জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ঢাকায় নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, সম্প্রতি রাজধানীতে যেসব বিচ্ছিন্ন বোমা বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে, সেগুলো আগাম অস্থিরতার সংকেত।
রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা
ডিএমপি’র গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেসব রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার মুখে রয়েছে, তারা নির্বাচনের আগে রাজধানীতে বোমা হামলা বা অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে ভয়-আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করতে পারে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। তবে সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরিকল্পিত প্রচেষ্টা থাকতে পারে।
গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা চলমান নাশকতা পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
ডিবি প্রধান জানান, বেশ কয়েকজন উসকানিদাতার নাম উঠে এসেছে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
রাজধানীজুড়ে সিসিটিভি নেটওয়ার্ক, মানব গোয়েন্দা, ইলেকট্রনিক নজরদারি এবং সমন্বিত মাঠ-অভিযানের মাধ্যমে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কঠোর পর্যবেক্ষণ
নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ভুয়া খবর, বিকৃত ভিডিও ও মিথ্যা তথ্যের বিস্তার বাড়বে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শফিকুল ইসলাম জানান, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং টিম কাজ করছে। ক্ষতিকর কোনো কনটেন্ট পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ক্ষুদ্র অপরাধ নিয়ন্ত্রণে
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে সাধারণ চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ক্ষুদ্র অপরাধ এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসব ঘটনা ঢাকার সামগ্রিক হত্যার প্রবণতা প্রতিফলিত করে না বলে গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা গেছে।
ডিএমপি সদর দপ্তরের আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও গুজব ছড়ানোর ঘটনাও বাড়তে পারে। রাজনৈতিক সমাবেশেও সংঘর্ষের ঝুঁকি বেশি থাকবে, তাই প্রতিটি সভা-সমাবেশকে ঘিরে গোয়েন্দা মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাচনের আগে নাশকতা কেন বাড়ে
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়লে নির্বাচনের আগে লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতাও বাড়ে।
ব্যস্ত সড়কে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে ভয় ছড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়। ককটেল বিস্ফোরণকে রাজনৈতিক চাপ তৈরি ও বার্তা দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যদিও এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি নাও হতে পারে।
হঠাৎ সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে নির্বাচনী পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে পারে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার নামে বিভ্রান্তিমূলক প্রচেষ্টা ভোটারদের ভুল পথে নিতে পারে।

প্রস্তুতি জোরদার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তারা আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে প্রধান সড়কগুলোতে টহল বৃদ্ধি, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায় সাদা পোশাকের গোয়েন্দা মোতায়েন, স্বয়ংক্রিয় সাইবার মনিটরিং সিস্টেম সক্রিয় রাখা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি।
ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণা
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, বাড়তি নজরদারি, দ্রুত গ্রেপ্তার ও সমন্বিত গোয়েন্দা পদক্ষেপের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
ডিএমপি কমিশনার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, নাশকতাকারীদের ঢাকা শহরে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















