০৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ইমরান খানকে ‘ডেথ সেল’-এ একঘরে আটকে রাখার অভিযোগ: গুজবের মাঝে পরিবারের গভীর উদ্বেগ বরিশাল-ভোলা সেতুর দাবিতে শাহবাগ অবরোধে ভোলাবাসী সিলেটে শাহজালালের মাজারে খেজুরগাছ কাটায় তীব্র ক্ষোভ কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা: সিলেটে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণহানি কুয়েটে ভর্তিযুদ্ধের স্টল–বিতর্কে শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত, অভিযুক্ত সাময়িক বহিষ্কার টাঙ্গাইল কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু লালমনিরহাটে গুজব ও চোরাচালান রোধে জনগণ–গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইল বিজিবি পাবনায় নির্বাচনী প্রচারণায় জামায়াতের হামলার অভিযোগে বিএনপির নিন্দা হংকং অগ্নিকাণ্ডে মানবিক ঢল: শহরজুড়ে সহমর্মিতার জোয়ার হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮, নিখোঁজ প্রায় ২০০

হংকং অগ্নিকাণ্ডে মানবিক ঢল: শহরজুড়ে সহমর্মিতার জোয়ার

হংকং–গত ৭৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর হংকংয়ে দেখা গেছে বিরল সংহতি ও মানবিক সহায়তার ছবি। ২৬ নভেম্বর বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভয়াবহ আগুনে নিউ টেরিটরিজের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্টের ৩১ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবনগুলোর সাতটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ৭৬ জন, যাদের মধ্যে ১১ জন অগ্নিনির্বাপক কর্মী। এখনও প্রায় ২৮০ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের পর শহরের সর্বত্র সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে।


সহায়তায় এগিয়ে আসা নাগরিকদের ঢল

তাই পো মার্কেটের রেইনবো বারবিকিউ স্টোরের সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়েছিলেন শত শত মানুষ। কেউ এনেছেন পানির কার্টন, কেউ কলার ঝাঁকা, গরম কাপড়, মাস্ক—আবার কেউ এনেছেন ব্যবহার্য অন্তর্বাস পর্যন্ত। এইসব দানকৃত সামগ্রী স্বেচ্ছাসেবীরা ট্যাক্সি, ব্যক্তিগত গাড়ি, এমনকি সাইকেল বা হেঁটে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন।

জায়গা সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই শহরের অন্যান্য পাবলিক স্থানে বা বন্ধু-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

১৮ বছর বয়সী ভোকেশনাল শিক্ষার্থী রজার উ জানান, “আমরা গ্রুপ চ্যাটে দেখি যে অনেক জায়গায় সরবরাহ পৌঁছাতে সাহায্য দরকার। রাতেই এখানে চলে আসি। পুরো রাত জেগে কাজ করেছি। স্কুলেও যাই নি আজ।” তিনি আরও বলেন, “প্রায় পুরো আবাসিক এলাকা পুড়ে গেছে। যারা মুহূর্তেই ঘরহারা হয়েছেন, তাদের দেখে সাহায্য করা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনি। হংকংবাসী এমন সময় সত্যিই এক হয়ে যায়।”

Death toll in Hong Kong high-rise fire rises to 128, with dozens still  missing | GBH

আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ ও পরিস্থিতির ভয়াবহতা

২৬ নভেম্বর বিকেল ২টা ৫০ মিনিটে শুরু হওয়া আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে, কারণ ভবনগুলো তখন সংস্কার কাজ চলায় বাঁশের মাচা ও সবুজ নির্মাণ-জাল টানানো ছিল। এসব নির্মাণ সামগ্রী আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে বড় ভূমিকা রেখেছে।

হংকংয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে বাঁশের মাচা ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল চলতি বছরের মার্চ থেকে। কিন্তু ওই আবাসিক কমপ্লেক্সে এখনও পুরোনো পদ্ধতিই চলছিল।

১৯৪৮ সালে ডেস ভিউ রোড ওয়েস্টে একটি গুদামে বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণহানি হলো।


ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি

২৭ নভেম্বর ওয়াং ফুক কোর্ট এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়া সেতুর ওপর ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। বাতাসে ছড়িয়ে থাকা ধোঁয়ার তীব্র গন্ধ থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক পরে ছিলেন। অনেক বাসিন্দা দূরবীন দিয়ে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টের অবস্থা দেখার চেষ্টা করছিলেন।

সেতুর কাছের পার্কে ধোঁয়া এতটাই তীব্র ছিল যে চোখে পানি চলে আসছিল।

বেশ কয়েকজন বাসিন্দা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। একজন বললেন, “আমাদের বারবার দুঃখের কথা বলাতে বাধ্য করবেন না। আমরা যথেষ্ট কষ্টে আছি।”

Hong Kong firefighters make final search for survivors after apartment  tower blaze kills 128 :: WRAL.com

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহায়তা নেটওয়ার্ক

ঘটনার পর হংকংজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে রাতারাতি সহায়তা গ্রুপ ও কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের থাকার ব্যবস্থা, খাবার, ওষুধ, পোশাক—সব ধরনের সহায়তা সংগঠিত করতে এগিয়ে আসছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

এই অগ্নিকাণ্ড শুধু ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ই নয়, বরং হংকংবাসীর ঐক্য, সহমর্মিতা ও মানবতার শক্তিকে আবারও সামনে তুলে এনেছে।

 

#hkfire #hongkong #support #community #sarakhonreport

জনপ্রিয় সংবাদ

ইমরান খানকে ‘ডেথ সেল’-এ একঘরে আটকে রাখার অভিযোগ: গুজবের মাঝে পরিবারের গভীর উদ্বেগ

হংকং অগ্নিকাণ্ডে মানবিক ঢল: শহরজুড়ে সহমর্মিতার জোয়ার

০৭:০৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

হংকং–গত ৭৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর হংকংয়ে দেখা গেছে বিরল সংহতি ও মানবিক সহায়তার ছবি। ২৬ নভেম্বর বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভয়াবহ আগুনে নিউ টেরিটরিজের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্টের ৩১ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবনগুলোর সাতটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ৭৬ জন, যাদের মধ্যে ১১ জন অগ্নিনির্বাপক কর্মী। এখনও প্রায় ২৮০ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের পর শহরের সর্বত্র সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে।


সহায়তায় এগিয়ে আসা নাগরিকদের ঢল

তাই পো মার্কেটের রেইনবো বারবিকিউ স্টোরের সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়েছিলেন শত শত মানুষ। কেউ এনেছেন পানির কার্টন, কেউ কলার ঝাঁকা, গরম কাপড়, মাস্ক—আবার কেউ এনেছেন ব্যবহার্য অন্তর্বাস পর্যন্ত। এইসব দানকৃত সামগ্রী স্বেচ্ছাসেবীরা ট্যাক্সি, ব্যক্তিগত গাড়ি, এমনকি সাইকেল বা হেঁটে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন।

জায়গা সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই শহরের অন্যান্য পাবলিক স্থানে বা বন্ধু-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

১৮ বছর বয়সী ভোকেশনাল শিক্ষার্থী রজার উ জানান, “আমরা গ্রুপ চ্যাটে দেখি যে অনেক জায়গায় সরবরাহ পৌঁছাতে সাহায্য দরকার। রাতেই এখানে চলে আসি। পুরো রাত জেগে কাজ করেছি। স্কুলেও যাই নি আজ।” তিনি আরও বলেন, “প্রায় পুরো আবাসিক এলাকা পুড়ে গেছে। যারা মুহূর্তেই ঘরহারা হয়েছেন, তাদের দেখে সাহায্য করা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনি। হংকংবাসী এমন সময় সত্যিই এক হয়ে যায়।”

Death toll in Hong Kong high-rise fire rises to 128, with dozens still  missing | GBH

আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ ও পরিস্থিতির ভয়াবহতা

২৬ নভেম্বর বিকেল ২টা ৫০ মিনিটে শুরু হওয়া আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে, কারণ ভবনগুলো তখন সংস্কার কাজ চলায় বাঁশের মাচা ও সবুজ নির্মাণ-জাল টানানো ছিল। এসব নির্মাণ সামগ্রী আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে বড় ভূমিকা রেখেছে।

হংকংয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে বাঁশের মাচা ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল চলতি বছরের মার্চ থেকে। কিন্তু ওই আবাসিক কমপ্লেক্সে এখনও পুরোনো পদ্ধতিই চলছিল।

১৯৪৮ সালে ডেস ভিউ রোড ওয়েস্টে একটি গুদামে বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণহানি হলো।


ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি

২৭ নভেম্বর ওয়াং ফুক কোর্ট এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়া সেতুর ওপর ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। বাতাসে ছড়িয়ে থাকা ধোঁয়ার তীব্র গন্ধ থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক পরে ছিলেন। অনেক বাসিন্দা দূরবীন দিয়ে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টের অবস্থা দেখার চেষ্টা করছিলেন।

সেতুর কাছের পার্কে ধোঁয়া এতটাই তীব্র ছিল যে চোখে পানি চলে আসছিল।

বেশ কয়েকজন বাসিন্দা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। একজন বললেন, “আমাদের বারবার দুঃখের কথা বলাতে বাধ্য করবেন না। আমরা যথেষ্ট কষ্টে আছি।”

Hong Kong firefighters make final search for survivors after apartment  tower blaze kills 128 :: WRAL.com

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহায়তা নেটওয়ার্ক

ঘটনার পর হংকংজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে রাতারাতি সহায়তা গ্রুপ ও কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের থাকার ব্যবস্থা, খাবার, ওষুধ, পোশাক—সব ধরনের সহায়তা সংগঠিত করতে এগিয়ে আসছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

এই অগ্নিকাণ্ড শুধু ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ই নয়, বরং হংকংবাসীর ঐক্য, সহমর্মিতা ও মানবতার শক্তিকে আবারও সামনে তুলে এনেছে।

 

#hkfire #hongkong #support #community #sarakhonreport