০৭:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত: রাজ্যসভায় ‘বন্দে মাতরম’ বিতর্কে খড়্গের তীব্র আক্রমণ বিজেপিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনল: বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতি ফেরাতে নতুন পদক্ষেপ হুইস্কি বিক্রি শুরু করলো সৌদি আরব বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ১০৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো: সুদের বাড়তি চাপ নিয়ে বিশ্বব্যাংক নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে অনলাইনে জনমত নেবে জামায়াত এমিনেমকে নিয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন, কেট উইন্সলেটের সেই এসএনএল স্মৃতিই এখন ভাইরাল ডিসেম্বর ৯ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০ ছাড়াল উত্তর-পূর্ব জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার জাপানের সামরিক হুমকি নিয়ে চীনের তীব্র অভিযোগ, তাইওয়ান ইস্যুতে বাড়ছে উত্তেজনা ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় টাপানুলি ওরাংওটাং আরও বিপদে

উত্তর-পূর্ব জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার

রাতের ভূমিকম্পে আতঙ্ক, তবু সীমিত ক্ষয়ক্ষতি
জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে মাঝারি গভীরতায় সৃষ্ট ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প এক রাতেই বদলে দিয়েছে হাজারো মানুষের রুটিন। সোমবার গভীর রাতে আঘাত হানা এই কম্পনে আওমোরি ও হোক্কাইদো উপকূলের শহরগুলোর বহু আবাসিক ভবন, কারখানা ও রেললাইন কয়েক সেকেন্ড ধরে অস্বাভাবিকভাবে দুলতে থাকে। ভূমিকম্পের পরই জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সি সানরিকু ও হোক্কাইদোর উপকূলজুড়ে বড় ধরনের সুনামি সতর্কতা জারি করে, আর স্থানীয় প্রশাসন নিম্নাঞ্চল থেকে দ্রুত পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় সরে যেতে ঘোষণা দেয়। অনেকে তড়িঘড়ি করে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার ও সরকারি ভবনে আশ্রয় নেন, কেউ আবার গাড়িতে বসেই রাত কাটিয়ে দেন।

মঙ্গলবার সকালে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পরিষ্কার হলে কর্তৃপক্ষ জানায়, উপকূলে আঘাত হানা জলোচ্ছ্বাস তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল এবং বড় ধরনের প্লাবনের ঘটনা ঘটেনি। এ পর্যন্ত কয়েক ডজন মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে; বেশির ভাগই ভাঙা কাচ, পড়ে যাওয়া আলমারি বা ঝুলন্ত বস্তুতে আঘাত পেয়েছেন। অন্ধকারে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে যেতে গিয়ে কিছু বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। সীমিত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলেও বড় আকারে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়নি। শিনকানসেনসহ দ্রুতগতির ট্রেনগুলো নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িক বন্ধ রেখে পরিদর্শনের পর আবার ধীরে ধীরে চালু করা হয়েছে।

ভূমিকম্পটির আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল দীর্ঘ সময় ধরে চলা ‘লং-পিরিয়ড গ্রাউন্ড মোশন’। টোকিওসহ পূর্ব জাপানের বহু শহরে উঁচু ভবনগুলো অনেকক্ষণ ধরে দুলতে থাকে, ফলে কেন্দ্র থেকে দূরে থাকা বাসিন্দারাও তীব্র আতঙ্ক অনুভব করেন। এই ধরণের কম্পন উচ্চ ভবনের কাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যদিও উপকূলের কাছে সরাসরি কাঁপুনি তুলনামূলক কম ছিল। সরকার প্রথমবারের মতো হোক্কাইদো ও সানরিকু উপকূলের জন্য ‘পরবর্তী বড় ভূমিকম্প ও সুনামির সম্ভাবনা’ সংক্রান্ত বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে—আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহজুড়ে শক্তিশালী আফটারশকের ঝুঁকি থাকছে।

Japan leads the world in responding to earthquakes. Here's why

২০১১-র স্মৃতি, নতুন বাস্তবতা
তোহোকু অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এই কম্পন যেন মুহূর্তে ফিরিয়ে এনেছে ২০১১ সালের ভয়াবহ সুনামি ও ভূমিকম্পের স্মৃতি, যেখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং ফুকুশিমায় সৃষ্টি হয়েছিল পারমাণবিক সংকট। সেই ঘটনার পর গত এক দশকে জাপান বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে উঁচু সীওয়াল, উড়াল সড়ক, দ্রুততর সতর্কবার্তা ব্যবস্থা ও নিয়মিত মহড়া চালু করেছে। এবারের ভূমিকম্প বাস্তবে সেই নতুন অবকাঠামো ও প্রস্তুতি কতটা কার্যকর হয়েছে, তার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, সাইরেন, মোবাইল অ্যালার্ট ও টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে বেশির ভাগ উপকূলীয় এলাকায় খুব দ্রুত সতর্কবার্তা পৌঁছে গেছে। ফলে মানুষ তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যেই উঁচু স্থানে সরে যেতে পেরেছেন। তবে কিছু জায়গায় রাতের অন্ধকার, ঠান্ডা এবং বয়স্ক পরিবারের কথা ভেবে অনেকে দ্বিধায় ছিলেন—ঘর ছেড়ে যাবেন, নাকি থাকবেন। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে ‘বড় সুনামি’ আর কোন পরিস্থিতিতে ‘সীমিত উচ্চতার ঢেউ’—এই দুই বার্তার পার্থক্য আরও স্পষ্ট করে বোঝানোর বিষয়ে এখন পুনর্বিবেচনা করা হবে, যাতে মানুষ না অতিরিক্ত ভীত হয়, না আবার উদাসীন থাকে।

ভূকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে জাপানে দুর্যোগ সচেতনতা ধরে রাখা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। যেসব কিশোর বা তরুণ ২০১১ সালে শিশু ছিলেন, এখন তারা পরিবার ও কর্মস্থলে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছেন। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে মহড়া ও কাউন্সেলিংয়ের পরিকল্পনা করছে, যাতে বারবার বড় কম্পন মানসিকভাবে ভেঙে না দেয় মানুষকে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে থাকা দেশগুলোর জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—প্রকৃতিকে থামানো সম্ভব না হলেও আগাম সতর্কতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনসচেতনতা প্রাণহানি অনেক কমাতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত: রাজ্যসভায় ‘বন্দে মাতরম’ বিতর্কে খড়্গের তীব্র আক্রমণ বিজেপিকে

উত্তর-পূর্ব জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার

০৬:২২:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

রাতের ভূমিকম্পে আতঙ্ক, তবু সীমিত ক্ষয়ক্ষতি
জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে মাঝারি গভীরতায় সৃষ্ট ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প এক রাতেই বদলে দিয়েছে হাজারো মানুষের রুটিন। সোমবার গভীর রাতে আঘাত হানা এই কম্পনে আওমোরি ও হোক্কাইদো উপকূলের শহরগুলোর বহু আবাসিক ভবন, কারখানা ও রেললাইন কয়েক সেকেন্ড ধরে অস্বাভাবিকভাবে দুলতে থাকে। ভূমিকম্পের পরই জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সি সানরিকু ও হোক্কাইদোর উপকূলজুড়ে বড় ধরনের সুনামি সতর্কতা জারি করে, আর স্থানীয় প্রশাসন নিম্নাঞ্চল থেকে দ্রুত পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় সরে যেতে ঘোষণা দেয়। অনেকে তড়িঘড়ি করে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার ও সরকারি ভবনে আশ্রয় নেন, কেউ আবার গাড়িতে বসেই রাত কাটিয়ে দেন।

মঙ্গলবার সকালে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পরিষ্কার হলে কর্তৃপক্ষ জানায়, উপকূলে আঘাত হানা জলোচ্ছ্বাস তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল এবং বড় ধরনের প্লাবনের ঘটনা ঘটেনি। এ পর্যন্ত কয়েক ডজন মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে; বেশির ভাগই ভাঙা কাচ, পড়ে যাওয়া আলমারি বা ঝুলন্ত বস্তুতে আঘাত পেয়েছেন। অন্ধকারে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে যেতে গিয়ে কিছু বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। সীমিত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলেও বড় আকারে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়নি। শিনকানসেনসহ দ্রুতগতির ট্রেনগুলো নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িক বন্ধ রেখে পরিদর্শনের পর আবার ধীরে ধীরে চালু করা হয়েছে।

ভূমিকম্পটির আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল দীর্ঘ সময় ধরে চলা ‘লং-পিরিয়ড গ্রাউন্ড মোশন’। টোকিওসহ পূর্ব জাপানের বহু শহরে উঁচু ভবনগুলো অনেকক্ষণ ধরে দুলতে থাকে, ফলে কেন্দ্র থেকে দূরে থাকা বাসিন্দারাও তীব্র আতঙ্ক অনুভব করেন। এই ধরণের কম্পন উচ্চ ভবনের কাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যদিও উপকূলের কাছে সরাসরি কাঁপুনি তুলনামূলক কম ছিল। সরকার প্রথমবারের মতো হোক্কাইদো ও সানরিকু উপকূলের জন্য ‘পরবর্তী বড় ভূমিকম্প ও সুনামির সম্ভাবনা’ সংক্রান্ত বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে—আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহজুড়ে শক্তিশালী আফটারশকের ঝুঁকি থাকছে।

Japan leads the world in responding to earthquakes. Here's why

২০১১-র স্মৃতি, নতুন বাস্তবতা
তোহোকু অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এই কম্পন যেন মুহূর্তে ফিরিয়ে এনেছে ২০১১ সালের ভয়াবহ সুনামি ও ভূমিকম্পের স্মৃতি, যেখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং ফুকুশিমায় সৃষ্টি হয়েছিল পারমাণবিক সংকট। সেই ঘটনার পর গত এক দশকে জাপান বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে উঁচু সীওয়াল, উড়াল সড়ক, দ্রুততর সতর্কবার্তা ব্যবস্থা ও নিয়মিত মহড়া চালু করেছে। এবারের ভূমিকম্প বাস্তবে সেই নতুন অবকাঠামো ও প্রস্তুতি কতটা কার্যকর হয়েছে, তার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, সাইরেন, মোবাইল অ্যালার্ট ও টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে বেশির ভাগ উপকূলীয় এলাকায় খুব দ্রুত সতর্কবার্তা পৌঁছে গেছে। ফলে মানুষ তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যেই উঁচু স্থানে সরে যেতে পেরেছেন। তবে কিছু জায়গায় রাতের অন্ধকার, ঠান্ডা এবং বয়স্ক পরিবারের কথা ভেবে অনেকে দ্বিধায় ছিলেন—ঘর ছেড়ে যাবেন, নাকি থাকবেন। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে ‘বড় সুনামি’ আর কোন পরিস্থিতিতে ‘সীমিত উচ্চতার ঢেউ’—এই দুই বার্তার পার্থক্য আরও স্পষ্ট করে বোঝানোর বিষয়ে এখন পুনর্বিবেচনা করা হবে, যাতে মানুষ না অতিরিক্ত ভীত হয়, না আবার উদাসীন থাকে।

ভূকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে জাপানে দুর্যোগ সচেতনতা ধরে রাখা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। যেসব কিশোর বা তরুণ ২০১১ সালে শিশু ছিলেন, এখন তারা পরিবার ও কর্মস্থলে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছেন। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে মহড়া ও কাউন্সেলিংয়ের পরিকল্পনা করছে, যাতে বারবার বড় কম্পন মানসিকভাবে ভেঙে না দেয় মানুষকে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে থাকা দেশগুলোর জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—প্রকৃতিকে থামানো সম্ভব না হলেও আগাম সতর্কতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনসচেতনতা প্রাণহানি অনেক কমাতে পারে।