মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্যের ওপর আরোপিত প্রতিদানমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে চা, কফি ও মসলাসহ ভারতের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্যের রপ্তানি ‘শূন্য’ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে। ভারত আশা করছে, এই সিদ্ধান্ত কৃষিখাতে স্বস্তি আনার পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
কোন কোন পণ্য শুল্কমুক্ত হলো
ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে চা, কফি ও মসলার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উষ্ণমণ্ডলীয় ফল ও ফলের রস, কোকো, কলা, কমলা, টমেটো, গরুর মাংস এবং কিছু সারজাত পণ্য।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, সিদ্ধান্তটি সব বাণিজ্যিক অংশীদারের জন্য প্রযোজ্য হলেও ভারতের জন্য এটি “সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র” তৈরি করেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “ভারত এসব পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ছিল—এখন তা সম্পূর্ণ শূন্য।”
ভারতের কৃষির জন্য এই সিদ্ধান্তের অর্থ
চিংড়ি বাদে ভারতের কৃষিপণ্যের মোট রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। নতুন শুল্ক ছাড়ের ফলে ভারতীয় কৃষক ও রপ্তানিকারকেরা উপকৃত হবেন বলে মনে করছে সরকার।
তবে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, শুল্ক ছাড় ভারতের মসলা ও কিছু বিশেষ উদ্যানজাত পণ্যে প্রতিযোগিতা কিছুটা বাড়াতে পারে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য লাভ পেতে চাইলে ভারতকে উৎপাদন ও রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। কারণ টমেটো, সাইট্রাস, তরমুজ, কলা এবং বেশিরভাগ তাজা ফল ও ফলের রসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের উপস্থিতি বর্তমানে প্রায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি আগের মাসের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট রপ্তানি ২৮.৪ শতাংশ কমে যাওয়ায় দেশটি প্রতি মাসে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি মূল্য হারিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) আলোচনা
ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের পর ভারত–মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দুই দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নেয়।
তবে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত ছিল—যা অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। রবিবার ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করলে “কঠোর শাস্তি” দেওয়া হবে। রিপাবলিকানদের নতুন প্রস্তাবিত আইনে রাশিয়া থেকে তেল–গ্যাস কেনা দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথাও রয়েছে।
ভারত–মার্কিন এলপিজি চুক্তির নতুন অগ্রগতি
ভারতের তেলমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি করতে এক বছরের চুক্তি করেছে—যা ভারতের মোট বার্ষিক আমদানির প্রায় ১০ শতাংশ। তিনি লেখেন, “বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল এলপিজি বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত হলো—এ এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ!”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, এটি দীর্ঘদিনের আলোচনার ফল এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে সুষম রাখার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।
বাণিজ্যচুক্তির (BTA) সর্বশেষ অগ্রগতি
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক শুল্ক কমানোর একটি প্যাকেজ নিয়ে এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ করছে। যদিও নির্দিষ্ট সময়সীমা এখনও ঘোষণা করা হয়নি, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রথম ধাপেই পারস্পরিক শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান করা হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















