দুবাই এয়ারশোতে তেজস যুদ্ধবিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার নমনশ সৈয়াল প্রাণ হারালে শোকের ছায়া নেমে আসে হিমাচলের কাঙ্গরায় তার গ্রামে। ঘটনাটির কারণ জানতে কোর্ট অফ ইনকোয়ারি গঠন করেছে আইএএফ।
দুবাই এয়ারশোতে শুক্রবার তেজস যুদ্ধবিমান ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) উইং কমান্ডার নমনশ সৈয়াল নিহত হন। আইএএফ নিশ্চিত করেছে যে ঘটনাটির কারণ অনুসন্ধানে কোর্ট অফ ইনকোয়ারি গঠন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে বিমানটি আইএএফে যুক্ত হওয়ার পর এটিই তেজসের দ্বিতীয় বড় দুর্ঘটনা।
উইং কমান্ডার নমনশ সৈয়াল কে ছিলেন?
৩৪ বছর বয়সী নমনশ সৈয়ালের বাড়ি হিমাচল প্রদেশের কাঙ্গরা জেলার নাগরোটা বাগওয়ান তহসিলের পাতিয়ালকা গ্রামে। তার পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী—যিনি নিজেও আইএএফ কর্মকর্তা—তাদের ছয় বছরের মেয়ে ও বাবা-মা।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সৈয়াল পড়াশোনা করেছেন সুশান্তপুর তিরা সাইনিক স্কুলে। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন।
পরিবারের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া
তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রমেশ কুমার জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সময় সৈয়ালের বাবা-মা তামিলনাড়ুর সুলুর এয়ার ফোর্স স্টেশনে ছিলেন, আর স্ত্রী কলকাতায় একটি পেশাগত প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছিলেন।
সৈয়ালের বাবা জগন্নাথ সৈয়াল ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোর চাকরি শেষে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নিয়েছেন।
গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মানুষ বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে শোক প্রকাশ করছে। তার চাচা যোগীন্দ্র নাথ সৈয়াল জানান, “গ্রামের সবাই খুবই মর্মাহত।”
রমেশ কুমার আরও বলেন, “মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি স্কোয়াড্রন লিডার ছিলেন। খুবই নম্র ও শান্ত স্বভাবের মানুষ। তিনি শিগগিরই পদোন্নতির প্রত্যাশা করছিলেন।”
হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর উভয়েই শোক প্রকাশ করে তাকে দেশের সাহসী ও কর্তব্যপরায়ণ পাইলট হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
দুর্ঘটনা নিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিবৃতি
আইএএফ জানিয়েছে: “দুবাই এয়ারশোতে অ্যারোবেটিক প্রদর্শনের সময় একটি তেজস বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। পাইলট দুঃখজনকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং নিহত পরিবারের পাশে রয়েছি।”
এ ঘটনার তদন্তে কোর্ট অফ ইনকোয়ারি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার শেষ মুহূর্তের ভিডিও
দুবাইয়ে গালফ নিউজের হাতে পাওয়া ফুটেজে দেখা যায়, বিমানটি বিভিন্ন কৌশল প্রদর্শন করার পর হঠাৎ উচ্চতা হারিয়ে তীব্রভাবে নিচে নেমে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এসময় বিমানটি দর্শকদের দিক থেকে ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে বলেও বোঝা যায়।
চোখে দেখা সাক্ষীদের বর্ণনা
দুর্ঘটনার পরপরই ধোঁয়ার স্তম্ভ আকাশে উঠতে দেখা যায়। জরুরি সেবা এবং দমকল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। সাময়িকভাবে এয়ারশোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয় এবং দর্শকদের নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রদর্শনী এলাকায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
অনেক উপস্থিত দর্শক ঘটনাটিকে “অবাক করা” এবং “হৃদয়বিদারক” বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকের মতে, শেষ মুহূর্তে বিমানটিকে লোকসমাগম থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেন পাইলট—যা তার সাহস ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়।
#তেজস_দুর্ঘটনা #আইএএফ #নমনশ_সৈয়াল #দুবাই_এয়ারশো #ভারতীয়_বিমানবাহিনী
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















