আমেরিকার জনপ্রিয় চিকেন চেইন রেইজিং কেইনস তাদের বিখ্যাত ডিপিং সসের রেসিপি রক্ষায় এমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা শুনলে অনেকেই বিস্মিত হন। কোম্পানির মতে, এই সসই তাদের সাফল্যের প্রধান কারণ।
গোপন রেসিপির একমাত্র কপি
প্রায় ৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠাতা হাতে লিখে যে রেসিপি তৈরি করেছিলেন, সেটিই আজও সসের একমাত্র শারীরিক কপি। এটি একটি অজ্ঞাত স্থানে সেফের মধ্যে তালাবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষণ করা আছে। খুব কম সংখ্যক মানুষ এই কপি কখনও দেখেছেন। সহ–সিইও এ জে কুমারান জানান, রেসিপিটি অত্যন্ত যত্ন ও গোপনীয়তার সাথে রাখা হয়।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রেইজিং কেইনস রেসিপি রক্ষায় কঠোর গোপনীয়তা চুক্তি কার্যকর করে। উপকরণগুলো নামবিহীন ব্যাগে সরবরাহ করা হয় এবং রেসিপির একমাত্র কপি লুকিয়ে রাখা থাকে সুরক্ষিত সেফে।
কোম্পানির উত্থান
১৯৯৬ সালে টড গ্রেভস ও ক্রেইগ সিলভি কলেজের একটি প্রকল্প থেকে রেইজিং কেইনসের ধারণা দেন। আজ এটি প্রায় হাজার শাখার একটি বড় রেস্তোরাঁ চেইন। মাত্র পাঁচ আইটেমের ছোট কিন্তু জনপ্রিয় মেনু, পোস্ট মালোন ও লিভি ডানের প্রচারণা এবং উজ্জ্বল দোকানের পরিবেশ—সব মিলিয়ে ব্র্যান্ডটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
সসের রহস্যই বড় বাজার কৌশল
কেএফসি যেমন তাদের “১১ হার্বস অ্যান্ড স্পাইসেস”-এর রহস্য দিয়ে পরিচিত, ঠিক তেমনই রেইজিং কেইনসের অজানা সস রেসিপি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। অনেকে বলেন, এটি থাউজ্যান্ড আইল্যান্ড ড্রেসিংয়ের মতো; তবুও গ্রাহকদের আগ্রহ কমে না।
সস কীভাবে বানানো হয়
প্রতিদিন দোকানেই সস তৈরি হয়। কেবল ম্যানেজাররাই এটি তৈরি করতে পারেন এবং তাদের গোপনীয়তা চুক্তি সই করতে হয়। বিশেষ বিষয় হলো—তারা নিজেরাও পুরো রেসিপি জানেন না। উপকরণগুলো অচিহ্নিত প্যাকেটে আসে, আর মসলা মিশ্রণ পূর্বে থেকে প্রস্তুত রাখা হয়। বড় বালতিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিন দিয়ে সস মেশানো হয়।
একজন সাবেক ম্যানেজার কনর শিনস্কি বলেন, সস বানানোর সময় এত বেশি গোলমরিচ ব্যবহার হয় যে আশপাশে থাকা মানুষ হাঁচি দিতে থাকে। তিনি স্বীকার করেন, সসে আর কী থাকে সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই।
কেন এত কঠোর গোপনীয়তা
গত বছর রেইজিং কেইনসের আয় ছিল ৫.১ বিলিয়ন ডলার। অনেকের মতে, এই সস ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ চিকেন রেস্তোরাঁর মতো হয়ে যেত। প্রতি বছর প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ছোট কাপে সস পরিবেশন করা হয়। অনেক গ্রাহক কোলসলোর বদলে অতিরিক্ত সস চান।
অতিরিক্ত সসের জনপ্রিয়তা
কেউ কেউ বড় পানীয়ের কাপ ভরে ৮ ডলার দিয়ে সস কিনে নেন। গেম-ডের টেইলগেটারদের কাছ থেকে শুরু হওয়া এই ট্রেন্ড পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। কেউ একবারে পুরো কাপ খেয়ে ফেলে, কেউ পুরো বুরিটো এতে ডুবিয়ে খায়।
আলাবামার ২৪ বছর বয়সী লোলো ল্যাম জানান, তিনি বহুবার ২২ আউন্স সস নিয়েছেন। খাবারের জন্য এক-চতুর্থাংশ ব্যবহার করেন, বাকিটা বাড়িতে রেখে অন্য খাবারের সঙ্গে শেষ করেন। তার মতে, এই সস যেকোনো খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়।
স্বাদের আলাদা বৈশিষ্ট্য
কিছু সমালোচনা থাকলেও ভক্তরা বলেন, কেইনস সসের স্বাদ অন্য সসের তুলনায় ঝাঁঝালো ও গোলমরিচের স্বাদে অনন্য। কোম্পানির দাবি, তাদের কাস্টম মসলার মিশ্রণ হুবহু নকল করা কঠিন।
কপি করার চেষ্টাবাজ
ইউটিউবার, শেফ, ইনফ্লুয়েন্সার—অনেকে দাবি করেন তারা নকল রেসিপি তৈরি করেছেন। কেউ বলেন, ওয়ালমার্টের চিকেন ফিঙ্গার ডিপিং সস বেশ মিল আছে। কর্মীদের কাছেও অনেক গ্রাহক রেসিপি জানতে চান। সাবেক ম্যানেজার শিনস্কি জানান, কেউ অনুমান করলে তিনি মজা করে ভুলটাই নিশ্চিত করে দিতেন—কারণ মানুষ সস খেতেই থাকবে, তারা সত্য জানুক আর না জানুক।
রেইজিং কেইনস যত বাড়ছে, ততই তাদের সসকে ঘিরে রহস্যও বাড়ছে। অনেকের কাছে এই সসই প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচয়—এবং সেই রহস্যই তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পদ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















