০১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬০) পশ্চিমের দুর্বল ভারী বিরল ধাতু সরবরাহ: চীন-বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংকট ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ বঙ্গোপসাগরে ২২- ২৪ নভেম্বরে নিম্নচাপের ইঙ্গিত, বাংলাদেশ উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা বাড়ছে মানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউল শিল্পী আবুল সরকার গ্রেপ্তার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, কেন্দ্র নরসিংদী—আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ নাসার নতুন চিত্রে ধরা পড়ল বিস্ময়কর আন্তঃতারকীয় ধূমকেতু পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১৩০)  ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগে রেকর্ড সর্বনিম্ন দামে সোনির WH-1000XM5 হেডফোন পোশাকের ফ্যাশন: সেলিব্রিটিদের পরণে স্প্রিং-সামার ২০২৬ ডিজাইন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬০)

  • নাঈম হক
  • ১২:১৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • 5

বিশ্রাম ও রাতের ঘুম বাদ দিয়ে, ইভোকে নিজের দলবল নিয়ে বি-২৫ বোমারু বিমানগুলোকে বোমা বোঝাই করে রেডি রাখতে হতো।

অপরদিকে, ইউরোপের রণাঙ্গণে সেতু উড়িয়ে দিতে ঢালাউভাবে বোমাবর্ষণের ট্যাকটিক ব্যবহার হয়, যাকে “কার্পেট বা স্যাচরেশন বোমাবর্ষণ” বলা হয়। “ঢালাউ বোমাবর্ষণে” শ’য়ে শ’য়ে টনকে টন বোমাবর্ষণ করা হয়। কাজেই কিছু সংখ্যক বোমা গড়িয়ে পড়ে যাওয়ার পূর্বেই বিস্ফোরিত হওয়ার চান্স থাকে। কিন্তু বার্মা-ফ্রন্টে “ঢালাউ বোমাবর্ষণ” সম্ভব ছিল না, শ্রেফ বোমা সংকটের তথা যথেষ্ট পরিমাণে বোমার সাপ্লাই না থাকার কারণে “ব্যর্থ মিশনের” অবতারণা হয়। তদুপরি এই বার্মা ক্যাম্পেনে যেসব বোমারু বিমান ব্যবহার হয় সেগুলোর সাইজও ছিল বড়োসড়ো।

১৯৪৪ সালের নববর্ষের দিন, সেদিন দৈবক্রমে অপ্রত্যাশিত এক দৈবযোগ ঘটে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় “সেরেনডিপিটি”। ক্যাপ্টেন এরডিন বি-২৫ নিয়ে বেরোন বার্মার “মু নদী”র সেতু বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে, কুর্মিটোলা থেকে দূরত্ব প্রায় তিনশ’ সত্তর মাইল। ক্যাপ্টেন ঠিক করেন যে সোজা নিচে নেমে রেললাইন বরাবর উড়বেন, এরপরে “মু নদী” পার হয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য বরাবর উড়ন্ত অবস্থায় বোমাবর্ষণ করবেন। কিন্তু এই কসরত করার সময় একটি গাছের উপর হুমড়ি খাওয়া এড়াতে তাকে দ্রুত বেগে বি-২৫-কে সহসা উপরের দিকে ঠেলে দিতে হয়। অতঃপর তিনি বোমারু বিমানটিকে আবার বোমাবর্ষণ করেন। ফিরতি পথে পেছন দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন তো অবাক পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ নিচে নামিয়ে আনেন এবং সেতুর দৈর্ঘ্য বরাবর পাঁচশ’ পাউন্ড বিস্মিত, দেখেন যে “মু সেতু” বলে কোনো অস্তিত্ব আর নেই, সে ধ্বংস হয়ে ধ্বসে পড়েছে।

৪৯০তম বোম্বার্জমেন্টের বোমারু বিমানের বোমা খেয়ে বার্মায় একটি সেতু গুড়িয়ে ধ্বসে যাচ্ছে।

এভাবে, সফল বোমাবর্ষণের কায়দা রপ্ত হওয়ার পরে, ৪৯০তম বিএস বার্মায় একের পর এক সেতু ধ্বংস করতে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় শেষপর্যন্ত বিমান সৈনিকরা সাকুল্যে ১৯২টি সেতু ধ্বংস করেছিলেন। অতি শীঘ্রই তারা “বার্মা ব্রিজ বাস্টারস” হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং অসাধারণ কৃতিত্বের দৃষ্টান্ত হিসেবে তাদেরকে উদ্ধৃতি দেয়া হতো।

বার্মায়, বোমাবর্ষণের ব্যস্তসমস্ত মিশনগুলোতে, সব বিশ্রাম ও রাতের ঘুম বাদ দিয়ে, ইভোকে নিজের দলবল নিয়ে বি-২৫ বোমারু বিমানগুলোকে বোমা বোঝাই করে রেডি রাখতে হতো।

অবশ্য সব কয়টি মিশনই যে নিরাপদে কুর্মিটোলায় ফিরে আসত বা আসতে পারত, তা নয় কিন্তু- জাপানিদের গুলি খেয়ে ভূপাতিত বি-২৫-এর কমরেডরা ফিরে না আসলে সারা ঘাঁটিতে গভীর বিষণ্ণতা নেমে আসত। সাধারণত, সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে মিশন থেকে ফিরে না আসলে বি-২৫ নির্ঘাত নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছে নামক সহজ বিষণ্ণ উপসংহারে আসা যেত। (কারণ, বি-২৫-এর উড়ন্ত পরিধি এই সময়টুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ)।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬০)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬০)

১২:১৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্রাম ও রাতের ঘুম বাদ দিয়ে, ইভোকে নিজের দলবল নিয়ে বি-২৫ বোমারু বিমানগুলোকে বোমা বোঝাই করে রেডি রাখতে হতো।

অপরদিকে, ইউরোপের রণাঙ্গণে সেতু উড়িয়ে দিতে ঢালাউভাবে বোমাবর্ষণের ট্যাকটিক ব্যবহার হয়, যাকে “কার্পেট বা স্যাচরেশন বোমাবর্ষণ” বলা হয়। “ঢালাউ বোমাবর্ষণে” শ’য়ে শ’য়ে টনকে টন বোমাবর্ষণ করা হয়। কাজেই কিছু সংখ্যক বোমা গড়িয়ে পড়ে যাওয়ার পূর্বেই বিস্ফোরিত হওয়ার চান্স থাকে। কিন্তু বার্মা-ফ্রন্টে “ঢালাউ বোমাবর্ষণ” সম্ভব ছিল না, শ্রেফ বোমা সংকটের তথা যথেষ্ট পরিমাণে বোমার সাপ্লাই না থাকার কারণে “ব্যর্থ মিশনের” অবতারণা হয়। তদুপরি এই বার্মা ক্যাম্পেনে যেসব বোমারু বিমান ব্যবহার হয় সেগুলোর সাইজও ছিল বড়োসড়ো।

১৯৪৪ সালের নববর্ষের দিন, সেদিন দৈবক্রমে অপ্রত্যাশিত এক দৈবযোগ ঘটে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় “সেরেনডিপিটি”। ক্যাপ্টেন এরডিন বি-২৫ নিয়ে বেরোন বার্মার “মু নদী”র সেতু বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে, কুর্মিটোলা থেকে দূরত্ব প্রায় তিনশ’ সত্তর মাইল। ক্যাপ্টেন ঠিক করেন যে সোজা নিচে নেমে রেললাইন বরাবর উড়বেন, এরপরে “মু নদী” পার হয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য বরাবর উড়ন্ত অবস্থায় বোমাবর্ষণ করবেন। কিন্তু এই কসরত করার সময় একটি গাছের উপর হুমড়ি খাওয়া এড়াতে তাকে দ্রুত বেগে বি-২৫-কে সহসা উপরের দিকে ঠেলে দিতে হয়। অতঃপর তিনি বোমারু বিমানটিকে আবার বোমাবর্ষণ করেন। ফিরতি পথে পেছন দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন তো অবাক পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ নিচে নামিয়ে আনেন এবং সেতুর দৈর্ঘ্য বরাবর পাঁচশ’ পাউন্ড বিস্মিত, দেখেন যে “মু সেতু” বলে কোনো অস্তিত্ব আর নেই, সে ধ্বংস হয়ে ধ্বসে পড়েছে।

৪৯০তম বোম্বার্জমেন্টের বোমারু বিমানের বোমা খেয়ে বার্মায় একটি সেতু গুড়িয়ে ধ্বসে যাচ্ছে।

এভাবে, সফল বোমাবর্ষণের কায়দা রপ্ত হওয়ার পরে, ৪৯০তম বিএস বার্মায় একের পর এক সেতু ধ্বংস করতে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় শেষপর্যন্ত বিমান সৈনিকরা সাকুল্যে ১৯২টি সেতু ধ্বংস করেছিলেন। অতি শীঘ্রই তারা “বার্মা ব্রিজ বাস্টারস” হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং অসাধারণ কৃতিত্বের দৃষ্টান্ত হিসেবে তাদেরকে উদ্ধৃতি দেয়া হতো।

বার্মায়, বোমাবর্ষণের ব্যস্তসমস্ত মিশনগুলোতে, সব বিশ্রাম ও রাতের ঘুম বাদ দিয়ে, ইভোকে নিজের দলবল নিয়ে বি-২৫ বোমারু বিমানগুলোকে বোমা বোঝাই করে রেডি রাখতে হতো।

অবশ্য সব কয়টি মিশনই যে নিরাপদে কুর্মিটোলায় ফিরে আসত বা আসতে পারত, তা নয় কিন্তু- জাপানিদের গুলি খেয়ে ভূপাতিত বি-২৫-এর কমরেডরা ফিরে না আসলে সারা ঘাঁটিতে গভীর বিষণ্ণতা নেমে আসত। সাধারণত, সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে মিশন থেকে ফিরে না আসলে বি-২৫ নির্ঘাত নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছে নামক সহজ বিষণ্ণ উপসংহারে আসা যেত। (কারণ, বি-২৫-এর উড়ন্ত পরিধি এই সময়টুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ)।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)