ভারতের পরস্পরনির্ভরতা ও পারস্পরিক সুফলের বাস্তবতা আগামী দিনেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এগিয়ে নেবে—এ মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গঠনের পথে ভারত সবসময় পাশে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাজধানীর ওল্ড ইন্ডিয়া হাউসে ‘মৈত্রী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন।
উদ্বোধনী মন্তব্যে হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই—১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর—ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য মাইলফলক।
উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
১৯৭১-এর স্মৃতি ও মৈত্রী দিবসের তাৎপর্য
প্রণয় ভার্মা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের সমর্থনের বহু ঐতিহাসিক মুহূর্ত রয়েছে, তবে ৬ ডিসেম্বর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতার দশ দিন আগে ভারতের স্বীকৃতি দুই দেশের মাঝে সহমর্মিতা, আস্থা ও একাত্মতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তিনি উল্লেখ করেন, এই দিনটি শুধু রাজনৈতিক স্বীকৃতির নয়, বরং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিনও।
ভবিষ্যৎ অংশীদারত্বের দিগন্ত
হাইকমিশনার বলেন, ১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশ বহু দূর এগিয়েছে। দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রযাত্রা নতুন সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করেছে। তাঁর মতে, জল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাণিজ্য—সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্য একটাই: দুই দেশের জনগণের কল্যাণ।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও সমমর্যাদাভিত্তিক সম্পর্কই ভারতের অগ্রাধিকার। দুই দেশের জনগণই এই সম্পর্কের প্রধান অংশীদার, তাই যে কোনো প্রকল্প বা উদ্যোগ তাদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়।
আন্তনির্ভরতার বাস্তবতা
প্রণয় ভার্মা বলেন, আজ দুই দেশের সমাজ ও অর্থনীতি এমনভাবে যুক্ত যে পরস্পরের ওপর নির্ভরতা অস্বীকার করা যায় না। একা কেউ এগোতে পারে না—এই উপলব্ধিই দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ ও ফলপ্রসূ করে তুলবে। ভৌগোলিক সান্নিধ্যকে নতুন সম্ভাবনায় রূপ দিতে উভয়পক্ষই সমানভাবে আগ্রহী।
মৈত্রী দিবসকে তিনি দুই দেশের যৌথ ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক সংযোগ এবং সর্বোপরি পারস্পরিক সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁর মতে, এই সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী নয়; বরং ইতিহাস ও মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে অটুট।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুই দেশের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিল্পীরা নৃত্য, নাট্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ‘৭১ ইন সাইলেন্স’—সুন্দরম প্রোডাকশনের প্রতিবন্ধীবান্ধব এক অনন্য নাট্যনির্মাণ—বাংলাদেশের জন্মের গল্প শারীরিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে তুলে ধরে দর্শকদের গভীরভাবে স্পর্শ করে। এরপর সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের নৃত্য পরিবেশনা দুই দেশের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক বন্ধনের অনবদ্য চিত্র তুলে ধরে। অনুষ্ঠান শেষে শিরোনামহীন ব্যান্ডের প্রাণবন্ত পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
#মৈত্রী_দিবস ভারত_বাংলাদেশ_সম্পর্ক প্রণয়_ভার্মা ঢাকা_দিল্লি_কূটনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















