০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭২) আমেরিকায় এইচ–১বি ভিসায় বাড়ছে নজরদারি, ভারতীয়দের সময় পরিবর্তন শুরু প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩৯) ডি’অ্যাঞ্জেলো: নিও-সোলের শেষ শুদ্ধ বাতিঘর ও কুয়েস্টলাভের হৃদয়ে রেখে যাওয়া গভীর ধ্বনি ইমরান খানকে আদিয়ালা কারাগার থেকে সরানোর ভাবনা ভারতের জিডিপি নিয়ে এডিবির নতুন আশাবাদ: প্রবৃদ্ধি বাড়ল ৭.২ শতাংশে বিলাওয়াল বললেন, দল নিষিদ্ধে সমর্থন নয়, আচার-আচরণেই বদল আনুক কে-পি-র রাজনৈতিক শক্তি থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষ: বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি রয়টার্স এর প্রতিবেদন: ‘ নোবেল-জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণে অপমানিত হয়েছি- নির্বাচন শেষেই পদত্যাগ করবো ’ – রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ইউএই ফেডারেল কর্মীদের জন্য এআই-চালিত ‘ইনজাজাতি’ স্মার্ট সিস্টেম চালু

ডি’অ্যাঞ্জেলো: নিও-সোলের শেষ শুদ্ধ বাতিঘর ও কুয়েস্টলাভের হৃদয়ে রেখে যাওয়া গভীর ধ্বনি

শেষ ফোনকলের ভোর: লড়াইয়ের উপসংহার

১৪ অক্টোবরের সকালটি কুয়েস্টলাভের জীবনে যেন এক অদৃশ্য ভার নিয়ে হাজির হয়েছিল। ফোনের রিং তাকে ঘুম থেকে তুলতেই তিনিবুঝেছিলেন—ভালো খবর নয়। বহুদিন ধরে ডি’অ্যাঞ্জেলো অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে কঠিন লড়াই করছিলেন। স্লোন কেটারিং–এ তাদের শেষ কথোপকথনে ডি জানিয়েছিলেন—
“বেঁচে আছি ভাই… কিন্তু আজটা সত্যিই কঠিন ছিল।”
এই বাক্যটি ছিল গভীর বেদনার পাশাপাশি জীবনে আঁকড়ে থাকার শেষ চেষ্টা।
তবু সেই মৃত্যুসংবাদ তাকে ভেঙে দিল। কারণ, আশার মৃত্যু হয় না—কিন্তু মানুষ চলে যায়।

এক উজ্জ্বল স্মৃতির খোঁজে: হাসির আলোয় ফিরে দেখা ১৯৯৭

দুঃসংবাদের ভার সামলে রাখতে কুয়েস্টলাভ ফিরে যান সেই এক স্মৃতিতে—যা আজও তাকে আলোয়  নিয়ে যায়

১৯৯৭ সালের মে; ইলেকট্রিক লেডি স্টুডিও।

Questlove Pays Tribute to Friend and Collaborator D'Angelo

‘ভুডু’ অ্যালবামের পরিশ্রম আর চাপের মাঝে হঠাৎ মাইকেল জ্যাকসনের ‘মরফিন’ গান শুনে এমন হাসি ছুটেছিল—যেন জীবন আবার নতুন করে শ্বাস নিচ্ছে।

সেই হাসিই ছিল ডি’অ্যাঞ্জেলোর আসল শক্তি—গাম্ভীর্যের আড়ালে স্নিগ্ধ, প্রাণবন্ত একটি আত্মা।

প্রথম দেখার ভুল এবং প্রতিভার গোপন বিস্ফোরণ

১৯৯৩ সালে ডি স্টুডিওতে ঢুকেছিলেন নীরবে; ধুলোমাখা টিম্বারল্যান্ড জুতো দেখে কুয়েস্টলাভ ভেবেছিলেন—এই ছেলেই নাকি ভবিষ্যৎ?

কিন্তু ভুলের সৌন্দর্য আছে।

দুই বছর পর ‘ব্রাউন সুগার’-এর প্রথম কয়েক সেকেন্ডেই তিনি বুঝেছিলেন—এমন সুর আগে কখনো শোনেননি।

ডি ছিলেন জন্মগত শিল্পী—যার মধ্যে ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ একইসঙ্গে বাজত।

মারভিন গে, ভয়, এবং দুই হৃদয়ের এক গভীর ছায়া

মারভিন গে–এর মৃত্যুর ঘটনা ছিল দুজনের জীবনেই এক অন্ধকার অধ্যায়।

কঠোর বাবার শাসন, সম্মান ও ভয়ের ছায়া তাদের শিল্পীসত্তায় এক অজানা মিল এনে দিয়েছিল।

Inside the tragedy that silenced soul legend Marvin Gaye - Los Angeles Times

১৯৯৬ সালের প্রথম বড় আড্ডায় ডি স্বীকার করেছিলেন—
‘গ্রেপভাইন’-এর ইন্ট্রো তাকে ভয় দেখায়।
এই স্বীকারোক্তি কুয়েস্টলাভকে আরও কাছাকাছি টেনেছিল।
ভয়ের ভেতরেও ছিল এক গভীর সত্য—মানুষ হওয়ার সত্য।

‘ভুডু’—এক অ্যালবাম, এক বিপ্লব, এক নবজাগরণ

২০০০ সালের ‘ভুডু’ শুধু একটি অ্যালবাম নয়—এটি কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতের ভাষা পাল্টে দেওয়া এক শক্তি।

এর টুর ছিল যেন প্রিন্সের উত্তরসূরি হয়ে ওঠা নতুন আত্মা।

মিলওয়াকি সাউন্ডচেকে হ্যালি বেরিকে দেখে ডি যে উদ্দাম ১৮ মিনিটের ‘ডেভিল’স পাই’ পরিবেশন করেছিলেন—
তার প্যান্ট ছিঁড়ে স্কার্ট হয়ে গেলেও তিনি থামেননি।
ডি ছিলেন সম্পূর্ণ আগুন—শিল্পের জন্য নিজেকে নিঃশেষ করা এক আলো।

স্টুডিওর ভিনটেজ নীরবতা: সুরের প্রতি ডির অবিচল শপথ

‘ভুডু’ আর ‘ব্ল্যাক মেসায়া’-র মাঝে ১৪ বছর কেটে গেলেও ডির স্টুডিওতে সময়ের কোনো প্রভাব পড়েনি।

পুরনো ভিএইচএস, ফ্লপি ডিস্ক, ১৯৯৭ সালের যন্ত্র—
কুয়েস্টলাভ জানতে চাইলে ডি শুধু বলেছিলেন—
“ভিনটেজই আমাদের সত্য।”

Michael Eugene Archer "D'Angelo" Dies At 51 | AIT LIVE

এই বাক্যটি জানিয়ে দেয়—সুরের সন্ধানে ডি’অ্যাঞ্জেলো কতখানি নির্মোহ ও নিবেদিত ছিলেন।

শেষ দিন: নীরবতার ভেতর দুই বন্ধুর গভীর আলাপ

শেষ সপ্তাহগুলোতে ডি এবং কুয়েস্টলাভের সম্পর্ক এক অদৃশ্য উষ্ণতায় ভরে উঠেছিল।

হাসপাতালের ঘরে বাদ্যযন্ত্র নেই, নেই স্টুডিওর দেয়াল—
শুধু দুই বন্ধু, তিন দশকের সম্পর্ক, এবং বহুদিনের অপ্রকাশিত কথা।
ধূপ, স্ফটিক, মোম, ধ্যান, চায়ের উষ্ণতায় ঘর ভরে ছিল এক আশ্চর্য শান্তিতে।

হঠাৎ হাসপাতালের বিপ–ব্লার্প শব্দ তাদের মনে করিয়ে দিল ‘মরফিন’-এর সেই ব্রিজ অংশ।

দুজন একসঙ্গে তাকিয়ে হাসলেন—
“আবার সেই ব্রিজ গাইতে যাচ্ছি না তো?”

মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও হাসতে পারা—
এই একটুকুই প্রমাণ—বন্ধুত্ব মৃত্যুকে হার মানায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭২)

ডি’অ্যাঞ্জেলো: নিও-সোলের শেষ শুদ্ধ বাতিঘর ও কুয়েস্টলাভের হৃদয়ে রেখে যাওয়া গভীর ধ্বনি

০১:০০:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

শেষ ফোনকলের ভোর: লড়াইয়ের উপসংহার

১৪ অক্টোবরের সকালটি কুয়েস্টলাভের জীবনে যেন এক অদৃশ্য ভার নিয়ে হাজির হয়েছিল। ফোনের রিং তাকে ঘুম থেকে তুলতেই তিনিবুঝেছিলেন—ভালো খবর নয়। বহুদিন ধরে ডি’অ্যাঞ্জেলো অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে কঠিন লড়াই করছিলেন। স্লোন কেটারিং–এ তাদের শেষ কথোপকথনে ডি জানিয়েছিলেন—
“বেঁচে আছি ভাই… কিন্তু আজটা সত্যিই কঠিন ছিল।”
এই বাক্যটি ছিল গভীর বেদনার পাশাপাশি জীবনে আঁকড়ে থাকার শেষ চেষ্টা।
তবু সেই মৃত্যুসংবাদ তাকে ভেঙে দিল। কারণ, আশার মৃত্যু হয় না—কিন্তু মানুষ চলে যায়।

এক উজ্জ্বল স্মৃতির খোঁজে: হাসির আলোয় ফিরে দেখা ১৯৯৭

দুঃসংবাদের ভার সামলে রাখতে কুয়েস্টলাভ ফিরে যান সেই এক স্মৃতিতে—যা আজও তাকে আলোয়  নিয়ে যায়

১৯৯৭ সালের মে; ইলেকট্রিক লেডি স্টুডিও।

Questlove Pays Tribute to Friend and Collaborator D'Angelo

‘ভুডু’ অ্যালবামের পরিশ্রম আর চাপের মাঝে হঠাৎ মাইকেল জ্যাকসনের ‘মরফিন’ গান শুনে এমন হাসি ছুটেছিল—যেন জীবন আবার নতুন করে শ্বাস নিচ্ছে।

সেই হাসিই ছিল ডি’অ্যাঞ্জেলোর আসল শক্তি—গাম্ভীর্যের আড়ালে স্নিগ্ধ, প্রাণবন্ত একটি আত্মা।

প্রথম দেখার ভুল এবং প্রতিভার গোপন বিস্ফোরণ

১৯৯৩ সালে ডি স্টুডিওতে ঢুকেছিলেন নীরবে; ধুলোমাখা টিম্বারল্যান্ড জুতো দেখে কুয়েস্টলাভ ভেবেছিলেন—এই ছেলেই নাকি ভবিষ্যৎ?

কিন্তু ভুলের সৌন্দর্য আছে।

দুই বছর পর ‘ব্রাউন সুগার’-এর প্রথম কয়েক সেকেন্ডেই তিনি বুঝেছিলেন—এমন সুর আগে কখনো শোনেননি।

ডি ছিলেন জন্মগত শিল্পী—যার মধ্যে ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ একইসঙ্গে বাজত।

মারভিন গে, ভয়, এবং দুই হৃদয়ের এক গভীর ছায়া

মারভিন গে–এর মৃত্যুর ঘটনা ছিল দুজনের জীবনেই এক অন্ধকার অধ্যায়।

কঠোর বাবার শাসন, সম্মান ও ভয়ের ছায়া তাদের শিল্পীসত্তায় এক অজানা মিল এনে দিয়েছিল।

Inside the tragedy that silenced soul legend Marvin Gaye - Los Angeles Times

১৯৯৬ সালের প্রথম বড় আড্ডায় ডি স্বীকার করেছিলেন—
‘গ্রেপভাইন’-এর ইন্ট্রো তাকে ভয় দেখায়।
এই স্বীকারোক্তি কুয়েস্টলাভকে আরও কাছাকাছি টেনেছিল।
ভয়ের ভেতরেও ছিল এক গভীর সত্য—মানুষ হওয়ার সত্য।

‘ভুডু’—এক অ্যালবাম, এক বিপ্লব, এক নবজাগরণ

২০০০ সালের ‘ভুডু’ শুধু একটি অ্যালবাম নয়—এটি কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতের ভাষা পাল্টে দেওয়া এক শক্তি।

এর টুর ছিল যেন প্রিন্সের উত্তরসূরি হয়ে ওঠা নতুন আত্মা।

মিলওয়াকি সাউন্ডচেকে হ্যালি বেরিকে দেখে ডি যে উদ্দাম ১৮ মিনিটের ‘ডেভিল’স পাই’ পরিবেশন করেছিলেন—
তার প্যান্ট ছিঁড়ে স্কার্ট হয়ে গেলেও তিনি থামেননি।
ডি ছিলেন সম্পূর্ণ আগুন—শিল্পের জন্য নিজেকে নিঃশেষ করা এক আলো।

স্টুডিওর ভিনটেজ নীরবতা: সুরের প্রতি ডির অবিচল শপথ

‘ভুডু’ আর ‘ব্ল্যাক মেসায়া’-র মাঝে ১৪ বছর কেটে গেলেও ডির স্টুডিওতে সময়ের কোনো প্রভাব পড়েনি।

পুরনো ভিএইচএস, ফ্লপি ডিস্ক, ১৯৯৭ সালের যন্ত্র—
কুয়েস্টলাভ জানতে চাইলে ডি শুধু বলেছিলেন—
“ভিনটেজই আমাদের সত্য।”

Michael Eugene Archer "D'Angelo" Dies At 51 | AIT LIVE

এই বাক্যটি জানিয়ে দেয়—সুরের সন্ধানে ডি’অ্যাঞ্জেলো কতখানি নির্মোহ ও নিবেদিত ছিলেন।

শেষ দিন: নীরবতার ভেতর দুই বন্ধুর গভীর আলাপ

শেষ সপ্তাহগুলোতে ডি এবং কুয়েস্টলাভের সম্পর্ক এক অদৃশ্য উষ্ণতায় ভরে উঠেছিল।

হাসপাতালের ঘরে বাদ্যযন্ত্র নেই, নেই স্টুডিওর দেয়াল—
শুধু দুই বন্ধু, তিন দশকের সম্পর্ক, এবং বহুদিনের অপ্রকাশিত কথা।
ধূপ, স্ফটিক, মোম, ধ্যান, চায়ের উষ্ণতায় ঘর ভরে ছিল এক আশ্চর্য শান্তিতে।

হঠাৎ হাসপাতালের বিপ–ব্লার্প শব্দ তাদের মনে করিয়ে দিল ‘মরফিন’-এর সেই ব্রিজ অংশ।

দুজন একসঙ্গে তাকিয়ে হাসলেন—
“আবার সেই ব্রিজ গাইতে যাচ্ছি না তো?”

মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও হাসতে পারা—
এই একটুকুই প্রমাণ—বন্ধুত্ব মৃত্যুকে হার মানায়।