আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ব্র্যাকের আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা বাস্তবায়নে সহায়তা করা সমাজের প্রত্যেকের দায়িত্ব। ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি কর্মসূচির আয়োজনে অনুষ্ঠানে অংশ নেন শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের অভিভাবক।
অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে। এতে ছিল আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের তৈরি হস্তশিল্প ও খাদ্যপণ্যের প্রদর্শনী। পাশাপাশি সহায়ক উপকরণের প্রদর্শনী এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন’।

উদ্বোধনী পর্বে অনুষ্ঠিত হয় প্যানেল আলোচনা। ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মৌতুশী কবির বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। তারা অপমান, অবজ্ঞা এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। বহু ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই এসব বাধা তৈরি করি। এ মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। ঘর, স্কুল ও কর্মক্ষেত্র—সব জায়গায় সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিতে হবে। তাদের সক্ষমতা বিকাশের পথ তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ব্র্যাকে ২৬৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্মরত আছেন। তাদের জন্য সহজপ্রাপ্য, উপযোগী ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাকে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রাধিকার দেয়।
ব্র্যাকের এডুকেশন, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর সাফি রহমান খান বলেন, সমাজে এখনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমতার অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক পথ বাকি। অনেক সময় তাদের চাহিদাকে উপেক্ষা করা হয়। অথচ সমাজে অবদান রাখার অসংখ্য সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে। তাদের সক্ষমতা বিকাশে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ব্র্যাকের সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রোটেকশন এবং জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর সাশ্বতী বিপ্লব বলেন, প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করা নানা চ্যালেঞ্জের। প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে কাউকে সমাজ থেকে বাদ দেওয়ার মানসিকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাকের এনডিডি (নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি) সেন্টারের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ফাতিহা ও তার মা রোজিনা সরদার। রোজিনা বলেন, আমরা সমাজে অনেক অপমান সহ্য করেছি। খুলনায় তাসনিমের জন্য কোনো বিশেষ স্কুল খুঁজে পাইনি। পরে ব্র্যাকের এনডিডি সেন্টারের কথা জানতে পারি। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
এনডিডি সেন্টারে বর্তমানে ১১৯ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, আর ২৪৪ শিক্ষার্থী এখান থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। ব্র্যাকের স্বপ্নসারথি কর্মসূচি কিশোরী মেয়েদের দক্ষতা বিকাশ ও ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে। কর্মসূচির আওতায় দেশের ৩১ জেলায় বর্তমানে ৩০০ প্রতিবন্ধী কিশোরী অংশ নিচ্ছে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রোটেকশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার মো. ইনতাজ আলী। অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ব্র্যাকের মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ও স্বপ্নসারথি সদস্য মিম জান্নাত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















