ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) বিশেষ মহড়ায় দেখা গেছে—ড্রোন, ট্যাংক, বুলডোজার, বিমানসহ সমন্বিত আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে কীভাবে তারা হামাসের টানেল, লুকানো বিস্ফোরক এবং ভবনভিত্তিক প্রতিরক্ষা ভাঙার নতুন পদ্ধতি তৈরি করছে। প্রশিক্ষণ স্থাপনায় গড়ে তোলা “হামাস গ্রাম”–এ পরিচালিত এই মহড়া দেখিয়েছে যে ইসরায়েল এখন আরবান গেরিলা যুদ্ধের কৌশলকে নতুন ধাঁচে পুনর্গঠন করছে।
মহড়ার শুরু: সাত মিনিটের প্রচণ্ড আগুন
প্রায় সাত মিনিট ধরে তীব্র গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে এলাকা কেঁপে ওঠার পর আইডিএফ বাহিনী এগিয়ে যায় “হামাস গ্রাম” দখলের উদ্দেশ্যে। যদিও এটি ছিল প্রশিক্ষণ, পুরো ঘটনাটি বাস্তব যুদ্ধের মতোই তীব্র ও সমন্বিত।
উন্নত কৌশল: চার ধরনের ড্রোনের সমন্বিত ব্যবহার
যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ
একটি বড় ড্রোন পুরো গ্রাম ও আশপাশের এলাকা—অভিযানের আগে, চলাকালীন এবং পরে—পাখির চোখে পর্যবেক্ষণ করে।
গ্রেনেড নিক্ষেপ
একটি মাঝারি ড্রোন গ্রেনেড ফেলতে ব্যবহার করা হয়—হামাসের আইইডি নিষ্ক্রিয় করা বা যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে আঘাত হানতে।
‘কামিকাজে’ ড্রোন হামলা
আরেক মাঝারি ড্রোন সোজা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ঢুকে পড়ে, যেখানে শত্রুর উচ্চ অবস্থান আইডিএফ সদস্যদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছিল।

ক্ষুদ্র ড্রোন দিয়ে স্ক্যান
হাতের তালুর মতো ছোট ড্রোন বহুতল ভবনে ঢুকে প্রতিটি কক্ষ স্ক্যান করে শত্রুর অবস্থান এবং লুকানো ফাঁদ শনাক্ত করে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির পরিবর্তন বোঝার জন্য এটি বারবার পাঠানো হয়।
ট্যাংক–বুলডোজারের দ্বিমুখী ঘেরাও কৌশল
গ্রামের এক প্রান্তে ট্যাংক ও ডি৯ বুলডোজার এনে হামাস যোদ্ধাদের দৃষ্টি সেদিকে আটকে রাখা হয়, যাতে মূল আক্রমণের পথটি গোপন থাকে।
অন্য প্রান্ত দিয়ে আরেক দল ট্যাংক ও বুলডোজার নিয়ে মূল হামলা চালানো হয়।
ডি৯ বুলডোজারগুলো দ্রুত আইইডি পরিষ্কার করে, এরপর দুই জন করে পদাতিক বাহিনী প্রবেশ করে। পরে সৈন্যরা কৌশলগত পয়েন্টে একত্রিত হয়ে হামাস যোদ্ধাদের প্রায় পালানোর সুযোগহীন করে ফেলে।
আকাশ–স্থলের যৌথ অভিযান
এক পর্যায়ে একটি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান এক টন ওজনের বোমা ফেলে—যেখানে আইডিএফ বাহিনী মাত্র ১৩০ মিটার দূরে ছিল। এই নির্ভুল সমন্বয় আকাশ ও স্থল বাহিনীর শক্তি ও দক্ষতার প্রমাণ।
টানেল অনুসন্ধান: ভূগর্ভের যুদ্ধ
মহড়ার মূল লক্ষ্য ছিল দুটি টানেল শ্যাফট শনাক্ত করা—যেগুলো সরাসরি হামাসের ভূগর্ভস্থ সদরদপ্তরে পৌঁছে দেয়।
প্রতিটি টানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পৃথক পদাতিক দল। পরে ইয়াহালোম বিশেষ বাহিনী উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে টানেল অনুসন্ধান চালায়।
যুদ্ধের মাঝামাঝি এক বহুতল ভবনে হঠাৎ তৃতীয় টানেল শ্যাফটও পাওয়া যায়—যা গাজায় বাস্তব অভিযানে টানেল শনাক্তকরণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল রেখে তৈরি।
আইডিএফ সেনারা একই সঙ্গে ভূমির ওপর এবং নিচের যুদ্ধ সামলাতে থাকে—পরিস্থিতির পরিবর্তনে মুহূর্তে কৌশল বদলে নেয়।

আকস্মিক হামলা: দুই সৈন্য আহত
হঠাৎ দুই হামাস যোদ্ধা বেরিয়ে এসে অ্যান্টি–ট্যাংক অস্ত্র নিক্ষেপ করলে দুই আইডিএফ সদস্য আহত হয়—যা বাস্তব গেরিলা কৌশলেরই প্রতিফলন।
ড্রোনের উন্নত ব্যবহার, ট্যাংক–বুলডোজারের সমন্বিত কৌশল, টানেল অনুসন্ধান, এবং আকাশ–স্থলের যৌথ অভিযান—সব মিলিয়ে এই মহড়া দেখিয়ে দিয়েছে যে আইডিএফ ভবিষ্যতের আরবান গেরিলা যুদ্ধকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।
#ট্যাগ: ইসরায়েল আইডিএফ আরবান গেরিলা যুদ্ধ হামাস ড্রোন অভিযান টানেল যুদ্ধ সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















