০৮:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
বিদ্যুৎ লাইনে কাপড় পড়ে ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে ঢাকার মেট্রোরেল খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ খালেদা জিয়া প্রাসাদে নয়, রাজপথে রাজনীতি করেছেন: মঈন খান প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সক্ষমতা বিকাশে সকলের যৌথ দায়িত্ব ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া ও ভারত–শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক: পারস্পরিক কূটনীতির নতুন পাঠ পথ কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে বাংলাদেশের আইনে কী শাস্তি আছে এভারকেয়ারের কাছে হেলিকপ্টার মহড়া কাল, বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে জাপানের কাছ থেকে যা শিখতে পারে বাংলাদেশ জাপানে ঝিনুকের সংকট, শীতের প্রিয় খাবার ধরেছে ধাক্কা ইন্দোনেশিয়া–শ্রীলঙ্কা–থাইল্যান্ডে প্রাণঘাতী বন্যা: বিজ্ঞানীদের চোখে জলবায়ু সতর্কবার্তা

পথ কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে বাংলাদেশের আইনে কী শাস্তি আছে

পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুর ছানা বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে মেরে ফেলার ঘটনা সারা দেশের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে (ফাইল ফটো)

পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুর ছানা বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে মেরে ফেলার ঘটনা সারা দেশের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের ছোটাছুটি এবং আর্তনাদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্যবার শেয়ার হয়েছে।

গত রোববার আট কুকুর ছানা নিখোঁজের এই ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টার কমপ্লেক্সের সামনে।

ওইদিন রাত থেকেই শুরু হয় মা কুকুরের আহাজারি।

পরদিন সোমবার সকাল থেকেই ওলানভর্তি দুধ নিয়ে মা কুকুর খাবার খাওয়াতে সদ্যোজাত সন্তানদের খোঁজে এদিক সেদিক ছুটতে থাকে আর চিৎকার করতে দেখা যায়।

মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই মা পথকুকুরটি ওই ছানাদের জন্ম দিয়েছিল। কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচেই জন্মের পর ছিল বাচ্চাগুলো।

দুইদিনে মা কুকুরের আর্তনাদেই কুকুর ছানা নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয় উপজেলা প্রশাসন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রথমদিন বুঝতে না পারলেও পরে খোঁজ নিয়ে পরে জানা যায়, কুকুরটির আটটা বাচ্চাকে একটা বস্তাতে ভরে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মি. মনিরুজ্জামান এই ঘটনাকে “খুবই গর্হিত এবং অমানবিক” বলে অভিহিত করেন।

এই সরকারি কর্মকর্তা জানান, ওই কোয়ার্টারে অন্যান্য স্টাফদের কাছে ওই মহিলার ছেলেই বস্তাবন্দি করে কুকুরের বাচ্চাগুলোকে পানিতে ফেলার বিষয়টি জানায়।

পরে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকেই কুকুর ছানাগুলোকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু সেগুলো এরই মধ্যে মারা গেছে।

মা কুকুর ও তার দুই শিশু রাস্তায় বসে ঘুমাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করবে না।

যিনি কুকুর ছানাগুলোকে মেরেছেন তিনি আরেকজন সরকার কর্মকর্তার স্ত্রী বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় কোয়ার্টার থেকে ওই সরকারি কর্মকর্তার বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে, দুগ্ধবতী মা কুকুরটিকে চিকিৎসার জন্য লাইভস্টক কর্মকর্তার অধীনে দেওয়া হয়েছে।

“যেহেতু বাচ্চার দুধ নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে, দুধ আসতেছে, ব্যথা করছে। এগুলো আমরা ট্রিটমেন্ট করছি” বলেন মি. মনিরুজ্জামান।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ দফতরকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, “আইনগত বিষয়গুলো প্রাণিসম্পদ দফতর দেখতেছে।”

এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা ঈশ্বরদীর পথে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

তবে এই ঘটনাটিই শুধু নয়, এ মাসের শুরুতেও বগুড়ায় একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যা ও পোড়ানোর ঘটনায় বেশ আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এর আগে, গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আবাসিক এলাকা জাপান গার্ডেন সিটিতে পথকুকুর বা বিড়ালকে বিষ প্রয়োগে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।

ওই সময় অল্প সময়ের ব্যবধানে অন্তত দশটি কুকুর ও বিড়ালের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মাঠে নামে প্রাণী অধিকার কর্মীরা।

এর আগে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চট্রগ্রামে বিষ প্রয়োগ করে শত শত কুকুরকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল।

ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, মালিকবিহীন এসব পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা আঘাত করলে আদৌ শাস্তির বিধান আছে কিনা?

পথকুকুরের নিরাপত্তা বা আইনি প্রতিকার সাধারণ ব্যক্তি নিজে চাইতে পারবে কি না? নাকি পুলিশই নিজে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারবে?

চার সন্তানকে নিয়ে পথে ঘুমাচ্ছে মা কুকুর

পথ কুকুর বা প্রাণির ওপর সহিংস আচরণের ঘটনা এর আগেও বাংলাদেশে সমালোচনা তৈরি করেছে

কে নেবে আইনি পদক্ষেপ?

গত চৌঠা নভেম্বর বগুড়ার দত্তবাড়িয়ার গুচ্ছগ্রামে একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন পরদিন আদমদিঘী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

এই সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য মো. এমরান হোসেন এই জিডিটি করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিওতে একজন মহিলার একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার ভিডিও দেখে পরদিন বগুড়াতে যান তিনি।

জিডিতে ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছে, মোছাম্মত বুলবুলি একটি সাদা-কালো রংয়ের পুরুষ বিড়ালকে তার নিজ বাড়িতে বটি দিয়ে গলা সম্পূর্ণ কেটে এবং বুক চিড়ে নাড়ি-ভুড়ি বের করে হত্যা করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দিয়েছে।

এই ঘটনা স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সংগঠনটি জেনেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জিডিতে।

পরে ওই মহিলার প্রতিবেশী শামছুন্নাহার মিনা মৃত বিড়ালটিকে তার বাড়িতে নিয়ে সাদা ককশিটের ভিতর বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখেন।

মাংস খেয়ে ফেলায় বিড়ালটিকে জবাই করে হত্যা করা হয় বলে জানান মি. হোসেন।

মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিড়ালটির মরদেহ পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ওইখানেই সুরতহাল রিপোর্ট করে, পরবর্তীতে পোস্টমর্টেমের জন্য ঢাকায় পাঠায়। সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, দুইটাতেই ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছে এটা উল্লেখ করছে।”

ঘটনা শোনার পরে আদালত আদমদীঘি থানাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান মি. হোসেন।

পথবিড়াল বা কুকুরের হত্যার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নে মি. হোসেন বলেন, ” বাংলাদেশের প্রাণি আইন যেটা আছে সেটাতো আসলে খুবই দুর্বল। আমরা জিডি করার পরে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা বরাবরই বলছিলো এটা ধর্তব্যের বাইরে অপরাধ।”

“কিন্তু ওইটার জিডির কপি এবং যেহেতু জিডির পরে পুলিশই গিয়ে ডেডবডি উদ্ধার করেছে। তাতেই মনে হয় তারা এটা আদালতে ফরোয়ার্ড করেছিলো। পরে আদালতের আদেশ আসে ” বলেন মি. হোসেন।

তবে, এই ঘটনায় দ্রুত কাউকে গ্রেফতার করা যাবে এমন বিধানই নেই বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইনে, উল্লেখ করেন মি. হোসেন।

তবে, অভিযুক্ত মিজ বুলবুলি ঘটনার পর গ্রেফতার করা হলেও এই মামলায় করা হয়নি বলে জানান তিনি।

এই সংগঠনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানান, অন্য ঘটনায় গ্রেফতার হলেও মিজ বুলবুলিকে পরে বিড়াল হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ঢাকার রাস্তায় যত্র-তত্র কুকুরদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি প্রাণি হত্যার ঘটনায় আইনি প্রতিকার চেয়ে বা মামলা করতে পারবেন না।

আইন কী বলছে?

বাংলাদেশে প্রাণি নির্যাতন সম্পর্কিত প্রায় একশ বছরের পুরোনো ১৯২০ সালের ‘দ্য ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট’ বাতিল করে ২০১৯ সালে প্রাণি কল্যাণ আইন প্রণয়ন করা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করবে না।

অর্থাৎ, চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকার বা মামলা করতে পারবেন না।

আইনে বলা হয়েছে, ”কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করিবেন না।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাকিব মাহবুব বিবিসি বাংলাকে বলেন, ” এইটার (আইনের) প্রয়োগ সিটিজেনের হাতে না। এখানে কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় আছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। মানে অধিদপ্তরের লোক ছাড়া আপনি মামলা করতে পারবেন না। মূলত প্রাণি কল্যাণ আইনের বাধা এখানে।”

মি. মাহবুব গতবছরের মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে ঘটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, সে সময় এই আইনানুযায়ী মামলা করা যায়নি।

এই কারণে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর আওতায় সেসময় মামলা করা হয়েছিল।

এই আইনের (পেনাল কোড) ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণির মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কিন্তু মি. মাহবুব বলছেন, ” একটা রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ হবে? সেতো কারো মালিকানাধীন গবাদি পশু না। সেক্ষেত্রে এই ধারাও প্রমাণ করা কষ্টকর। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আসলে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না।”

ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

“কেননা সেখানেই মালিকবিহীন প্রাণি হত্যা করা যাবে না সেটা বলা হয়েছে। সেটা বলছে ঠিকই কিন্তু প্রয়োগ আবার নাগরিকের কাছে দেয় নাই। প্রয়োগ আবার অধিদপ্তরের কাছে। কর্তৃপক্ষ এমন কোনো মামলা করেছে তা আমার জানা নাই ” বলেন আইনজীবী মি. মাহবুব।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত।

ঢাকার সিটি কর্পোরেশন ২০১৪ সালেই কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়।

পরে ২০১৯ সালের নতুন প্রাণি কল্যাণ আইনে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না বলে বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা।

২০১৭ সালে নির্বিচারে কুকুর নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় পশুপ্রেমীরা

বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরই বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি কী?

প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ করা, সদয় আচরণ প্রদর্শন করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইনটি প্রণয়ন করা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ নন-কগনিজেবল বা অ-আমলযোগ্য এবং জামিনযোগ্য।

পোষ্য এবং মালিকবিহীন দুই ক্যাটাগরিতে প্রাণিকে ভাগ করা হয়েছে এই আইনে।

এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতীত মালিকবিহীন কোনো প্রাণিকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “মালিকবিহীন কোনো প্রাণি, যেসব কুকুর বা বিড়াল পোষা নয়, এমন পথকুকুর বা বিড়াল এমন প্রাণীকে কেউ যদি হত্যা করে তবে সেটা হবে অপরাধ, এই অপরাধে শাস্তির বিধানও আছে।”

প্রাণির প্রতি কি কি আচরণ নিষ্ঠুর হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা এই আইনের ছয় ও সাত ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অঙ্গহানি করা এবং বিষ প্রয়োগে প্রাণি হত্যাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তবে যদি কোনো প্রাণি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকলে বা অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ হলে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ক্রমে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে।

এছাড়া পোষ্য বা পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করার আইনে সুযোগ নাই বলে মন্তব্য করেন মি. মোরসেদ।

“যদি কেউ এ সমস্ত ঘটনা করে তবে তার জন্য ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা। আর যদি দ্বিতীয়বার করে তাহলে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা.. এই শাস্তির বিধানটাও আছে ” বলেন আইনজীবী মি. মোরসেদ।

এই শাস্তি পোষ্য এবং মালিকানাবিহীন বা পথকুকুর বা বিড়াল উভয়ের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য।

তিনি জানান, এই আইনের অধীনে প্রাণির প্রতি যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর বিচার করতে পারবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টও।

বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরই বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

 

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

বিদ্যুৎ লাইনে কাপড় পড়ে ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে ঢাকার মেট্রোরেল

পথ কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে বাংলাদেশের আইনে কী শাস্তি আছে

০৭:১৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুর ছানা বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে মেরে ফেলার ঘটনা সারা দেশের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের ছোটাছুটি এবং আর্তনাদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্যবার শেয়ার হয়েছে।

গত রোববার আট কুকুর ছানা নিখোঁজের এই ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টার কমপ্লেক্সের সামনে।

ওইদিন রাত থেকেই শুরু হয় মা কুকুরের আহাজারি।

পরদিন সোমবার সকাল থেকেই ওলানভর্তি দুধ নিয়ে মা কুকুর খাবার খাওয়াতে সদ্যোজাত সন্তানদের খোঁজে এদিক সেদিক ছুটতে থাকে আর চিৎকার করতে দেখা যায়।

মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই মা পথকুকুরটি ওই ছানাদের জন্ম দিয়েছিল। কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচেই জন্মের পর ছিল বাচ্চাগুলো।

দুইদিনে মা কুকুরের আর্তনাদেই কুকুর ছানা নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয় উপজেলা প্রশাসন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রথমদিন বুঝতে না পারলেও পরে খোঁজ নিয়ে পরে জানা যায়, কুকুরটির আটটা বাচ্চাকে একটা বস্তাতে ভরে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মি. মনিরুজ্জামান এই ঘটনাকে “খুবই গর্হিত এবং অমানবিক” বলে অভিহিত করেন।

এই সরকারি কর্মকর্তা জানান, ওই কোয়ার্টারে অন্যান্য স্টাফদের কাছে ওই মহিলার ছেলেই বস্তাবন্দি করে কুকুরের বাচ্চাগুলোকে পানিতে ফেলার বিষয়টি জানায়।

পরে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকেই কুকুর ছানাগুলোকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু সেগুলো এরই মধ্যে মারা গেছে।

মা কুকুর ও তার দুই শিশু রাস্তায় বসে ঘুমাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করবে না।

যিনি কুকুর ছানাগুলোকে মেরেছেন তিনি আরেকজন সরকার কর্মকর্তার স্ত্রী বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় কোয়ার্টার থেকে ওই সরকারি কর্মকর্তার বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে, দুগ্ধবতী মা কুকুরটিকে চিকিৎসার জন্য লাইভস্টক কর্মকর্তার অধীনে দেওয়া হয়েছে।

“যেহেতু বাচ্চার দুধ নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে, দুধ আসতেছে, ব্যথা করছে। এগুলো আমরা ট্রিটমেন্ট করছি” বলেন মি. মনিরুজ্জামান।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ দফতরকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, “আইনগত বিষয়গুলো প্রাণিসম্পদ দফতর দেখতেছে।”

এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা ঈশ্বরদীর পথে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

তবে এই ঘটনাটিই শুধু নয়, এ মাসের শুরুতেও বগুড়ায় একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যা ও পোড়ানোর ঘটনায় বেশ আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এর আগে, গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আবাসিক এলাকা জাপান গার্ডেন সিটিতে পথকুকুর বা বিড়ালকে বিষ প্রয়োগে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।

ওই সময় অল্প সময়ের ব্যবধানে অন্তত দশটি কুকুর ও বিড়ালের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মাঠে নামে প্রাণী অধিকার কর্মীরা।

এর আগে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চট্রগ্রামে বিষ প্রয়োগ করে শত শত কুকুরকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল।

ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, মালিকবিহীন এসব পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা আঘাত করলে আদৌ শাস্তির বিধান আছে কিনা?

পথকুকুরের নিরাপত্তা বা আইনি প্রতিকার সাধারণ ব্যক্তি নিজে চাইতে পারবে কি না? নাকি পুলিশই নিজে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারবে?

চার সন্তানকে নিয়ে পথে ঘুমাচ্ছে মা কুকুর

পথ কুকুর বা প্রাণির ওপর সহিংস আচরণের ঘটনা এর আগেও বাংলাদেশে সমালোচনা তৈরি করেছে

কে নেবে আইনি পদক্ষেপ?

গত চৌঠা নভেম্বর বগুড়ার দত্তবাড়িয়ার গুচ্ছগ্রামে একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন পরদিন আদমদিঘী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

এই সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য মো. এমরান হোসেন এই জিডিটি করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিওতে একজন মহিলার একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার ভিডিও দেখে পরদিন বগুড়াতে যান তিনি।

জিডিতে ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছে, মোছাম্মত বুলবুলি একটি সাদা-কালো রংয়ের পুরুষ বিড়ালকে তার নিজ বাড়িতে বটি দিয়ে গলা সম্পূর্ণ কেটে এবং বুক চিড়ে নাড়ি-ভুড়ি বের করে হত্যা করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দিয়েছে।

এই ঘটনা স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সংগঠনটি জেনেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জিডিতে।

পরে ওই মহিলার প্রতিবেশী শামছুন্নাহার মিনা মৃত বিড়ালটিকে তার বাড়িতে নিয়ে সাদা ককশিটের ভিতর বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখেন।

মাংস খেয়ে ফেলায় বিড়ালটিকে জবাই করে হত্যা করা হয় বলে জানান মি. হোসেন।

মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিড়ালটির মরদেহ পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ওইখানেই সুরতহাল রিপোর্ট করে, পরবর্তীতে পোস্টমর্টেমের জন্য ঢাকায় পাঠায়। সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, দুইটাতেই ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছে এটা উল্লেখ করছে।”

ঘটনা শোনার পরে আদালত আদমদীঘি থানাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান মি. হোসেন।

পথবিড়াল বা কুকুরের হত্যার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নে মি. হোসেন বলেন, ” বাংলাদেশের প্রাণি আইন যেটা আছে সেটাতো আসলে খুবই দুর্বল। আমরা জিডি করার পরে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা বরাবরই বলছিলো এটা ধর্তব্যের বাইরে অপরাধ।”

“কিন্তু ওইটার জিডির কপি এবং যেহেতু জিডির পরে পুলিশই গিয়ে ডেডবডি উদ্ধার করেছে। তাতেই মনে হয় তারা এটা আদালতে ফরোয়ার্ড করেছিলো। পরে আদালতের আদেশ আসে ” বলেন মি. হোসেন।

তবে, এই ঘটনায় দ্রুত কাউকে গ্রেফতার করা যাবে এমন বিধানই নেই বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইনে, উল্লেখ করেন মি. হোসেন।

তবে, অভিযুক্ত মিজ বুলবুলি ঘটনার পর গ্রেফতার করা হলেও এই মামলায় করা হয়নি বলে জানান তিনি।

এই সংগঠনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানান, অন্য ঘটনায় গ্রেফতার হলেও মিজ বুলবুলিকে পরে বিড়াল হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ঢাকার রাস্তায় যত্র-তত্র কুকুরদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি প্রাণি হত্যার ঘটনায় আইনি প্রতিকার চেয়ে বা মামলা করতে পারবেন না।

আইন কী বলছে?

বাংলাদেশে প্রাণি নির্যাতন সম্পর্কিত প্রায় একশ বছরের পুরোনো ১৯২০ সালের ‘দ্য ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট’ বাতিল করে ২০১৯ সালে প্রাণি কল্যাণ আইন প্রণয়ন করা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করবে না।

অর্থাৎ, চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকার বা মামলা করতে পারবেন না।

আইনে বলা হয়েছে, ”কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করিবেন না।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাকিব মাহবুব বিবিসি বাংলাকে বলেন, ” এইটার (আইনের) প্রয়োগ সিটিজেনের হাতে না। এখানে কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় আছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন। মানে অধিদপ্তরের লোক ছাড়া আপনি মামলা করতে পারবেন না। মূলত প্রাণি কল্যাণ আইনের বাধা এখানে।”

মি. মাহবুব গতবছরের মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে ঘটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, সে সময় এই আইনানুযায়ী মামলা করা যায়নি।

এই কারণে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর আওতায় সেসময় মামলা করা হয়েছিল।

এই আইনের (পেনাল কোড) ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণির মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কিন্তু মি. মাহবুব বলছেন, ” একটা রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ হবে? সেতো কারো মালিকানাধীন গবাদি পশু না। সেক্ষেত্রে এই ধারাও প্রমাণ করা কষ্টকর। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আসলে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না।”

ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

“কেননা সেখানেই মালিকবিহীন প্রাণি হত্যা করা যাবে না সেটা বলা হয়েছে। সেটা বলছে ঠিকই কিন্তু প্রয়োগ আবার নাগরিকের কাছে দেয় নাই। প্রয়োগ আবার অধিদপ্তরের কাছে। কর্তৃপক্ষ এমন কোনো মামলা করেছে তা আমার জানা নাই ” বলেন আইনজীবী মি. মাহবুব।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত।

ঢাকার সিটি কর্পোরেশন ২০১৪ সালেই কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়।

পরে ২০১৯ সালের নতুন প্রাণি কল্যাণ আইনে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না বলে বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা।

২০১৭ সালে নির্বিচারে কুকুর নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় পশুপ্রেমীরা

বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরই বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি কী?

প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ করা, সদয় আচরণ প্রদর্শন করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইনটি প্রণয়ন করা হয়।

আইনজীবীরা বলছেন, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ নন-কগনিজেবল বা অ-আমলযোগ্য এবং জামিনযোগ্য।

পোষ্য এবং মালিকবিহীন দুই ক্যাটাগরিতে প্রাণিকে ভাগ করা হয়েছে এই আইনে।

এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতীত মালিকবিহীন কোনো প্রাণিকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “মালিকবিহীন কোনো প্রাণি, যেসব কুকুর বা বিড়াল পোষা নয়, এমন পথকুকুর বা বিড়াল এমন প্রাণীকে কেউ যদি হত্যা করে তবে সেটা হবে অপরাধ, এই অপরাধে শাস্তির বিধানও আছে।”

প্রাণির প্রতি কি কি আচরণ নিষ্ঠুর হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা এই আইনের ছয় ও সাত ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অঙ্গহানি করা এবং বিষ প্রয়োগে প্রাণি হত্যাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তবে যদি কোনো প্রাণি সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকলে বা অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ হলে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ক্রমে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে।

এছাড়া পোষ্য বা পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করার আইনে সুযোগ নাই বলে মন্তব্য করেন মি. মোরসেদ।

“যদি কেউ এ সমস্ত ঘটনা করে তবে তার জন্য ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা। আর যদি দ্বিতীয়বার করে তাহলে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা.. এই শাস্তির বিধানটাও আছে ” বলেন আইনজীবী মি. মোরসেদ।

এই শাস্তি পোষ্য এবং মালিকানাবিহীন বা পথকুকুর বা বিড়াল উভয়ের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য।

তিনি জানান, এই আইনের অধীনে প্রাণির প্রতি যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর বিচার করতে পারবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টও।

বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরই বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

 

বিবিসি নিউজ বাংলা