হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজকে স্বাগত জানিয়ে খাশোগি হত্যার প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে
ট্রাম্পের দাবি ও সিআইএ–এর মূল্যায়ন
২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুনভাবে বিতর্ক ছড়াল যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই ঘটনার ব্যাপারে ‘কিছুই জানতেন না’।
যদিও ঘটনার সময় সিআইএ স্পষ্টভাবে মূল্যায়ন করেছিল—হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনায় যুবরাজ সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
হোয়াইট হাউসে এক প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন,
“আপনি এমন একজনকে উল্লেখ করছেন যিনি খুব বিতর্কিত ছিলেন। অনেকেই তাকে পছন্দ করতেন না। আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, অনেক কিছুই ঘটে। তবে তিনি (যুবরাজ) এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।”
প্রথমবারের মতো হত্যাকাণ্ডের পর ওভাল অফিসে ফিরে আসা যুবরাজ বলেন,
“কোনো মানুষ অর্থহীনভাবে বা বেআইনিভাবে প্রাণ হারালে তা খুবই কষ্টের। এটি বড় একটি ভুল ছিল।”
তিনি দাবি করেন, ভবিষ্যতে যাতে এমনটি না ঘটে—তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের দেশ তদন্ত সম্পন্ন করেছে।
খাশোগির পটভূমি ও হত্যার প্রভাব
জামাল খাশোগি ছিলেন সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী ও মার্কিন আবাসিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি রাজপরিবারের দমননীতির সমালোচনা করে আসছিলেন।
২০১৮ সালে তুরস্কের একটি সৌদি কনস্যুলেটে তার নির্মম হত্যাকাণ্ড ওয়াশিংটনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।

ট্রাম্প পরে যুবরাজকে “বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত নেতা” বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন—যুবরাজ মানবাধিকার ইস্যুতে “অসাধারণ কাজ” করেছেন।
সৌদি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি
মোহাম্মদ বিন সালমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দেশ ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তার ভাষায়,
“সুযোগগুলো আরও বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে।”
সিআইএ–র মূল্যায়ন ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
২০১৮ সালের সিআইএ–র মূল্যায়নে বলা হয়—হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনায় যুবরাজ সরাসরি ভূমিকা রেখেছিলেন।
ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন বলেন, “যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।”
ট্রাম্পের পূর্ববর্তী বক্তব্যের প্রসঙ্গ
আগেও ট্রাম্প মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়ন অস্বীকার করেছিলেন।
হেলসিঙ্কিতে ২০১৮ সালের এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেননি—যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো স্পষ্টভাবে বলেছিল, রাশিয়া নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।
হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের সাউথ পোর্টিকোতে যুবরাজকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান ট্রাম্প।
ঘোড়সওয়ার মার্কিন সেনারা দুই দেশের পতাকা বহন করে দাঁড়িয়েছিলেন। ছয়টি যুদ্ধবিমান—তিনটি এফ–৩৫ ও তিনটি এফ–১৫—আকাশে উড়ে অভিবাদন জানায়। এরপর তারা ওভাল অফিসে বৈঠকে বসেন।
সংবেদনশীল প্রশ্নে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ওভাল অফিসে এক প্রতিবেদক জেফরি এপস্টেইন–সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প তা উপেক্ষা করেন এবং বলেন—
“এবিসির লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। তাদের খবর ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর।”
ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ব্রেন্ডান কারকে বিষয়টি দেখার আহ্বান জানান তিনি।
একইদিন কংগ্রেস ফাইলগুলো প্রকাশের পক্ষে বিপুল ভোট দেয়।
সৌদি আরবের সঙ্গে ট্রাম্প পরিবার ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন
ট্রাম্প বলেন, তার পরিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করে এবং সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক “খুবই সীমিত”।
বৈঠকে সম্ভাব্য চুক্তি: এআই, পারমাণবিক শক্তি, অস্ত্র
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে উভয়পক্ষ কয়েক বিলিয়ন ডলারের মার্কিন এআই অবকাঠামো বিনিয়োগ, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতা এবং মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সৌদি আরবের জন্য এফ–৩৫ কেনার ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন,
“আমরা চুক্তি করব। তারা লকহিডের কাছ থেকে এফ–৩৫ কিনবে।”
ইসরায়েলের উদ্বেগ বিবেচনায় রেখে তিনি বলেন,
“ইসরায়েল খুশি হবে।”
হোয়াইট হাউস পরে জানায়—এফ–৩৫ বিক্রি ‘ভবিষ্যতের কোনো এক সময়’ হতে পারে এবং সৌদি আরব ৩০০ ট্যাংক পাবে।
)
নতুন চুক্তি: পারমাণবিক সহায়তা ও এআই প্রযুক্তি
দুই দেশ বেসামরিক পারমাণবিক শিল্পে মার্কিন সহায়তা দিতে একটি আইনি কাঠামোর নথিতে সই করে।
তবে সৌদি আরব নিজ দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে কি না—তা অস্পষ্ট রয়ে যায়।
অন্যদিকে একটি পৃথক চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবকে মার্কিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে আরও বেশি প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিতে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের “প্রধান কৌশলগত অংশীদার” হিসেবে ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সৌদি রাষ্ট্রদূত মাইকেল র্যাটনি বলেন,
“ফসিল–ফুয়েল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে যুবরাজ ভবিষ্যৎ দেখছেন প্রযুক্তিতে। সস্তা জ্বালানি, বিশাল ভূমি আর বিনিয়োগযোগ্য মূলধন দিয়ে তারা বড় ডেটা সেন্টার গড়ে তুলতে পারে।”
এফ–৩৫ চুক্তির সম্ভাব্য মূল্যও বিশাল—একটি বিমানের গড় দাম প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার।
খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
হত্যার দায় অস্বীকার করলেও ঘটনাটি যুবরাজের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি করে। প্রায় আট বছর পর, কূটনীতি ও বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি পুনরায় হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন করলেন।
প্রধান অগ্রগতি: সৌদি আরব এখন ‘মেজর নন–ন্যাটো অ্যালাই’
মঙ্গলবারের বৈঠকের পর ডিনারে ট্রাম্প ঘোষণা করেন—সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র “মেজর নন–ন্যাটো অ্যালাই” হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এর ফলে উন্নত অস্ত্র কেনা ও সামরিক সহযোগিতায় বিশেষ সুবিধা পাবে রিয়াদ।
ডিনারে উপস্থিত অতিথিদের তালিকা
ডিনারে উপস্থিত ছিলেন—
টেসলা সিইও ইলন মাস্ক
অ্যাপল সিইও টিম কুক
ওপেনএআই প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যান
এনভিডিয়া সিইও জেনসেন হুয়াং
প্যারামাউন্ট সিইও ডেভিড এলিসন
সেলসফোর্স সিইও মার্ক বেনিওফ
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও এবং ফক্স নিউজ উপস্থাপক ব্রেট বাইয়ারসহ আরও অনেকে।
#tag: আন্তর্জাতিক_রাজনীতি | যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি_সম্পর্ক | খাশোগি_হত্যাকাণ্ড | ট্রাম্প | মোহাম্মদ_বিন_সালমান
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















