০১:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
নাইজেরিয়ায় ধান–মকাই–গমের দামে ধস: কোটি কোটি নাইরা ক্ষতিতে কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমের চাষে অনাগ্রহ মিশরের ইডেক্স অস্ত্র প্রদর্শনীতে ড্রোন দখলে বিশ্ব কোম্পানিগুলোর দৌড় চীনে এইচ২০০ চিপ বিক্রিতে ছাড়ের পথ, নভিডিয়াকে নতুন শর্ত দিল ওয়াশিংটন ঢাকার লালবাগে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা: চারুকলা অনুষদে মাত্র ১১ শতাংশ শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণ ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কিনছে সরকার, সরবরাহে থাকছে নিউট্রিঅ্যাগ্রো ওভারসিজ ওপি–সি প্রাইভেট লিমিটেড আইজিপি অপসারণের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় অটোরিকশা চালক ও যাত্রীর মৃত্যু লণ্ঠনফ্লাই মধুর রহস্য: নতুন স্বাদে মাতানো মার্কিন মৌচাক ভারতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত: রাজ্যসভায় ‘বন্দে মাতরম’ বিতর্কে খড়্গের তীব্র আক্রমণ বিজেপিকে

চীনে এইচ২০০ চিপ বিক্রিতে ছাড়ের পথ, নভিডিয়াকে নতুন শর্ত দিল ওয়াশিংটন

দাম কমিয়ে রপ্তানির অনুমতি, কৌশল বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রথমবারের মতো কিছুটা ঢিলা দিচ্ছে চীনের দিকে কড়া রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের দেয়ালে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভিডিয়া তাদের শক্তিশালী এইচ২০০ এআই চিপ চীনা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে—তবে শর্ত হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশের তুলনায় অন্তত ২৫ শতাংশ কম দামে। দীর্ঘদিন ধরে চিপ নির্মাতা ও ক্লাউড কোম্পানিগুলো যুক্তি দিয়ে আসছিল, একেবারে নিষেধাজ্ঞা দিলে চীনের উঠতি স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্পের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।

নীতি নির্ধারকদের ভাষ্য, এই ডিসকাউন্টভিত্তিক মডেল আসলে দুই ধরনের লক্ষ্যকে একসঙ্গে সামাল দেওয়ার চেষ্টা। একদিকে তারা চান, চীনের সামরিক ও নজরদারি খাতের জন্য উন্নত এআই হার্ডওয়্যার এতটাই ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হোক, যাতে ঝুঁকি কমে। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন না করে সীমিত আকারে রাখারও চাপ রয়েছে। এইচ২০০ এখনও কড়াকড়ি লাইসেন্স ও এন্ড-ইউজার যাচাইয়ের আওতায় থাকবে, তবে নতুন দাম কাঠামোর ভেতরে থাকা চুক্তিগুলো আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে না। নভিডিয়ার জন্য এটি সংবেদনশীল হলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজস্ব উৎস ধরে রাখার সুযোগ, বিশেষ করে যখন চীনা চিপ নির্মাতারা নিজেদের এআই অ্যাক্সেলেটর নিয়ে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এগোচ্ছে।

এই ঘোষণার পরই এশিয়ার বাজারগুলো নড়েচড়ে বসে। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ওয়াশিংটন হয়তো পরের ধাপে ঝাঁপিয়ে পড়া নিষেধাজ্ঞার বদলে সূক্ষ্ম, হিসেবি নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকছে। চীনা টেক জায়ান্টগুলো এখন পুনরায় হিসাব করছেন তাদের ডেটা-সেন্টার পরিকল্পনা; ছাঁটাই দামে পাওয়া এইচ২০০ চিপকে কীভাবে দেশীয় অ্যাক্সেলারেটরের সঙ্গে মিলিয়ে বড় ভাষা মডেল চালু রাখা যায়, সেদিকেই মনোযোগ। তবে তাদের জন্য এই সুযোগ সীমিত—আরও উন্নত নকশার চিপ এখনো নিষিদ্ধ, আর যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো সময় ফাঁকফোকর বন্ধ করে দিতে পারে।

Nvidia says US curbs on AI chip sales to China would cause 'permanent loss of opportunities' | CNN Business

এআই দৌড়, শুল্ক আর সাপ্লাই চেইন—সব এক সুতোয় গাঁথা
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং আরও বাড়ানোর হুমকির প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। চীনা রফতানির ওপর বাড়তি শুল্ক আর প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এখন কার্যত একই ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করছে। এশিয়ার নির্মাতা দেশগুলোর জন্য বার্তাটা পরিষ্কার—পণ্য সীমান্ত পেরোবে ঠিকই, কিন্তু কোন দামে, কাকে এবং কতখানি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে, তা নির্ধারণ করবে ভূরাজনীতি।

তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো সেমিকন্ডাক্টর হাবে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের উন্নত পণ্য নিয়েও কি একই ধরনের দামভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ আসবে? যদি তাই হয়, তবে মিত্র দেশগুলোর রপ্তানির ক্ষেত্রেও হয়তো কঠোর নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং সূক্ষ্মভাবে ক্যালিব্রেটেড সীমাবদ্ধতা দেখা যাবে। এদিকে চীনা কোম্পানিগুলো নিজেদের সফটওয়্যার স্ট্যাক পুনর্গঠনে জোর দিচ্ছে, যাতে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দেশীয় চিপেও দক্ষভাবে বড় মডেল চালানো যায়। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে নভিডিয়ার প্রতি নির্ভরতা কিছুটা কমতে পারে, যদিও স্বল্পমেয়াদে বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত—যারা নিজেদের বিকল্প উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে—তাদের জন্য এই সংকেত মিশ্র। একদিকে, চীন থেকে সরিয়ে আনা প্রোডাকশন লাইনের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে। অন্যদিকে, এত প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নিয়ম মানতে গেলে আইনি টিম ও এক্সপোর্ট-কন্ট্রোল বিশেষজ্ঞ ছাড়া পথ চলে না; ফলে বড় করপোরেশনের তুলনায় ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ আরও বাড়বে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন চীনা গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। কেউ কেউ মনে করছেন, সীমিত হলেও শক্তিশালী একটি চিপ পাওয়া না পাওয়ার চেয়ে ভালো, বিশেষ করে যারা এআই রেসে এগিয়ে থাকতে চায়। আবার অনেকে বলছেন, ২৫ শতাংশ ছাড় আসলে নভিডিয়ার মার্জিন কমাবে এবং আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে দেশীয় অ্যাক্সেলারেটরের দিকে ঠেলে দেবে। যা–ই হোক, সিদ্ধান্তটি দেখিয়ে দিল—এআই দৌড়, শুল্ক যুদ্ধ আর নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এখন কূটনৈতিক বিবৃতিতে যতটা লেখা হচ্ছে, তার সমান গুরুত্ব পাচ্ছে বাণিজ্যিক চুক্তির সূক্ষ্ম শর্তগুলোতেও।

জনপ্রিয় সংবাদ

নাইজেরিয়ায় ধান–মকাই–গমের দামে ধস: কোটি কোটি নাইরা ক্ষতিতে কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমের চাষে অনাগ্রহ

চীনে এইচ২০০ চিপ বিক্রিতে ছাড়ের পথ, নভিডিয়াকে নতুন শর্ত দিল ওয়াশিংটন

১০:০০:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

দাম কমিয়ে রপ্তানির অনুমতি, কৌশল বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রথমবারের মতো কিছুটা ঢিলা দিচ্ছে চীনের দিকে কড়া রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের দেয়ালে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভিডিয়া তাদের শক্তিশালী এইচ২০০ এআই চিপ চীনা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে—তবে শর্ত হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশের তুলনায় অন্তত ২৫ শতাংশ কম দামে। দীর্ঘদিন ধরে চিপ নির্মাতা ও ক্লাউড কোম্পানিগুলো যুক্তি দিয়ে আসছিল, একেবারে নিষেধাজ্ঞা দিলে চীনের উঠতি স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত আমেরিকান শিল্পের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।

নীতি নির্ধারকদের ভাষ্য, এই ডিসকাউন্টভিত্তিক মডেল আসলে দুই ধরনের লক্ষ্যকে একসঙ্গে সামাল দেওয়ার চেষ্টা। একদিকে তারা চান, চীনের সামরিক ও নজরদারি খাতের জন্য উন্নত এআই হার্ডওয়্যার এতটাই ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হোক, যাতে ঝুঁকি কমে। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন না করে সীমিত আকারে রাখারও চাপ রয়েছে। এইচ২০০ এখনও কড়াকড়ি লাইসেন্স ও এন্ড-ইউজার যাচাইয়ের আওতায় থাকবে, তবে নতুন দাম কাঠামোর ভেতরে থাকা চুক্তিগুলো আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে না। নভিডিয়ার জন্য এটি সংবেদনশীল হলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজস্ব উৎস ধরে রাখার সুযোগ, বিশেষ করে যখন চীনা চিপ নির্মাতারা নিজেদের এআই অ্যাক্সেলেটর নিয়ে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এগোচ্ছে।

এই ঘোষণার পরই এশিয়ার বাজারগুলো নড়েচড়ে বসে। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ওয়াশিংটন হয়তো পরের ধাপে ঝাঁপিয়ে পড়া নিষেধাজ্ঞার বদলে সূক্ষ্ম, হিসেবি নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকছে। চীনা টেক জায়ান্টগুলো এখন পুনরায় হিসাব করছেন তাদের ডেটা-সেন্টার পরিকল্পনা; ছাঁটাই দামে পাওয়া এইচ২০০ চিপকে কীভাবে দেশীয় অ্যাক্সেলারেটরের সঙ্গে মিলিয়ে বড় ভাষা মডেল চালু রাখা যায়, সেদিকেই মনোযোগ। তবে তাদের জন্য এই সুযোগ সীমিত—আরও উন্নত নকশার চিপ এখনো নিষিদ্ধ, আর যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো সময় ফাঁকফোকর বন্ধ করে দিতে পারে।

Nvidia says US curbs on AI chip sales to China would cause 'permanent loss of opportunities' | CNN Business

এআই দৌড়, শুল্ক আর সাপ্লাই চেইন—সব এক সুতোয় গাঁথা
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং আরও বাড়ানোর হুমকির প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। চীনা রফতানির ওপর বাড়তি শুল্ক আর প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এখন কার্যত একই ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করছে। এশিয়ার নির্মাতা দেশগুলোর জন্য বার্তাটা পরিষ্কার—পণ্য সীমান্ত পেরোবে ঠিকই, কিন্তু কোন দামে, কাকে এবং কতখানি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে, তা নির্ধারণ করবে ভূরাজনীতি।

তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো সেমিকন্ডাক্টর হাবে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের উন্নত পণ্য নিয়েও কি একই ধরনের দামভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ আসবে? যদি তাই হয়, তবে মিত্র দেশগুলোর রপ্তানির ক্ষেত্রেও হয়তো কঠোর নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং সূক্ষ্মভাবে ক্যালিব্রেটেড সীমাবদ্ধতা দেখা যাবে। এদিকে চীনা কোম্পানিগুলো নিজেদের সফটওয়্যার স্ট্যাক পুনর্গঠনে জোর দিচ্ছে, যাতে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দেশীয় চিপেও দক্ষভাবে বড় মডেল চালানো যায়। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে নভিডিয়ার প্রতি নির্ভরতা কিছুটা কমতে পারে, যদিও স্বল্পমেয়াদে বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত—যারা নিজেদের বিকল্প উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে—তাদের জন্য এই সংকেত মিশ্র। একদিকে, চীন থেকে সরিয়ে আনা প্রোডাকশন লাইনের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে। অন্যদিকে, এত প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নিয়ম মানতে গেলে আইনি টিম ও এক্সপোর্ট-কন্ট্রোল বিশেষজ্ঞ ছাড়া পথ চলে না; ফলে বড় করপোরেশনের তুলনায় ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ আরও বাড়বে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন চীনা গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। কেউ কেউ মনে করছেন, সীমিত হলেও শক্তিশালী একটি চিপ পাওয়া না পাওয়ার চেয়ে ভালো, বিশেষ করে যারা এআই রেসে এগিয়ে থাকতে চায়। আবার অনেকে বলছেন, ২৫ শতাংশ ছাড় আসলে নভিডিয়ার মার্জিন কমাবে এবং আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে দেশীয় অ্যাক্সেলারেটরের দিকে ঠেলে দেবে। যা–ই হোক, সিদ্ধান্তটি দেখিয়ে দিল—এআই দৌড়, শুল্ক যুদ্ধ আর নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এখন কূটনৈতিক বিবৃতিতে যতটা লেখা হচ্ছে, তার সমান গুরুত্ব পাচ্ছে বাণিজ্যিক চুক্তির সূক্ষ্ম শর্তগুলোতেও।