প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমায় বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় না ঘটলেও, দেশটির প্রতি আস্থা কমছে দ্রুত—আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও ক্ষয় সীমিত
ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা সংকোচনের ঘোষণা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সরাসরি আর্থিক ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
কারণ সহায়তার বড় অংশ যায় তিনটি চুক্তিভুক্ত দেশে—
- মাইক্রোনেশিয়া
- পালাউ
- মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ
এই সহায়তা ‘স্বাধীনতা চুক্তি’র আওতায়, যা উন্নয়নের বদলে সামরিক ও কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় অপরিবর্তিত রেখেছে।
এই অংশ বাদ দিলে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহায়তার মাত্র ১.৪ শতাংশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র—যেখানে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান ও নিউজিল্যান্ড অনেক বড় আকারে অর্থ দেয়। ফলে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা চাপের মুখে পড়লেও আফ্রিকার মতো ভয়াবহ ঘাটতি তৈরি হচ্ছে না।
আগ্রাসী ক্ষতি নয়—সবচেয়ে বড় ক্ষতি আস্থার
অর্থ কমে যাওয়ার চাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিশ্বাসের জায়গায়।
বহু বছর ধরে ‘ইন্দো-প্রশান্ত কৌশল’ ও আঞ্চলিক উপস্থিতির কথা বললেও হঠাৎ সহায়তা কমানো যুক্তরাষ্ট্রকে অনির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে তুলে ধরছে।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—
- এইচআইভি প্রতিরোধ উদ্যোগ
- স্বাধীন গণমাধ্যম সহায়তা
এগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নরম শক্তির প্রতীক। হঠাৎ মিলিয়ে যাওয়া অংশীদার দেশগুলোকে হতাশ করছে।
জাতিসংঘ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটা
জাতিসংঘ এ অঞ্চলে মোট সহায়তার হার কম হলেও তাদের মানবিক ও স্বাস্থ্য প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র অর্থ কমানোয়—
- ভ্যাকসিন বিতরণ
- এইচআইভি চিকিৎসা
- খাদ্য সহায়তা
ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
চীনের কৌশল—‘স্থিতিশীল সহযোগী’ ভাবমূর্তি নির্মাণ
চীন সরাসরি সহায়তার পরিমাণ হঠাৎ বাড়াচ্ছে না, কিন্তু ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে—
- মানবিক উদ্যোগ
- শিক্ষা
- মিডিয়া
- ডিজিটাল অবকাঠামো
চীন নিজেকে দেখাচ্ছে স্থিতিশীল ও হস্তক্ষেপমুক্ত অংশীদার হিসেবে। আর যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো হচ্ছে অনির্ভরযোগ্য বলে।
‘বর্ণনার লড়াই’-এ এখানেই চীন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দাতা অস্ট্রেলিয়া এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করে চীনের প্রভাব প্রতিহত করত।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে যাওয়ায়—
- অস্ট্রেলিয়া একা হয়ে পড়ছে
- চীনের প্রভাব বাড়ছে দ্রুত
ভানুয়াতু ও পাপুয়া নিউগিনির সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করতে দেরি বা ব্যর্থতা এ জটিলতা আরও স্পষ্ট করেছে।
সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি খুব বড় নয়। তবে সবচেয়ে জরুরি বিষয়— আস্থা ক্ষয়ে যাওয়া।
এই অঞ্চলে সহায়তা মানেই প্রতিশ্রুতি।
যুক্তরাষ্ট্র যখন পিছু হটছে, বার্তাটি স্পষ্ট—
তারা ধারাবাহিক অংশীদার হিসেবে নির্ভরযোগ্য নয়।
অর্থের ঘাটতি পূরণ করা যায়,
হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে কঠিন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















