০২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
নাইজেরিয়ায় খরা মৌসুমের চাষাবাদ ধীরগতি: ধান–মকাই–গমের দামের পতনে কৃষকের অনাগ্রহ ওয়াশিংটন ডিসির গুলিবর্ষণের পর ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ: যুক্তরাষ্ট্রে আইনি অভিবাসনেও ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা গুগল কি এনভিডিয়ার ‘একচেটিয়া আধিপত্য’ ভেঙে দিচ্ছে? এআই চিপ দৌড়ে নতুন শক্তির উত্থান স্পেনে ফ্রাঙ্কোর মতাদর্শের ‘পুনর্জাগরণ’? ৫০ বছর পরও কর্তৃত্ববাদী অতীতের ছায়া ফ্রান্সের গ্রাভেলিনসে ছোট নৌকার ফ্রন্টলাইন: ব্রিটেনে যাওয়ার অপেক্ষায় আটকে ৩ হাজার অভিবাসী টম স্টপার্ড আর নেই: বুদ্ধিদীপ্ত ভাষা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও থিয়েটারের নতুন দিগন্ত তৈরি করা কিংবদন্তির বিদায় ব্রিটেনে সবজি খাওয়া কমেছে, বাড়ছে রেডিমেড খাবার–জাঙ্ক ফুডের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে মানুষ? রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের নতুন জীবনী: ‘মাস্টার স্টোরিটেলার’-এর জীবনে আলো–ছায়ার চিত্র ব্রিটেনে কমছে পাফিন, মহাকাশে বেঁচে ফিরল শেওলা, আর স্টোন এজ ‘চুইংগাম’-এ চমক—বিজ্ঞান বলছে কী পাকিস্তানে ‘নতুন যুগের অভ্যুত্থান’? সেনাপ্রধান আসিম মুনীরের হাতে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে চাঞ্চল্য

স্পেনে ফ্রাঙ্কোর মতাদর্শের ‘পুনর্জাগরণ’? ৫০ বছর পরও কর্তৃত্ববাদী অতীতের ছায়া

স্পেনের স্বৈরশাসক জেনারেলিসিমো ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা গেছেন ১৯৭৫ সালে। ৩৬ বছরের লৌহশাসনের পর তার মৃত্যুই দেশটিতে গণতন্ত্রের পথ খুলে দেয়। কিন্তু পাঁচ দশক পরে স্পেনে আবারও মাথা তুলছে ফ্রাঙ্কোবাদী চিন্তা—যা অনেকের জন্য বিস্ময় এবং উদ্বেগের কারণ। El Diario–র বিশ্লেষক আনা লোপেস লিখেছেন, “যে মতাদর্শ অতীতে দমন–পীড়ন, হত্যা ও প্রজন্মকে দাসত্বে রেখেছিল, তা স্বাভাবিক নিয়মে বিলীন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।”

তরুণদের মধ্যে বিভ্রান্তি, ডানপন্থার উত্থান

সাম্প্রতিক জরিপ বলছে—১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের প্রায় এক–পঞ্চমাংশ মনে করে ফ্রাঙ্কোর শাসন ছিল “ভালো”, আর এক–চতুর্থাংশ মনে করে “কখনো কখনো গণতন্ত্রের চেয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনই উত্তম।” ডানপন্থী অভিবাসনবিরোধী দল ভক্স–এর জনপ্রিয়তা এই ভাবনার প্রতিফলন।
এমন অবস্থার জন্য ইতিহাসবিদরা দায়ী করছেন স্পেনের তথাকথিত “Pact of Forgetting”–কে—ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর পারস্পরিক শান্তির জন্য গৃহীত ভুলে যাওয়ার নীতি। অপরাধে জড়িত বহু ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়; স্কুল–কলেজেও ফ্রাঙ্কোর নির্যাতন, কারাগার, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, নিখোঁজ মানুষ—এসব নিয়ে খুব কমই পড়ানো হয়েছে। ফলস্বরূপ, এক প্রজন্ম জানেই না কতটা নির্মম ছিল স্বৈরশাসনের যুগ।
El País–এর লেখক সাস্ত্রে স্বীকার করেন—“আমরা স্কুলে খুব কম শিখেছি, কিন্তু জানার দায়িত্ব আমাদেরই ছিল। একটু খোঁজ নিলেই জানা যেত বয়োজ্যেষ্ঠদের গল্প—দমন, নির্যাতন, ভয় আর ক্রোধের ইতিহাস।”

‘ভুলে যাওয়ার’ ডাক—নাকি সতর্কতার কারণ?

আরেক বিশ্লেষক সের্হিও দেল মোলিনো বলছেন, “ফ্রাঙ্কোকে ঘিরে নীরবতা ছিল—এ দাবি পুরোপুরি সত্য নয়। বই, গবেষণা, ডকুমেন্টারি, স্মৃতিস্তম্ভ—সবই স্পেনে আছে।” বরং সমস্যাটি হলো—রাজনীতির বিতর্কে ফ্রাঙ্কোর নাম ক্রমাগত তোলা হচ্ছে, ফলে তা তরুণদের কাছে “বিদ্রোহের প্রতীক” হয়ে উঠছে। তার মতে, “সম্ভবত এখন সময় এসেছে ফ্রাঙ্কোকে বাদ দিয়ে সামনে এগোনোর। নামটি উচ্চারণ বন্ধ করলে হয়তো মতাদর্শটিও নিভে যাবে।”

La Vanguardia–র সম্পাদকীয় বলছে—আজকের স্পেন সেই পেছানো দেশ নয়, যেখানে “যা নিষিদ্ধ নয়, তা বাধ্যতামূলক”—এমন ছিল স্বৈরশাসনের সময়কার কৌতুক। গণতন্ত্র স্পেনে এনেছে সম্পূর্ণ বদল—স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রেই এখন দেশটি আধুনিক ইউরোপের সমতুল্য। ইউরোজোনের চেয়েও দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্পেনকে ভবিষ্যতের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করছে।

পঞ্চাশ বছর পর, প্রশ্নটি এখনো তীক্ষ্ণ: স্পেন কি অতীতকে অতিক্রম করতে পারবে, নাকি ফ্রাঙ্কোর ছায়া নতুন প্রজন্মকে আবারও বিভ্রান্ত করছে?

#Francoism #SpainPolitics #Vox #EuropeanRight #Democracy #Authoritarianism #Sarakhon #GlobalAnalysis

জনপ্রিয় সংবাদ

নাইজেরিয়ায় খরা মৌসুমের চাষাবাদ ধীরগতি: ধান–মকাই–গমের দামের পতনে কৃষকের অনাগ্রহ

স্পেনে ফ্রাঙ্কোর মতাদর্শের ‘পুনর্জাগরণ’? ৫০ বছর পরও কর্তৃত্ববাদী অতীতের ছায়া

০১:২১:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

স্পেনের স্বৈরশাসক জেনারেলিসিমো ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা গেছেন ১৯৭৫ সালে। ৩৬ বছরের লৌহশাসনের পর তার মৃত্যুই দেশটিতে গণতন্ত্রের পথ খুলে দেয়। কিন্তু পাঁচ দশক পরে স্পেনে আবারও মাথা তুলছে ফ্রাঙ্কোবাদী চিন্তা—যা অনেকের জন্য বিস্ময় এবং উদ্বেগের কারণ। El Diario–র বিশ্লেষক আনা লোপেস লিখেছেন, “যে মতাদর্শ অতীতে দমন–পীড়ন, হত্যা ও প্রজন্মকে দাসত্বে রেখেছিল, তা স্বাভাবিক নিয়মে বিলীন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।”

তরুণদের মধ্যে বিভ্রান্তি, ডানপন্থার উত্থান

সাম্প্রতিক জরিপ বলছে—১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের প্রায় এক–পঞ্চমাংশ মনে করে ফ্রাঙ্কোর শাসন ছিল “ভালো”, আর এক–চতুর্থাংশ মনে করে “কখনো কখনো গণতন্ত্রের চেয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনই উত্তম।” ডানপন্থী অভিবাসনবিরোধী দল ভক্স–এর জনপ্রিয়তা এই ভাবনার প্রতিফলন।
এমন অবস্থার জন্য ইতিহাসবিদরা দায়ী করছেন স্পেনের তথাকথিত “Pact of Forgetting”–কে—ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর পারস্পরিক শান্তির জন্য গৃহীত ভুলে যাওয়ার নীতি। অপরাধে জড়িত বহু ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়; স্কুল–কলেজেও ফ্রাঙ্কোর নির্যাতন, কারাগার, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, নিখোঁজ মানুষ—এসব নিয়ে খুব কমই পড়ানো হয়েছে। ফলস্বরূপ, এক প্রজন্ম জানেই না কতটা নির্মম ছিল স্বৈরশাসনের যুগ।
El País–এর লেখক সাস্ত্রে স্বীকার করেন—“আমরা স্কুলে খুব কম শিখেছি, কিন্তু জানার দায়িত্ব আমাদেরই ছিল। একটু খোঁজ নিলেই জানা যেত বয়োজ্যেষ্ঠদের গল্প—দমন, নির্যাতন, ভয় আর ক্রোধের ইতিহাস।”

‘ভুলে যাওয়ার’ ডাক—নাকি সতর্কতার কারণ?

আরেক বিশ্লেষক সের্হিও দেল মোলিনো বলছেন, “ফ্রাঙ্কোকে ঘিরে নীরবতা ছিল—এ দাবি পুরোপুরি সত্য নয়। বই, গবেষণা, ডকুমেন্টারি, স্মৃতিস্তম্ভ—সবই স্পেনে আছে।” বরং সমস্যাটি হলো—রাজনীতির বিতর্কে ফ্রাঙ্কোর নাম ক্রমাগত তোলা হচ্ছে, ফলে তা তরুণদের কাছে “বিদ্রোহের প্রতীক” হয়ে উঠছে। তার মতে, “সম্ভবত এখন সময় এসেছে ফ্রাঙ্কোকে বাদ দিয়ে সামনে এগোনোর। নামটি উচ্চারণ বন্ধ করলে হয়তো মতাদর্শটিও নিভে যাবে।”

La Vanguardia–র সম্পাদকীয় বলছে—আজকের স্পেন সেই পেছানো দেশ নয়, যেখানে “যা নিষিদ্ধ নয়, তা বাধ্যতামূলক”—এমন ছিল স্বৈরশাসনের সময়কার কৌতুক। গণতন্ত্র স্পেনে এনেছে সম্পূর্ণ বদল—স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রেই এখন দেশটি আধুনিক ইউরোপের সমতুল্য। ইউরোজোনের চেয়েও দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্পেনকে ভবিষ্যতের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করছে।

পঞ্চাশ বছর পর, প্রশ্নটি এখনো তীক্ষ্ণ: স্পেন কি অতীতকে অতিক্রম করতে পারবে, নাকি ফ্রাঙ্কোর ছায়া নতুন প্রজন্মকে আবারও বিভ্রান্ত করছে?

#Francoism #SpainPolitics #Vox #EuropeanRight #Democracy #Authoritarianism #Sarakhon #GlobalAnalysis