ডিফল্ট সার্চ–যুদ্ধের ভেতরের হিসাব
যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক গুগলের সেই সব চুক্তিতে এক বছরের মেয়াদসীমা বেঁধে দিয়েছেন, যেগুলোর মাধ্যমে কোম্পানিটি ফোন, ব্রাউজার ও অন্যান্য ডিভাইসে তার সার্চ ইঞ্জিন ও এআই সেবা ডিফল্ট হিসেবে বসিয়ে রাখে। দীর্ঘমেয়াদি এই ডিফল্ট চুক্তিগুলোকে আগেই অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় প্রতিযোগিতা বিধ্বংসী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল; নতুন আদেশ সেই রায়ের প্রয়োগকে আরও কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন করছে। এখন থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটররা বছরে একবার করে নতুন দর-কষাকষির সুযোগ পাবে, আর গুগলকে প্রতিবারই নবায়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ন্যায্য প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে বিষয়টা হয়তো শুধু সেটিংসের একটি অপশন, কিন্তু আদালতের কাছে এটি গুগলের সার্চ ও বিজ্ঞাপন সাম্রাজ্যের মূল ‘পাইপলাইন’।

গুগল বহু বছর ধরে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, অ্যাপলের সাফারি বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ডিফল্ট সার্চ হওয়ার বিনিময়ে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে আসছে। সমালোচকেরা বলছেন, নতুন ডিভাইস হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যদি ব্যবহারকারী অদৃশ্যভাবে গুগলের সার্চ বক্সে ঠেলে দেওয়া হয়, তখন বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন কখনোই যথেষ্ট জায়গা পায় না। বছরে একবার চুক্তি নবায়নের নিয়ম সেই জড়তা ভাঙতে পারে, বিশেষ করে গোপনীয়তাকেন্দ্রিক সার্চ, শিশু-বান্ধব ডিভাইস বা করপোরেট হার্ডওয়্যারের মতো নির্দিষ্ট খাতে বিকল্প খেলোয়াড়দের দরজা কিছুটা খুলে দিতে পারে। একই সঙ্গে, স্বল্প-মেয়াদি চুক্তি গুগলের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে, কারণ অংশীদাররা বছর বছর প্রতিদ্বন্দ্বী অফার নজরে রাখবে।
এআই যুগে ‘ডিফল্ট’ ধারণাটিও নতুন রূপ নিচ্ছে। এখন আর শুধু ব্রাউজারের সার্চ বক্স নয়, স্মার্টফোন, গাড়ি, টিভি ও হোম ডিভাইসে যে ভয়েস ও চ্যাটবট সহকারী বসানো হয়, তার পেছনেও ডজনখানেক একচেটিয়া চুক্তি কাজ করে। এই রায়ের ফলে নির্মাতারা হয়তো বেশি ঘন ঘন এআই প্রদানকারী বদলাতে উৎসাহিত হবে, আর ক্রেতাদের সামনে সেটআপের সময় বরাবরের চেয়ে বেশি বিকল্প হাজির হতে পারে। গুগল বরাবরই যুক্তি দেয়, ব্যবহারকারীরা চাইলে সহজেই ডিফল্ট বদলাতে পারেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পাল্টা জবাব—বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ সেটিংস ঘাঁটেন না, তাই প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে নকশা পর্যায়ে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হয়, পরের পাতায় লুকিয়ে রাখা পছন্দ নয়।
এক বছরের সীমা কেবল গুগল নয়, অন্য প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্যও বার্তা। অ্যাপল, মাইক্রোসফট বা আমাজনও নিজস্ব সেবা—অ্যাপ স্টোর, ক্লাউড স্টোরেজ, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট—ডিফল্ট হিসেবে বসিয়ে বিপুল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। আদালতের এই রায় যদি নজিরে পরিণত হয়, তবে ব্রাউজার, অ্যাপ মার্কেট, এমনকি গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমেও একই ধরনের সীমা আরোপের প্রশ্ন উঠতে পারে। ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই জোরালো ‘চয়েস স্ক্রিন’ বা স্পষ্ট নির্বাচন পাতার দাবিতে সুর তুলছে, যাতে নতুন ডিভাইস চালু করতেই ব্যবহারকারী ন্যায্যভাবে একাধিক সার্চ ইঞ্জিন বা এআই সহকারীর মধ্যে বেছে নিতে পারেন। গুগলের সামনে এখন দ্বৈত চ্যালেঞ্জ—একদিকে আইন মানতে গিয়ে অংশীদারদের ধরে রাখা, অন্যদিকে প্রতি বছর নতুনভাবে প্রমাণ করা যে শুধু ডিফল্ট অবস্থান নয়, সেবার মানেই তাদের শক্তি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















