কিনা।
ক্লুনির স্বাভাবিক আকর্ষণ অনেক সময় চরিত্রের অভ্যন্তরীণ শূন্যতাকে পুরোপুরি ফুটতে বাধা দেয়।
অন্যদিকে অ্যাডাম স্যান্ডলার অভিনয়ে মানবিকতা, ক্লান্তি ও গভীর আবেগের দারুণ উপস্থিতি এনে দিয়েছেন।


সমাপনী কথা

সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং জে কেলি—দুই চলচ্চিত্রেই আছে শিল্পীসত্তা, পারিবারিক দূরত্ব, স্মৃতি ও অসম্পূর্ণ জীবনের গল্প।
কেউ অতীতকে সিনেমায় তুলে ধরে সমাধান খোঁজেন, কেউ তারকা জীবনের মুখোশ খুলে দেখেন।
উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়—অমীমাংসিত সম্পর্ক, অসমাপ্ত আবেগ এবং শিল্প ও জীবনের গভীর সংযোগ।


#film #review #cinema #hollywood #norway #family #drama