জিআই-রা হকচকিয়ে যান বটে কিন্তু দ্রুত নিজেদেরকে সামলে নেন এবং ছোঁ মেরে বিয়ার ছিনিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।
ভালো আবহাওয়ার দিনগুলোতে ৪৯০তম বিএস-এর প্রধান বিনোদন ছিল- বেইজবল খেলা, আটটি টিম নিজেদের মধ্যে টুর্ণামেন্ট খেলত। টুর্ণামেন্টে যে টিম বিজয়ী হতো, উপহার হিসেবে সেই টিমকে দশ কেইস মার্কিন বিয়ার দেয়া হতো। একবার হলো কি- দশম এয়ারফোর্স হেডকোয়াটার্স থেকে ৪৯০তম বিএস একটি বার্তা পেল যে মার্কিন বিয়ার সমেত এইমাত্র একটি মার্কিন জাহাজ কোলকাতার নৌবন্দরে নোঙর করেছে। বার্তা পাওয়া মাত্রই বিয়ার আনার জন্য কুর্মিটোলার ঘাঁটি থেকে দুটো বি-২৫-কে পাঠানো হলো।

“China, Burma and India – WWII” টাইম লাউফ বুক।
বিয়ারের কেইসগুলোকে নিরাপদে বহনের জন্য এই বি-২৫ প্লেন দুটোতে বিশেষভাবে নির্মিত কাঠের র্যাক বসানো ছিল। সে যাহোক, পুরো ঘাঁটি এখন আকুল হয়ে বিয়ারের অপেক্ষায় রয়েছে! বি-২৫ যখন কুর্মিটোলায় ফিরে এলো- পাইলট ঠিক করলেন যে অবতরণের আগ মুহর্তে অপেক্ষারত জিআই-দেরকে আগাম সংকেত পাঠালে কেমন হয়! যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। অবতরণের আগমুহূর্তে পাইলট প্লেনকে সামান্য উপরের দিকে ঠেলে দেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পাইলটের এই কৌশলটি প্লেনের মাল রাখার দরজাটি দুম করে খুলে দেয়, হড় হড় করে বিয়ারের কেইসগুলো নিচে মাটির দিকে নেমে আসে।
পরিস্থিতির নাটকীয়তায় অপেক্ষমান জিআই-রা হকচকিয়ে যান বটে কিন্তু দ্রুত নিজেদেরকে সামলে নেন এবং ছোঁ মেরে বিয়ার ছিনিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। কমান্ডিং অফিসার যখন জোর আদেশ দেন যে- খবরদার, কোনোক্রমেই খোলা বিয়ার খেতে পারবে না কিন্তু, জিআই-রা সমস্বরে বলে যে “স্যর, এগুলো যখন আমরা খুলেছি তো খেতে তো অসুবিধে নেই”। যে পাইলট এই ব্যর্থ স্টান্টটি করেছিলেন তাকে সবাই “ম্যাড বিয়ার বোম্বার অব কুর্মিটোলা” নামে ডাকত।
প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৯০তম বিএস-এর কাজ ছিল বার্মায় জাপানি টার্গেট হিসেবে রেললাইন, সেনা ছাউনি, সাপ্লাই ডিপো ইত্যাদিতে বোমাবর্ষণ করা। তাই বার্মায় জাপানি সাপ্লাই লাইন ভেঙে দিতে সেতুগুলোর উপর বোমাবর্ষণ শুরু হয়। প্রথমদিকে, সেতু উড়িয়ে দেয়ার কাজ খুব একটা সহজ ছিল না। বর্ষিত বোমা প্রায়শই বিস্ফোরণের পূর্বেই গড়িয়ে সেতু থেকে নিচে পড়ে যেত। ফলে পাইলট ও বোমাবর্ষণের সঙ্গে জড়িত বিমান সৈনিকরা মানসিকভাবে মর্মপীড়া ও আশাভঙ্গের শিকার হন। তাদের কাছে “সেতু” শব্দটি “ব্যর্থ মিশন”-এর প্রতিশব্দে পরিণত হয়।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৮)
নাঈম হক 


















