মোদী ও পুতিনের সাক্ষাত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরটি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠান করতে কেন্দ্রীভূত ছিল। পুতিনের এই সফরটি ছিল ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথম ভারত সফর, এবং এর মাধ্যমে দুই দেশ নতুন করে নিজেদের অর্থনৈতিক ও শ্রমিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত এবং রাশিয়া একসঙ্গে সম্মত হয়েছে, যাতে ভারতীয় শ্রমিকরা রাশিয়াতে আরও সহজে কাজ করতে পারেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। এই সফরে পুতিনের সম্মানার্থে মোদী বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং ব্যক্তিগত ডিনার ও লাঞ্চে অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও শ্রমিক চলাচল উন্নয়ন
ভারত এবং রাশিয়া তাদের শ্রমিক চলাচল সহজ করার জন্য একটি নতুন চুক্তি সই করেছে। এর মাধ্যমে, ভারতীয় দক্ষ কর্মীরা, বিশেষত তথ্য প্রযুক্তি, নির্মাণ এবং প্রকৌশল খাতে, রাশিয়ায় কাজ করার সুযোগ পাবে, যা সেখানে শ্রমিক সংকট মেটাতে সাহায্য করবে। এই চুক্তির পাশাপাশি, একটি নতুন অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে ভারতীয় পণ্যগুলির জন্য বৃহত্তর বাজার প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মুখ্য বিষয়: রাশিয়ার তেলের রপ্তানি ও সামরিক সম্পর্ক
রাশিয়া ভারতকে সস্তা তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদিও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেলের আমদানি কমানোর চেষ্টা করলেও, রাশিয়া এখনও ভারতের শক্তির খাতের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া, সামরিক ক্ষেত্রে ভারত এখনও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি করতে আগ্রহী, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।
সামরিক সহযোগিতা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একযোগ কাজের অঙ্গীকার
ভারত ও রাশিয়া তাদের সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে, বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তির গবেষণা এবং উন্নয়ন, একসঙ্গে উৎপাদন এবং যৌথ উদ্যোগে অস্ত্র সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে। এছাড়া, রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত সুবিধার্থে ভারতের অভ্যন্তরে যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী চাপ এবং ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
এই সফরটি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হওয়ায়, ভারত পশ্চিমের চাপের মধ্যেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এখনো স্বাধীন এবং দেশটি নিজের পথে চলতে আগ্রহী, এটি বিশেষভাবে পুতিনের ভারত সফরের পরিসরে স্পষ্ট হয়েছে। তবে, এই সম্পর্কের গভীরতা কতটা বাড়ানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে ভারত এবং রাশিয়া কীভাবে এগিয়ে যাবে, তা এখনও অজানা।
বিশ্লেষকরা বলছেন
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কীভাবে এই দুই দেশ তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারে, এবং পশ্চিমের চাপের মধ্যে কীভাবে তারা একে অপরকে সহায়তা করতে পারে। Observer Research Foundation-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর হার্শ পন্থ বলছেন, “ভারত তার বৈদেশিক নীতিতে স্বাধীনতা প্রদর্শন করছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে, তবে ভারত নিজস্ব পথে চলতে সক্ষম।”
যদিও ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার উদ্যোগটি একদিকে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর বাস্তবায়ন কতটা সফল হবে এবং এর ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















