দুই সপ্তাহ আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সামনে আসে, যখন মার্কো রুবিও জেনেভায় ইউক্রেনের জন্য শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে যান। ইউরোপের প্রস্তাব সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এ সম্পর্কে জানেন না।
আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে গত সপ্তাহে, যখন উরসুলা ফন ডার লেয়েন ঘোষণা দেন যে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সর্বোচ্চ ১৬৫ বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কী—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। কেন তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে শুধু অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। সম্ভবত, যেমন ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এই পরিকল্পনাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।
ইউরোপ কেন নিজের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যুতে কোণঠাসা—তা বোঝা কঠিন নয়। এটি দুর্বল ও বিভক্ত। বহু বছর ধরেই মহাদেশটি নিজের প্রতিরক্ষা খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেনি। একই সময়ে কট্টর-ডানপন্থী জাতীয়তাবাদের উত্থান অভ্যন্তর থেকে ইউরোপকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, আর ব্রেক্সিট ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যকে আলাদা করেছে—যে দেশটি ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা ছিল।

ফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া সামরিকভাবে হুমকি দিতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ বা ইইউ “রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করছে”—এমন অভিযোগ তুলে চাপ দিতে পারে, আর চীন বিরল খনিজের সরবরাহ সংকুচিত করে দিতে পারে। তারা মনে করে ইইউ এতটাই দুর্বল যে পাল্টা আঘাত করার ক্ষমতা নেই—যদিও গত সপ্তাহে ইইউ সেই ক্ষমতা কিছুটা শক্তিশালী করেছে। এই পরিস্থিতি ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই বিপজ্জনক।
তবুও ইউরোপ চাইলে এক হতে পারে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে—প্রথমত নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে হবে এবং ইউক্রেনের জন্য পুনর্গঠনমূলক ঋণ নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ইইউকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া আরও কার্যকর করতে হবে, যা একক বাজার সম্পন্ন করা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো কাজেও সহায়তা করবে।
যুক্তরাজ্য ও ইইউকেও সম্পর্কের ফাটল মেরামত করতে আরও উদ্যোগী হতে হবে। আর মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে কট্টর-ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে, যারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি নরম মনোভাব দেখায়। ক্রেমলিনের প্রতি সহানুভূতি দেখানো বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
সত্যের মুহূর্ত
ইউক্রেনই ইইউকে গঠন বা ভেঙে দিতে পারে। ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হলো—বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে জব্দ রাখা বিপুল রুশ সম্পদ। তা ব্যবহার করে ইউক্রেনকে বড় অঙ্কের ঋণ দিলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। এতে ইউক্রেনের মনোবল বাড়বে এবং পুতিন বুঝতে পারবেন যে প্রতিপক্ষের টাকার ঘাটতিতে তিনি যুদ্ধ জিততে পারবেন না। বড় অঙ্কের আর্থিক প্রতিশ্রুতি হয়তো ট্রাম্পকেও ইইউকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য করবে।
এ ঋণ এখনো ঝুলে আছে, বিশেষত বেলজিয়ামের আপত্তির কারণে। তবে সুসংবাদ হলো—জার্মানির মতো বড় সদস্যদেশগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে। ইউরোপীয় কমিশনও তা বুঝছে। কমিশন জরুরি ক্ষমতা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে কিছু দেশ আপত্তি করলেও ঋণ অনুমোদন করা যায়। যদি সেটি ব্যর্থ হয়, তবে ঋণ দেওয়ার একটি বিকল্প কাঠামোও রয়েছে, যার উন্নয়নে আমিও যুক্ত ছিলাম।

ইউরোপ প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ বাড়ানো ও সীমান্ত-অতিক্রমী সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কিছু অগ্রগতি করছে। সাধারণ ঋণে অর্থায়িত ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর SAFE প্রকল্প একটি ভালো সূচনা। তবে এটি যথেষ্ট বড় নয়, এবং সদস্যদেশগুলোকে তাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি ত্যাগে উৎসাহিত করার মতো শক্তিশালীও নয়। আরও বড় সমস্যা—এ প্রকল্পে যুক্তরাজ্যকে পূর্ণ অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সম্ভবত ইউরোপের আরও একটি কাঠামো দরকার, যা একটি সর্ব-ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলবে। এতে তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যারা এতে আগ্রহী—এবং এর বাইরে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের মতো দেশও থাকতে পারে। ব্রুগেল থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রস্তাবিত ইউরোপীয় ডিফেন্স মেকানিজম এ কাজে উপযোগী হতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের উচিত ইইউর সঙ্গে একটি উচ্চাভিলাষী নিরাপত্তা চুক্তি চাওয়া—যাতে প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য, অর্থনীতি, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য, প্রযুক্তি ও সীমান্ত নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
লন্ডনের উচিত ইউরোপীয় কমিশনের আহ্বানে কান দেওয়া, যেখানে তৃতীয় পক্ষকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন ঋণের গ্যারান্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্য SAFE-এ যোগদানের বিনিময়ে এমন গ্যারান্টি দিতে পারে। এতে দুটি লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ হবে: ইইউর ঋণ অনুমোদন সহজ হবে এবং ইউরোপের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য নিজ দেশে জব্দ রুশ সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনের জন্য আলাদা পুনর্গঠন ঋণও দিতে পারে।
বেশি ভোট, কম ভেটো
ইইউর দুর্বলতার একটি প্রধান কারণ হলো—অনেক নীতিতে সদস্যদেশগুলো ভেটো দিতে পারে, এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এর ফলে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে এবং অনেক সময় প্রক্রিয়া অচল হয়ে যায়। ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি ও এনরিকো লেত্তার প্রতিবেদনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ—যেমন প্রতিযোগিতা বাড়ানো ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানা পরিকল্পনা—তাই সামান্যই অগ্রসর হয়েছে।
আদর্শভাবে ইইউর উচিত সংবিধি বদলে কিছু ভেটো ক্ষমতা তুলে দেওয়া—বিশেষত পররাষ্ট্রনীতি, ব্যয় এবং কর সংক্রান্ত ক্ষেত্রে। কিন্তু সমস্যা হলো—সংবিধি পরিবর্তনে ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকটির সম্মতি দরকার, এবং সবসময়ই এক বা একাধিক দেশ আপত্তি করে।

তাই ইইউকে সর্বসম্মতি ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সৃজনশীল উপায় বের করতে হবে। ইউক্রেন ঋণের ক্ষেত্রে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহারের প্রস্তাব একটি পথ। আরেকটি পথ হলো—যেসব দেশ এগোতে চায় তারা মিলিতভাবে নতুন উদ্যোগ শুরু করবে, আর যারা চাইবে না তারা বাইরে থাকবে। ইউরো মুদ্রা চালুর সময় এমনটাই হয়েছিল—ডেনমার্ক ও যুক্তরাজ্য (তখন সদস্য) এতে যোগ দেয়নি।
এমনকি ইচ্ছুক দেশগুলো চাইলে নিজেদের মধ্যে আলাদা একটি চুক্তিও করতে পারে, যাতে বাকি সদস্যদের ভেটো অকার্যকর হয়ে যায়। ২০১১ সালে ব্রিটেন কঠোর বাজেট নিয়ম আটকে দিলে ইইউ এমনই একটি পথ নিয়েছিল।
অবশ্য ভেটো অতিক্রমের চেষ্টা জাতীয়তাবাদী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে। তাই মূলধারার রাজনীতিবিদদের উচিত এসব কট্টর-ডানপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও জোরালো লড়াই চালানো। ভোটারদের বুঝাতে হবে—সত্যিকারের দেশপ্রেম মানে পুতিন বা ট্রাম্পের কাছে নতি স্বীকার করা নয়, বরং তাদের মোকাবিলা করা।
ইউরোপের স্বার্থে কাজ করা রাজনীতিবিদরা হয়তো লড়াইয়ে হেরে যেতে পারেন—তবে অন্তত জোরালো লড়াই করে হারাই ভালো, নীরবে আত্মসমর্পণ করার চেয়ে।
হুগো ডিকসন 


















