০২:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি, চিকিৎসা সঠিকভাবে চলছে: ডা. জাহিদ মনউন্মোচনকারী উপন্যাস ‘লাইটব্রেকার্স’ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তালেবান ইস্যুতে বাড়ছে আফগান-পাকিস্তান উত্তেজনা জলব্যায়ামে প্রেম, আর শেষ পর্যন্ত পুলেই বিয়ে টেক্সাসে মুসলিম অধিকার সংস্থা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণার জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া খরা কি উন্নত সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটিয়েছিল? ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস: শীতের কাঁপুনিতে শুরু হলো ডিসেম্বর প্রযুক্তি ও কৌশলগত অংশীদারত্বেই ভারতের রূপান্তরের চাবিকাঠি মিথেন খাদক অণুজীব: দূষণ কমানোর নতুন সম্ভাবনা

রোবোটাক্সির যুগ আসছে: বদলে যাবে নগরজীবন

নগরের মানুষের চলাচল যেমন, নগর অর্থনীতিও তেমনভাবে গড়ে ওঠে। আর খুব শিগগিরই সেই চলাচল পদ্ধতি বদলে যেতে চলেছে—যতটা বড় পরিবর্তন গাড়ির আবিষ্কারের পর আর দেখা যায়নি। আমেরিকার বে এরিয়া বা লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন যে রোবোটাক্সিগুলো মানুষকে তুলে নামাচ্ছে, সেগুলো বাইরে থেকে সাধারণ গাড়ির মতো দেখালেও এর সেন্সর, নকশা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্ভর চালনা ক্ষমতার কারণে ভবিষ্যতে শহরকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে চলেছে।

আগামী এক বছরের মধ্যেই রোবোটাক্সিকে উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। গুগলের ওয়েমো তাদের পরিষেবা মায়ামি, ওয়াশিংটনসহ আরও বেশ কিছু শহরে নিয়ে যেতে যাচ্ছে। লন্ডন হবে এ সংস্থার প্রথম আন্তর্জাতিক গন্তব্য, যেখানে উবারও স্বচালিত সেবা চালু করতে প্রস্তুত, ফলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে। ২০২৩ সালে ওয়েমো গাড়ি চালু হলে সান ফ্রান্সিসকোর অর্ধেকের বেশি মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আজ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ রোবোটাক্সির পক্ষে।

সান ফ্রান্সিসকোর অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে যে শহুরে রাস্তায় রোবোটাক্সি আসলে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। সড়ক নিরাপত্তা বাড়ছে, কারণ ওয়েমো গাড়ি মানুষের তুলনায় দশগুণ কম গুরুতর দুর্ঘটনায় জড়ায়। চালক বা রাইড-শেয়ার কর্মীদের এখনো চাকরি হারাতে হয়নি, কারণ ওয়েমোর পরিষেবা তুলনামূলক ব্যয়বহুল এবং বাজারের উচ্চ পর্যায়ে। জাগুয়ার গাড়ি ব্যবহার এবং গবেষণায় বিশাল বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনের কারণে ওয়েমোর ভাড়া সাধারণ অ্যাপ-রাইডের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। তা সত্ত্বেও বাজারে রোবোটাক্সির অংশীদারিত্ব দ্রুত বাড়ছে।

রোবোটাক্সি এখনো লাভ করতে পারে না, কিন্তু ভবিষ্যতে তা অনেক সস্তা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই গাড়িতে চালক নেই। তাই চালকের মজুরি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও গাড়িগুলো চার্জ দেওয়া, পরিষ্কার রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, তবু খরচ তুলনামূলক কম। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির মতো দিনের বেশিরভাগ সময় এগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে না; বরং সারাদিনই যাত্রী বহন করে, ফলে নির্মাণে বিনিয়োগের খরচ বহু যাত্রার ওপর ভাগ হয়ে যায়। বড় আকারে রোবোটাক্সি উৎপাদন শুরু হলে খরচ আরও কমবে। গাড়ির নকশাও বদলে যাবে, কারণ চালকের আসন রাখার আর প্রয়োজন হবে না। টেসলা শুধুমাত্র ক্যামেরার সাহায্যে স্বয়ংচালিত ব্যবস্থা চালাতে গবেষণা করছে, যাতে ব্যয়বহুল লাইডার সেন্সর বাদ দেওয়া যায়।

এই পরিবর্তন ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকানার ধারণাকেও বদলে দেবে। গ্রামীণ এলাকায় জনঘনত্ব কম হওয়ায় রোবোটাক্সির নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠা কঠিন হতে পারে, কিন্তু বড় শহর ও শহরতলিতে অনেক মানুষের কাছে ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার আগ্রহ কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে গড় পরিবার তাদের ব্যয়ের প্রায় ১৫% গাড়ি মালিকানায় খরচ করে, যা কমাতে পারলে তা হবে আকর্ষণীয়। কিন্তু এতে একটি বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে—ভয়াবহ যানজট। ব্যক্তিগত গাড়ির বাড়তি ব্যবহার শহরের রাস্তায় অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে, কারণ একজন যাত্রীর গাড়ির কারণে সৃষ্ট জ্যামের খরচ সমাজের সবার ওপর পড়ে, তার নিজের ওপর নয়।

এই সমস্যার সমাধানে অর্থনীতিবিদরা ট্রাফিক–মূল্য আরোপের কথা বলেন। ইউরোপে এটি বহুদিন ধরে চালু থাকলেও আমেরিকায় খুবই অজনপ্রিয়। কিন্তু রোবোটাক্সির সংখ্যা বাড়লে শহরের বাজেটে জরিমানার আয় কমে যাবে, ফলে ভিড়–কর বা ‘রোবোট ট্যাক্স’ আরোপ করা সহজ হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত সান ফ্রান্সিসকোতে রোবোটাক্সির কারণে চাকরি কমেনি, কিন্তু ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে। আমেরিকায় ১০ লাখ ট্যাক্সি ও বাসচালক এবং ৩০ লাখের বেশি ট্রাকচালক রয়েছে—মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩%। দুর্ঘটনা কমলে ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণ আইনজীবী, গাড়ি ডিলার ও ব্যবহৃত গাড়ির ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার কিছু নতুন চাকরিও সৃষ্টি হবে—রোবোটাক্সি বহর পরিচালনা, ডিপো পরিচালনা ইত্যাদিতে, যদিও তা আগের ক্ষতি পুরোপুরি পূরণ করবে না।

যাতায়াত খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। একজন গড় মার্কিন নাগরিক প্রতিদিন যাতায়াতে যে প্রায় এক ঘণ্টা সময় নষ্ট করে, তার কিছু অংশও যদি কাজে পরিণত হয়, তাহলে সামগ্রিক অর্থনীতির উৎপাদন বাড়বে। রোবোটাক্সির যাত্রা স্থির, গাড়ির সাসপেনশন উন্নত—এতে পথেই কাজ করা সহজ হবে। দুর্ঘটনা কমলে হাসপাতাল ও পুনর্বাসন ব্যয়ও কমবে।

পরবর্তী বড় পরিবর্তন আসবে নগরের ভূমি ব্যবহারে। আমেরিকার শহরকেন্দ্রের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গা পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। রোবোটাক্সির প্রসার ঘটলে এসব জায়গা অফিস বা আবাসিকে রূপান্তর করা সম্ভব। রাস্তার পাশের পার্কিং জায়গা ড্রপ-অফ জোন বা ফুটপাথে পরিণত হতে পারে, যা হাঁটার অভিজ্ঞতাকে আরও আরামদায়ক করবে। দুর্ঘটনা কমলে আরও বেশি মানুষ সাইকেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হতে পারে। এতে ঘনবসতিপূর্ণ, আরও কার্যকর শহরকেন্দ্র গড়ে উঠবে।

তবে শহরের বাইরে বসবাস বাড়তে পারে। রোবোটাক্সিতে দূরপথে যাতায়াত আরামদায়ক হলে অনেকেই শহর ছেড়ে বাইরে গিয়ে থাকতে চাইবে। এতে বাস, ট্রেন ও সাবওয়ের যাত্রী কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। যাত্রী কমলে আয় কমবে, ফলে সেবার মান খারাপ হবে এবং তাতে আবার যাত্রী আরও কমবে—একে বলা হয় ‘ডেথ স্পাইরাল’। নীতিনির্ধারকদের তাই গণপরিবহনে আরও অর্থায়ন করতে হবে এবং স্বচালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও ভালো পরিষেবা দিতে হবে—যেমন স্বচালিত বাস।

রোবোটাক্সি বৃদ্ধিতে কিছু নতুন সমস্যাও তৈরি হতে পারে। মানবচালিত গাড়ি রোবোটাক্সিকে প্রায়ই ঠেলে বা কাট দিয়ে চলে কারণ নিরাপত্তা–অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অ্যালগরিদম সংঘর্ষ এড়াতে ঝুঁকির চেয়ে অপেক্ষা করতে বেশি আগ্রহী। চালক না থাকায় গাড়ির হর্ন বাজানো বা প্রতিবাদ জানানোরও উপায় থাকে না। পথচারীরাও নিঃশঙ্ক চিত্তে রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। এছাড়া চালকবিহীন গাড়ি ভাঙচুর বা চুরি করাও সহজ হতে পারে। ফলে রোবোটাক্সি–নির্ভর রাস্তায় নতুন ধরনের নিয়মকানুনের প্রয়োজন হবে।

শেষ পর্যন্ত স্বচালিত গাড়ির শহর কেমন হবে—তা আজই বলা কঠিন। গাড়ি আবিষ্কারের এক শতাব্দী পর আমেরিকার আটলান্টা, ডালাস, লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহরে গাড়িনির্ভর নগর অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল। রোবোটাক্সির যুগেও ঝুঁকি আছে, সুযোগও আছে। সঠিক নীতি, প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা থাকলে এই স্বচালিত যুগ নগরজীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান

রোবোটাক্সির যুগ আসছে: বদলে যাবে নগরজীবন

১২:১৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

নগরের মানুষের চলাচল যেমন, নগর অর্থনীতিও তেমনভাবে গড়ে ওঠে। আর খুব শিগগিরই সেই চলাচল পদ্ধতি বদলে যেতে চলেছে—যতটা বড় পরিবর্তন গাড়ির আবিষ্কারের পর আর দেখা যায়নি। আমেরিকার বে এরিয়া বা লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন যে রোবোটাক্সিগুলো মানুষকে তুলে নামাচ্ছে, সেগুলো বাইরে থেকে সাধারণ গাড়ির মতো দেখালেও এর সেন্সর, নকশা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্ভর চালনা ক্ষমতার কারণে ভবিষ্যতে শহরকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে চলেছে।

আগামী এক বছরের মধ্যেই রোবোটাক্সিকে উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। গুগলের ওয়েমো তাদের পরিষেবা মায়ামি, ওয়াশিংটনসহ আরও বেশ কিছু শহরে নিয়ে যেতে যাচ্ছে। লন্ডন হবে এ সংস্থার প্রথম আন্তর্জাতিক গন্তব্য, যেখানে উবারও স্বচালিত সেবা চালু করতে প্রস্তুত, ফলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে। ২০২৩ সালে ওয়েমো গাড়ি চালু হলে সান ফ্রান্সিসকোর অর্ধেকের বেশি মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আজ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ রোবোটাক্সির পক্ষে।

সান ফ্রান্সিসকোর অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে যে শহুরে রাস্তায় রোবোটাক্সি আসলে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। সড়ক নিরাপত্তা বাড়ছে, কারণ ওয়েমো গাড়ি মানুষের তুলনায় দশগুণ কম গুরুতর দুর্ঘটনায় জড়ায়। চালক বা রাইড-শেয়ার কর্মীদের এখনো চাকরি হারাতে হয়নি, কারণ ওয়েমোর পরিষেবা তুলনামূলক ব্যয়বহুল এবং বাজারের উচ্চ পর্যায়ে। জাগুয়ার গাড়ি ব্যবহার এবং গবেষণায় বিশাল বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনের কারণে ওয়েমোর ভাড়া সাধারণ অ্যাপ-রাইডের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। তা সত্ত্বেও বাজারে রোবোটাক্সির অংশীদারিত্ব দ্রুত বাড়ছে।

রোবোটাক্সি এখনো লাভ করতে পারে না, কিন্তু ভবিষ্যতে তা অনেক সস্তা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই গাড়িতে চালক নেই। তাই চালকের মজুরি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও গাড়িগুলো চার্জ দেওয়া, পরিষ্কার রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, তবু খরচ তুলনামূলক কম। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির মতো দিনের বেশিরভাগ সময় এগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে না; বরং সারাদিনই যাত্রী বহন করে, ফলে নির্মাণে বিনিয়োগের খরচ বহু যাত্রার ওপর ভাগ হয়ে যায়। বড় আকারে রোবোটাক্সি উৎপাদন শুরু হলে খরচ আরও কমবে। গাড়ির নকশাও বদলে যাবে, কারণ চালকের আসন রাখার আর প্রয়োজন হবে না। টেসলা শুধুমাত্র ক্যামেরার সাহায্যে স্বয়ংচালিত ব্যবস্থা চালাতে গবেষণা করছে, যাতে ব্যয়বহুল লাইডার সেন্সর বাদ দেওয়া যায়।

এই পরিবর্তন ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকানার ধারণাকেও বদলে দেবে। গ্রামীণ এলাকায় জনঘনত্ব কম হওয়ায় রোবোটাক্সির নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠা কঠিন হতে পারে, কিন্তু বড় শহর ও শহরতলিতে অনেক মানুষের কাছে ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার আগ্রহ কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে গড় পরিবার তাদের ব্যয়ের প্রায় ১৫% গাড়ি মালিকানায় খরচ করে, যা কমাতে পারলে তা হবে আকর্ষণীয়। কিন্তু এতে একটি বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে—ভয়াবহ যানজট। ব্যক্তিগত গাড়ির বাড়তি ব্যবহার শহরের রাস্তায় অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে, কারণ একজন যাত্রীর গাড়ির কারণে সৃষ্ট জ্যামের খরচ সমাজের সবার ওপর পড়ে, তার নিজের ওপর নয়।

এই সমস্যার সমাধানে অর্থনীতিবিদরা ট্রাফিক–মূল্য আরোপের কথা বলেন। ইউরোপে এটি বহুদিন ধরে চালু থাকলেও আমেরিকায় খুবই অজনপ্রিয়। কিন্তু রোবোটাক্সির সংখ্যা বাড়লে শহরের বাজেটে জরিমানার আয় কমে যাবে, ফলে ভিড়–কর বা ‘রোবোট ট্যাক্স’ আরোপ করা সহজ হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত সান ফ্রান্সিসকোতে রোবোটাক্সির কারণে চাকরি কমেনি, কিন্তু ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে। আমেরিকায় ১০ লাখ ট্যাক্সি ও বাসচালক এবং ৩০ লাখের বেশি ট্রাকচালক রয়েছে—মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩%। দুর্ঘটনা কমলে ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণ আইনজীবী, গাড়ি ডিলার ও ব্যবহৃত গাড়ির ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার কিছু নতুন চাকরিও সৃষ্টি হবে—রোবোটাক্সি বহর পরিচালনা, ডিপো পরিচালনা ইত্যাদিতে, যদিও তা আগের ক্ষতি পুরোপুরি পূরণ করবে না।

যাতায়াত খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। একজন গড় মার্কিন নাগরিক প্রতিদিন যাতায়াতে যে প্রায় এক ঘণ্টা সময় নষ্ট করে, তার কিছু অংশও যদি কাজে পরিণত হয়, তাহলে সামগ্রিক অর্থনীতির উৎপাদন বাড়বে। রোবোটাক্সির যাত্রা স্থির, গাড়ির সাসপেনশন উন্নত—এতে পথেই কাজ করা সহজ হবে। দুর্ঘটনা কমলে হাসপাতাল ও পুনর্বাসন ব্যয়ও কমবে।

পরবর্তী বড় পরিবর্তন আসবে নগরের ভূমি ব্যবহারে। আমেরিকার শহরকেন্দ্রের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গা পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। রোবোটাক্সির প্রসার ঘটলে এসব জায়গা অফিস বা আবাসিকে রূপান্তর করা সম্ভব। রাস্তার পাশের পার্কিং জায়গা ড্রপ-অফ জোন বা ফুটপাথে পরিণত হতে পারে, যা হাঁটার অভিজ্ঞতাকে আরও আরামদায়ক করবে। দুর্ঘটনা কমলে আরও বেশি মানুষ সাইকেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হতে পারে। এতে ঘনবসতিপূর্ণ, আরও কার্যকর শহরকেন্দ্র গড়ে উঠবে।

তবে শহরের বাইরে বসবাস বাড়তে পারে। রোবোটাক্সিতে দূরপথে যাতায়াত আরামদায়ক হলে অনেকেই শহর ছেড়ে বাইরে গিয়ে থাকতে চাইবে। এতে বাস, ট্রেন ও সাবওয়ের যাত্রী কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। যাত্রী কমলে আয় কমবে, ফলে সেবার মান খারাপ হবে এবং তাতে আবার যাত্রী আরও কমবে—একে বলা হয় ‘ডেথ স্পাইরাল’। নীতিনির্ধারকদের তাই গণপরিবহনে আরও অর্থায়ন করতে হবে এবং স্বচালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও ভালো পরিষেবা দিতে হবে—যেমন স্বচালিত বাস।

রোবোটাক্সি বৃদ্ধিতে কিছু নতুন সমস্যাও তৈরি হতে পারে। মানবচালিত গাড়ি রোবোটাক্সিকে প্রায়ই ঠেলে বা কাট দিয়ে চলে কারণ নিরাপত্তা–অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অ্যালগরিদম সংঘর্ষ এড়াতে ঝুঁকির চেয়ে অপেক্ষা করতে বেশি আগ্রহী। চালক না থাকায় গাড়ির হর্ন বাজানো বা প্রতিবাদ জানানোরও উপায় থাকে না। পথচারীরাও নিঃশঙ্ক চিত্তে রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। এছাড়া চালকবিহীন গাড়ি ভাঙচুর বা চুরি করাও সহজ হতে পারে। ফলে রোবোটাক্সি–নির্ভর রাস্তায় নতুন ধরনের নিয়মকানুনের প্রয়োজন হবে।

শেষ পর্যন্ত স্বচালিত গাড়ির শহর কেমন হবে—তা আজই বলা কঠিন। গাড়ি আবিষ্কারের এক শতাব্দী পর আমেরিকার আটলান্টা, ডালাস, লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহরে গাড়িনির্ভর নগর অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল। রোবোটাক্সির যুগেও ঝুঁকি আছে, সুযোগও আছে। সঠিক নীতি, প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা থাকলে এই স্বচালিত যুগ নগরজীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।