এআই–চালিত সারাংশ, কম অগ্রাধিকার নোটিফিকেশন গুছিয়ে দেবে
গুগল তার নতুন অ্যান্ড্রয়েড ১৬ আপডেটে নোটিফিকেশন ব্যবস্থাকে আরও স্মার্ট করে তোলার চেষ্টা করছে। এত দিন পিক্সেল ফোনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকা এআই–চালিত নোটিফিকেশন সারাংশ এবার অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেও পৌঁছাতে শুরু করেছে। দীর্ঘ মেসেজ, ব্যস্ত গ্রুপ চ্যাট, ভ্রমণ–সংক্রান্ত ইমেইল বা ব্রেকিং নিউজের মতো লম্বা নোটিফিকেশনগুলোকে এ ফিচার কয়েকটি মূল লাইনে সংক্ষেপ করে দেয়, যা সরাসরি নোটিফিকেশন প্যানেলেই দেখা যায়। ফলে প্রতিটি অ্যাপ আলাদা করে খুলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে বের করার ঝামেলা কিছুটা কমে। গুগলের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই এই সারাংশ তৈরির কাজ ডিভাইসের ভেতরেই সম্পন্ন হয়, ফলে সংবেদনশীল ডেটা সার্ভারে পাঠানোর প্রয়োজন কমে যায়।

এর পাশাপাশি এসেছে নতুন নোটিফিকেশন অর্গানাইজার, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাগুলোকে আলাদা গ্রুপে সাজিয়ে দেয়। প্রোমোশনাল ইমেইল, বিভিন্ন অফার, নিউজ এলার্ট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নোটিফিকেশনকে এই গ্রুপে সরিয়ে নীরবে নিচের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়, আর জরুরি মেসেজগুলোর জন্য জায়গা খালি হয় ওপরের দিকে। মূলত অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেম বহু বছর ধরে যে নোটিফিকেশন–বন্যার সমস্যায় ভুগছে, সেটি কমাতেই এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড ১৬–তে হোম স্ক্রিন ব্যক্তিগতকরণের জন্য নতুন আইকন–স্টাইল ও থিম যুক্ত হয়েছে, আর বিস্তৃত ডার্ক মোড এমন অ্যাপেও গাঢ় পটভূমি এনে দিতে পারে যেগুলোর নিজস্ব নাইট মোড নেই। সব মিলিয়ে গুগল পরিষ্কার বার্তা দিতে চাইছে—অ্যান্ড্রয়েড শুধু ওপেন ও ফ্লেক্সিবল প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং দৈনন্দিন ডিজিটাল শব্দ কমিয়ে ব্যবহারকারীর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এক স্মার্ট সহায়ক।
ফোন নির্মাতা, গোপনীয়তা ও ব্যবহার–অভ্যাসের নতুন সমীকরণ
অ্যান্ড্রয়েড–ভিত্তিক ফোন নির্মাতাদের জন্য আপডেটটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এত দিন গুগলের অনেক এআই ফিচার প্রথমে, এবং কখনও কখনও কেবলই, পিক্সেল ডিভাইসে আসায় অন্য নির্মাতাদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়ত। এখন যখন নোটিফিকেশন সারাংশ মূল অ্যান্ড্রয়েড ১৬–এর অংশ হিসেবে আসছে, তখন স্যামসাংসহ অন্য ব্র্যান্ডগুলোও নিজেদের ইউআই–এর মধ্যে এটি সহজে যুক্ত করতে পারবে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে পিক্সেল ও অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সফটওয়্যার–অভিজ্ঞতার ফারাক কিছুটা কমবে এবং অ্যাপলের অন–ডিভাইস ইন্টেলিজেন্স উদ্যোগের বিপরীতে অ্যান্ড্রয়েড শিবিরের যৌথ জবাব তৈরি হবে। তবে প্রত্যেক নির্মাতা কীভাবে ফিচারটি ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরবে, তা এখনও তাদের নিজস্ব কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।

গোপনীয়তা ও নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। গুগল যতই অন–ডিভাইস প্রসেসিংয়ের কথা বলুক না কেন, ব্যবহারকারীরা জানতে চাইবেন কোন পরিস্থিতিতে ডেটা কোম্পানির সার্ভারে পাঠানো হয় এবং কত দিন তা সংরক্ষিত থাকে। ভাষাগত সীমাবদ্ধতা কিংবা বিশেষ প্রেক্ষাপটে এআই ভুল সারাংশ দিলে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা বা বার্তার সূক্ষ্ম অর্থ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। অনেক পাওয়ার ইউজার হয়তো কাঁচা মেসেজকে বেশি ভরসা করে সারাংশ ফিচার বন্ধ করে রাখবেন। তবু যাদের লক স্ক্রিন ইতিমধ্যেই অগণিত নোটিফিকেশনে ভরা, তাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় শব্দ গুছিয়ে কেবল দরকারি তথ্য সামনে তুলে ধরতে পারা একটি এআই সহায়ক খুব দ্রুতই দৈনন্দিন অভ্যাসে জায়গা করে নিতে পারে—আর সেটিই অ্যান্ড্রয়েডে গুগলের পরের ধাপের মূল লক্ষ্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















