হলিউডের দখলযুদ্ধের ছায়া নামছে এশিয়ায়
হলিউডে বড়সড় আলোড়ন তুলেছে প্যারামাউন্ট গ্লোবাল; ক্যাশ ও শেয়ারের মিশেলে তারা ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারি (ডব্লিউবিডি) অধিগ্রহণে শত্রুভাবাপন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। পরিকল্পনা সফল হলে “টপ গান” ও “মিশন: ইম্পসিবল” থেকে শুরু করে ডিসি সুপারহিরো আর এইচবিওর বহুল আলোচিত ড্রামা—সব মিলিয়ে গড়ে উঠবে অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের বিশাল এক লাইব্রেরি। প্যারামাউন্ট বলছে, বছরে ৩০টিরও বেশি সিনেমা থিয়েটারে মুক্তির প্রতিশ্রুতি তাদের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু; বৃহৎ পরিসরের এই স্টুডিও আলাদা আলাদা মার্কেটিং ব্যয় কমাবে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ব্লকবাস্টারে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
প্রথম প্রতিক্রিয়া মূলত ওয়াল স্ট্রিটের বাজারদোল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা কমিশনের সম্ভাব্য আপত্তি ঘিরে হলেও, নীরবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মিডিয়া পার্টনার্স এশিয়ার হিসাব, নেটফ্লিক্স ও ডব্লিউবিডি যৌথভাবে যেই স্ট্রিমিং জোট গড়ার আলোচনা করছে, তা বাস্তবায়িত হলে শুধু এই অঞ্চলে বার্ষিক আয় দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। প্যারামাউন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ডব্লিউবিডি দখলে নিতে পারে, তবে সেই আলোচনা নতুনভাবে সাজাতে পারবে; সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কোথায় বান্ডেল অফার, কোথায় তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মকে কনটেন্ট লাইসেন্স, আর কোথায় নিজস্ব অ্যাপে সরাসরি সাবস্ক্রিপশন বাড়ানো হবে।
এশিয়ার সিনেমা হল মালিকদের জন্যও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। প্যারামাউন্ট যে “৩০-এর বেশি থিয়েট্রিকাল” মুক্তির কথা বলছে, তা নির্দেশ করে—স্টুডিও অন্তত আপাতত বড় পর্দা ছাড়ছে না। মহামারির ধাক্কা সামলে ওঠা বাংলাদেশের মতো বাজারসহ অঞ্চলের অনেক হলে প্রিমিয়াম স্ক্রিন, আইম্যাক্স, ৪ডিএক্স ও বিলাসবহুল আসনের বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত বড় বাজেটের ছবির দরকার। কিন্তু একই সঙ্গে আশঙ্কা আছে, একীভূত স্টুডিও আলোচনায় আরও বেশি শক্ত অবস্থান নিলে স্থানীয় পরিবেশক ও মালিকদের ভাগ কমতে পারে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের হিসাব
সম্ভাব্য এই একীভূতকরণকে ঘিরে শুধু মার্কিন বা ইউরোপীয় নয়, এশিয়ার বেশ কয়েকটি বড় বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও নড়েচড়ে বসবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। ভারতের টেলিকমভিত্তিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, জাপান ও কোরিয়ার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সেবা, কিংবা ভিউ ও আইকিউআইওয়াইয়ের মতো আঞ্চলিক জোট—সবাই চেষ্টা করবে যুক্তি দেখাতে, যাতে নতুন এই ‘কন্টেন্ট সুপার-জায়ান্ট’ প্রতিযোগিতা কমিয়ে না দেয়। একাধিক প্রিমিয়াম ক্যাটালগ যখন কম সংখ্যক পেইওয়ালের পিছনে চলে যায়, তখন গ্রাহকের পছন্দ কতটা সংকুচিত হয়—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
একই সঙ্গে এশিয়ার কনটেন্ট নির্মাতা ও প্রোডাকশন হাউসগুলো ভাবছে, নতুন স্টুডিও মানচিত্র তাদের জন্য সুযোগ না চাপ—কোনটা বয়ে আনবে। বড় ও বেশি আর্থিক শৃঙ্খলাবদ্ধ স্টুডিও হয়তো কম সংখ্যক হলেও বেশি ব্যয়বহুল লোকাল অরিজিনাল বানাতে চাইবে, যা দেশভিত্তিক গল্পের পরিবর্তে বহুদেশে চলার মতো ক্রস-ওভার হিটকে অগ্রাধিকার দেবে। আবার উল্টো চিত্রও হতে পারে—বুঝতে পারলে যে সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় ভাষার কনটেন্ট অপরিহার্য, তখন সিউল, মুম্বাই, ব্যাংকক বা ম্যানিলার প্রোডাকশন হাবে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও কো-প্রোডাকশনের সুযোগ বাড়তেও পারে।
এ মুহূর্তে ডব্লিউবিডির পরিচালনা পর্ষদ ও কিছু বড় শেয়ারহোল্ডার প্রস্তাবটি নাকচ করে দিচ্ছে, তাদের দাবি—প্রস্তাবিত মূল্য কোম্পানির প্রকৃত সম্ভাবনাকে প্রতিফলিত করে না এবং অতিরিক্ত ঋণের ঝুঁকি তৈরি করে। শত্রুভাবাপন্ন এই বিডের কারণে পুরো প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হতে পারে; মাঝপথে সম্পদ বিক্রি, পাল্টা প্রস্তাব কিংবা নতুন বিডারের আবির্ভাবও অস্বাভাবিক নয়। তবে যেভাবেই এই করপোরেট দাবার খেলা শেষ হোক না কেন, ঢাকা থেকে জাকার্তা পর্যন্ত এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল স্ট্রিমিং ও থিয়েটার বাজারের ভবিষ্যৎ কনটেন্ট সরবরাহ অনেকটাই নির্ভর করবে এর ফলাফলের ওপর।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















