১০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের কৃষিপণ্য শুল্ক ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে ভারতের রপ্তানি ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৮৮ রোগী

সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার

জামুনা নদীর ভাঙন–বন্যায় বদলে যাওয়া চরের মানুষের জন্য সুরক্ষিত প্রসব ও প্রাথমিক চিকিৎসা ছিল দীর্ঘদিন ধরেই নাগালের বাইরে। এবার ফিলিপস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ব্র্যাক তাদের ‘চার হেলথ ইনিশিয়েটিভ’ আরও সম্প্রসারণ করেছে। সিরাজগঞ্জের ঘোরজান ইউনিয়নে চালু হলো প্রকল্পটির দ্বিতীয় চার হেলথ সেন্টার। এর আগে কুড়িগ্রামের চার নারায়ণপুরে প্রথম কেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য ফল দেখায়।


কুড়িগ্রামের মডেল কেন সফল হলো

প্রথম ছয় মাসেই কুড়িগ্রামের কেন্দ্রটি প্রমাণ করে এই মডেল কার্যকরভাবে কাজ করে—

  • প্রশিক্ষিত ধাত্রীরা ২০টি স্বাভাবিক প্রসব সফলভাবে পরিচালনা করেন।
  • প্রায় ৫০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।
  • ৪০০–র বেশি নারী প্রথমবারের মতো আল্ট্রাসনোগ্রাম করান।
  • বহু ঝুঁকিপূর্ণ মা ও শিশুকে সময়মতো শনাক্ত করে জেলা হাসপাতালে রেফার করা যায়।

এই সফলতাই প্রকল্পটিকে সিরাজগঞ্জে সম্প্রসারণের পথ তৈরি করে।


চরে স্বাস্থ্যসেবা—সবচেয়ে কঠিন ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের চর অঞ্চলগুলো প্রতি বর্ষায় ভেঙে–গড়ে ওঠে।

  • রাতারাতি রাস্তা ভেসে যায়
  • এক মৌসুমে শুকনো জমি পরের মৌসুমে পানির নিচে
  • গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে যাওয়া প্রায় অসম্ভব

এ কারণে ঘোরজানের মতো অঞ্চলে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। বেশিরভাগ প্রসব হয় বাড়িতেই, এবং বহু মৃত্যু অগোচর থাকে।


নতুন চার হেলথ সেন্টারে কী সুবিধা মিলবে

নতুন কেন্দ্রটি সার্বক্ষণিক (২৪ ঘণ্টা) চালু থাকবে এবং প্রদান করবে—

  • সুরক্ষিত প্রসবসেবা
  • গর্ভকালীন যত্ন
  • আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা
  • টিকাদান
  • টেলিমেডিসিন
  • জটিলতা শনাক্ত করে দ্রুত রেফারেলের ব্যবস্থা

চরের ঘরে ঘরে গিয়ে কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কাররা মায়েদের সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। মূল ভূখণ্ডের হাসপাতালের সঙ্গে শক্তিশালী রেফারেল নেটওয়ার্ক তৈরি হওয়ায় প্রাণঘাতী বিলম্ব কমবে।

ফিলিপস ফাউন্ডেশনের বক্তব্য

ফিলিপস ফাউন্ডেশনের প্রধান এদিন সারুউখ বলেন—
“বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্লভ ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্যসমতা প্রতিষ্ঠার পরীক্ষাগার হয়ে উঠছে চরের এই উদ্যোগ। স্থানীয় জ্ঞান ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে মানসম্মত সেবা এমন পরিবেশেও সম্ভব—এটাই প্রমাণ করছে ব্র্যাক ও ফিলিপস ফাউন্ডেশনের অংশীদারিত্ব।”


ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি

ব্র্যাকের হেলথ সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ইনোভেশনের প্রধান ড. ইমরান আহমেদ চৌধুরী বলেন—
“শেষ প্রান্তের জনগোষ্ঠীতে বিনিয়োগ পৌঁছাতে না পারলে স্বাস্থ্য–অসমতা দূর হবে না। কুড়িগ্রামের অভিজ্ঞতা দেখায়—সঠিক নকশা থাকলে ভৌগোলিক বাধাও অতিক্রমযোগ্য। সিরাজগঞ্জের কেন্দ্র সেই লক্ষ্যেই আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।”


উদ্বোধনে সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল আমিন জানান, ওই এলাকায় আগে কোনও প্রসবসেবা ছিল না। তিনি ব্র্যাকের সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমন্বয় আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


বিস্তৃত লক্ষ্য: দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় স্বাস্থ্যসমতা

ব্র্যাকের ‘চার হেলথ ইনিশিয়েটিভ’ হলো CHARMS প্রকল্পের অংশ।

  • লক্ষ্য: কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জের অভিজ্ঞতা নীতিমালায় যুক্ত করা
  • পরবর্তী বিস্তার: হাওর অঞ্চল, উপকূল, অন্যান্য দুর্গম এলাকা

বাংলাদেশের হাওর–উপকূলেও বছরে পর বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চরের এই মডেল সফল প্রমাণিত হলে দেশের আরও দূর–দূরান্তের মানুষের কাছে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর পথ খুলবে।

দেশের সবচেয়ে অবহেলিত ও দুর্গম জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে সিরাজগঞ্জের নতুন চার হেলথ সেন্টার। এই মডেল ভবিষ্যতে কঠিন ভৌগোলিক পরিবেশেও স্বাস্থ্য–সমতা প্রতিষ্ঠার একটি টেকসই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।


#tag: ব্র্যাক | চার_হেলথ | সিরাজগঞ্জ | স্বাস্থ্যসেবা | সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি

সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার

০৮:৫৭:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

জামুনা নদীর ভাঙন–বন্যায় বদলে যাওয়া চরের মানুষের জন্য সুরক্ষিত প্রসব ও প্রাথমিক চিকিৎসা ছিল দীর্ঘদিন ধরেই নাগালের বাইরে। এবার ফিলিপস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ব্র্যাক তাদের ‘চার হেলথ ইনিশিয়েটিভ’ আরও সম্প্রসারণ করেছে। সিরাজগঞ্জের ঘোরজান ইউনিয়নে চালু হলো প্রকল্পটির দ্বিতীয় চার হেলথ সেন্টার। এর আগে কুড়িগ্রামের চার নারায়ণপুরে প্রথম কেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য ফল দেখায়।


কুড়িগ্রামের মডেল কেন সফল হলো

প্রথম ছয় মাসেই কুড়িগ্রামের কেন্দ্রটি প্রমাণ করে এই মডেল কার্যকরভাবে কাজ করে—

  • প্রশিক্ষিত ধাত্রীরা ২০টি স্বাভাবিক প্রসব সফলভাবে পরিচালনা করেন।
  • প্রায় ৫০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।
  • ৪০০–র বেশি নারী প্রথমবারের মতো আল্ট্রাসনোগ্রাম করান।
  • বহু ঝুঁকিপূর্ণ মা ও শিশুকে সময়মতো শনাক্ত করে জেলা হাসপাতালে রেফার করা যায়।

এই সফলতাই প্রকল্পটিকে সিরাজগঞ্জে সম্প্রসারণের পথ তৈরি করে।


চরে স্বাস্থ্যসেবা—সবচেয়ে কঠিন ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের চর অঞ্চলগুলো প্রতি বর্ষায় ভেঙে–গড়ে ওঠে।

  • রাতারাতি রাস্তা ভেসে যায়
  • এক মৌসুমে শুকনো জমি পরের মৌসুমে পানির নিচে
  • গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে যাওয়া প্রায় অসম্ভব

এ কারণে ঘোরজানের মতো অঞ্চলে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। বেশিরভাগ প্রসব হয় বাড়িতেই, এবং বহু মৃত্যু অগোচর থাকে।


নতুন চার হেলথ সেন্টারে কী সুবিধা মিলবে

নতুন কেন্দ্রটি সার্বক্ষণিক (২৪ ঘণ্টা) চালু থাকবে এবং প্রদান করবে—

  • সুরক্ষিত প্রসবসেবা
  • গর্ভকালীন যত্ন
  • আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা
  • টিকাদান
  • টেলিমেডিসিন
  • জটিলতা শনাক্ত করে দ্রুত রেফারেলের ব্যবস্থা

চরের ঘরে ঘরে গিয়ে কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কাররা মায়েদের সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। মূল ভূখণ্ডের হাসপাতালের সঙ্গে শক্তিশালী রেফারেল নেটওয়ার্ক তৈরি হওয়ায় প্রাণঘাতী বিলম্ব কমবে।

ফিলিপস ফাউন্ডেশনের বক্তব্য

ফিলিপস ফাউন্ডেশনের প্রধান এদিন সারুউখ বলেন—
“বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্লভ ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্যসমতা প্রতিষ্ঠার পরীক্ষাগার হয়ে উঠছে চরের এই উদ্যোগ। স্থানীয় জ্ঞান ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে মানসম্মত সেবা এমন পরিবেশেও সম্ভব—এটাই প্রমাণ করছে ব্র্যাক ও ফিলিপস ফাউন্ডেশনের অংশীদারিত্ব।”


ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি

ব্র্যাকের হেলথ সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ইনোভেশনের প্রধান ড. ইমরান আহমেদ চৌধুরী বলেন—
“শেষ প্রান্তের জনগোষ্ঠীতে বিনিয়োগ পৌঁছাতে না পারলে স্বাস্থ্য–অসমতা দূর হবে না। কুড়িগ্রামের অভিজ্ঞতা দেখায়—সঠিক নকশা থাকলে ভৌগোলিক বাধাও অতিক্রমযোগ্য। সিরাজগঞ্জের কেন্দ্র সেই লক্ষ্যেই আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।”


উদ্বোধনে সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল আমিন জানান, ওই এলাকায় আগে কোনও প্রসবসেবা ছিল না। তিনি ব্র্যাকের সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমন্বয় আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


বিস্তৃত লক্ষ্য: দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় স্বাস্থ্যসমতা

ব্র্যাকের ‘চার হেলথ ইনিশিয়েটিভ’ হলো CHARMS প্রকল্পের অংশ।

  • লক্ষ্য: কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জের অভিজ্ঞতা নীতিমালায় যুক্ত করা
  • পরবর্তী বিস্তার: হাওর অঞ্চল, উপকূল, অন্যান্য দুর্গম এলাকা

বাংলাদেশের হাওর–উপকূলেও বছরে পর বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চরের এই মডেল সফল প্রমাণিত হলে দেশের আরও দূর–দূরান্তের মানুষের কাছে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর পথ খুলবে।

দেশের সবচেয়ে অবহেলিত ও দুর্গম জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে সিরাজগঞ্জের নতুন চার হেলথ সেন্টার। এই মডেল ভবিষ্যতে কঠিন ভৌগোলিক পরিবেশেও স্বাস্থ্য–সমতা প্রতিষ্ঠার একটি টেকসই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।


#tag: ব্র্যাক | চার_হেলথ | সিরাজগঞ্জ | স্বাস্থ্যসেবা | সারাক্ষণ_রিপোর্ট