সাত কলেজকে একীভূত করে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা যেন কাটছেই না। ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেও নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন। তিন সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও পরবর্তী অবস্থান সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাচ্ছেন না, ফলে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ: ক্লাস শুরু নিয়ে অস্থিরতা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্লাস ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ৩০ নভেম্বর নতুন তারিখ দেওয়া হয়, তবে সেদিনও ক্লাস শুরু হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা সেদিনই শাহবাগ এবং সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানান।
অবরোধের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে জনসাধারণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ভর্তি সম্পন্ন, কিন্তু ক্লাস শুরুর পথে নানা জটিলতা
সাত কলেজের সংকট নিরসনে অন্তবর্তী সরকার ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠন করে। ভর্তি কার্যক্রম ২৩ নভেম্বর শেষ হলেও পরদিন ভর্তির সময়সীমা বাড়িয়ে ২৫ নভেম্বর করা হয় এবং নতুন ক্লাস শুরুর তারিখ ধরা হয় ৩০ নভেম্বর। কিন্তু ঐ তারিখেও ক্লাস শুরু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং দ্রুত সমাধানের আশা করা হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের আরও কিছুটা সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে বিরোধ ও বিতর্ক
২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে—
১. সাত কলেজে অনার্স পর্যায়ে যে সব বিষয় পড়ানো হতো, তার বেশিরভাগই নতুন খসড়ায় নেই।
২. নারীশিক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে এমন ধারা রয়েছে।
৩. সাত কলেজ তাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য হারাতে পারে।
বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর সরফত আলী দশ দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং সাত কলেজের জমি-পূর্ণাঙ্গ কাঠামো রক্ষার দাবি জানান।
এদিকে ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নারীশিক্ষার অগ্রাধিকার রক্ষা ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। ফলে খসড়া অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজনও তৈরি হয়েছে।
অধ্যাদেশ এখনও চূড়ান্ত নয়
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান হোসেন জানিয়েছেন, আইন সংশোধনের কাজ এখনও চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষকদের অবস্থান: ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
সোমবার শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত কাঠামো তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হলে তারা অনির্দিষ্টকালের শাটডাউন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।

তাদের অভিযোগ, নতুন খসড়ায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলা হলেও শিক্ষকেরা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত নন। ফলে শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসনিক সমস্যার সৃষ্টি হবে।
তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর সবস্তরে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে, যাতে স্নাতক প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা যায়।
পরিস্থিতি এখনো অচলাবস্থায়: শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়
প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো, পাঠ্যসূচি, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা—সবকিছু নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন সাত কলেজের নতুন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি শেষ হলেও ক্লাস শুরু না হওয়ায় তাদের একাডেমিক বছর বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবি–দাওয়ার জটিলতা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
#ঢাকা_সেন্ট্রাল_ইউনিভার্সিটি #সাত_কলেজ #শিক্ষার্থী_আন্দোলন #শিক্ষা_সংকট #অধ্যাদেশ_বিতর্ক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















