০৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
কাম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, আধা মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রতিটি উপজেলা-থানায় ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের  বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি ভাতার দাবিতে আন্দোলন: সচিবালয় থেকে ৪ জন পুলিশি হেফাজতে পদত্যাগী আসিফ–মাহফুজের সম্পদ–ঘোষণা প্রকাশের চাপ বাড়ছে রাজশাহীর গভীর নলকূপে পড়ে নিখোঁজ দুই বছরের সাজিদ: উদ্ধার অভিযান জুড়ে টানটান উৎকণ্ঠা ৪৬তম বিসিএসের ভাইভা ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ পাঁচ দিনের রিমান্ডে খুলনায় বাসায় সৌদি ফেরত নারীর রহস্যজনক মৃত্যু প্রার্থীদের প্রচারণা সামগ্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ ইসির

রাজশাহীর গভীর নলকূপে পড়ে নিখোঁজ দুই বছরের সাজিদ: উদ্ধার অভিযান জুড়ে টানটান উৎকণ্ঠা

রাজশাহীর তানোরে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে দুই বছরের শিশু সাজিদ গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। তাকে জীবিত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা দিন-রাত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্ধার অভিযান চলছে দিন-রাত

তানোর উপজেলার কয়েলহাট গ্রামে বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের দল ইতোমধ্যে ৪২ ফুট পর্যন্ত খনন করেছে, কিন্তু সাজিদের খোঁজ মিলছে না। উদ্ধারকর্মীদের ধারণা, শিশুটি আরও গভীরে সরে যেতে পারে।

তারা জানান, পাইপে একটি বিশেষ ক্যামেরা নামানো হলেও এটি ৩৫ ফুটের কাছাকাছি আটকে যায় এবং শিশুটির উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি। বুধবার দুপুর থেকে পাইপে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে শিশু নিখোঁজ

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, গ্রামের মানুষ প্রথমে নিজেরাই উদ্ধার চেষ্টা করায় পাইপে মাটি নেমে গিয়ে অভিযানে ধীরগতির বাধা তৈরি হয়। তিনি জানান, “৪০ থেকে ৪২ ফুট খুঁড়েও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রয়োজন হলে আরও গভীর পর্যন্ত খনন করা হবে এবং প্রয়োজনে বিকল্প পদ্ধতিও নেওয়া হবে।”

টানা অভিযানে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও পুলিশ

তানোর থানার ওসি শহিদুজ্জামান জানান, তিনটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন একযোগে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, “অভিযান বন্ধ হয়নি, খনন চলছে অব্যাহতভাবে।”

মায়ের চোখের সামনে হারিয়ে গেল সন্তান

বুধবার দুপুর ১টার দিকে সাজিদ তার মা রুনা খাতুনের সঙ্গে হাঁটছিল। রুনা বলেন, “আমি ওর হাত ধরে ছিলাম, আর ছোট শিশুটিকে কোলে নিয়েছিলাম। হঠাৎ ও ডাক দিল, ‘মা!’ ঘুরে তাকাতেই দেখি সে নেই। কিছুক্ষণ পর পাইপের ভেতর থেকে তার ডাক শুনতে পাই।”

যে গর্তে শিশু পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে সেখানকার ছবি। পাশে মাটি খনন করা হচ্ছে।

নলকূপের মুখে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল, ফলে কেউ বিপদের আশঙ্কা করেনি। এটি বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিএমডিএ’র) একটি পরীক্ষামূলক গভীর নলকূপ, যা বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় খোলা ছিল।

গ্রামবাসীরা দ্রুত ছুটে এলেও শিশুটি গভীরে সরে যাওয়ায় তারা কিছুই করতে পারেনি। বিকেল ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিস এসে পূর্ণাঙ্গ উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

ঢাকা থেকে ছুটে এলেন সাজিদের বাবা

সাজিদের বাবা মোহাম্মদ রাকিব ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। খবর পেয়ে গভীর রাতে বাড়িতে পৌঁছান।

তিনি বলেন, “আমি এসে দেখি উদ্ধার চেষ্টা চলছে। এখনো ছেলেকে দেখিনি। সে বেঁচে আছে কিনা জানি না। আল্লাহ যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে।”

অপেক্ষার প্রহর, বেড়েই চলেছে উদ্বেগ

কয়েলহাট গ্রামের বহু মানুষ রাতজেগে ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান করে। দীর্ঘ সময় ধরে পাইপের ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পাওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

এলাকাটি পানির স্বল্পতার কারণে ১৩০–১৪০ ফুট গভীরে পানি পাওয়া যায়। স্থানীয়দের ধারণা, শিশুটি আরও নিচে পড়ে যেতে পারে।

পরিত্যক্ত নলকূপটি এতদিন অরক্ষিত অবস্থায় থাকার জন্য গ্রামবাসী মালিকপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।

এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হয়ে কেউ প্রার্থনা করছেন, কেউবা নিঃশব্দে দেখছেন খননযন্ত্রের নিরন্তর মাটি কাটার দৃশ্য।

 

#SajidRescue #Rajshahi #BangladeshNews #ChildRescueOperation

জনপ্রিয় সংবাদ

কাম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, আধা মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত

রাজশাহীর গভীর নলকূপে পড়ে নিখোঁজ দুই বছরের সাজিদ: উদ্ধার অভিযান জুড়ে টানটান উৎকণ্ঠা

০৬:৩৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজশাহীর তানোরে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে দুই বছরের শিশু সাজিদ গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। তাকে জীবিত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা দিন-রাত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্ধার অভিযান চলছে দিন-রাত

তানোর উপজেলার কয়েলহাট গ্রামে বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের দল ইতোমধ্যে ৪২ ফুট পর্যন্ত খনন করেছে, কিন্তু সাজিদের খোঁজ মিলছে না। উদ্ধারকর্মীদের ধারণা, শিশুটি আরও গভীরে সরে যেতে পারে।

তারা জানান, পাইপে একটি বিশেষ ক্যামেরা নামানো হলেও এটি ৩৫ ফুটের কাছাকাছি আটকে যায় এবং শিশুটির উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি। বুধবার দুপুর থেকে পাইপে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে শিশু নিখোঁজ

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, গ্রামের মানুষ প্রথমে নিজেরাই উদ্ধার চেষ্টা করায় পাইপে মাটি নেমে গিয়ে অভিযানে ধীরগতির বাধা তৈরি হয়। তিনি জানান, “৪০ থেকে ৪২ ফুট খুঁড়েও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রয়োজন হলে আরও গভীর পর্যন্ত খনন করা হবে এবং প্রয়োজনে বিকল্প পদ্ধতিও নেওয়া হবে।”

টানা অভিযানে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও পুলিশ

তানোর থানার ওসি শহিদুজ্জামান জানান, তিনটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন একযোগে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, “অভিযান বন্ধ হয়নি, খনন চলছে অব্যাহতভাবে।”

মায়ের চোখের সামনে হারিয়ে গেল সন্তান

বুধবার দুপুর ১টার দিকে সাজিদ তার মা রুনা খাতুনের সঙ্গে হাঁটছিল। রুনা বলেন, “আমি ওর হাত ধরে ছিলাম, আর ছোট শিশুটিকে কোলে নিয়েছিলাম। হঠাৎ ও ডাক দিল, ‘মা!’ ঘুরে তাকাতেই দেখি সে নেই। কিছুক্ষণ পর পাইপের ভেতর থেকে তার ডাক শুনতে পাই।”

যে গর্তে শিশু পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে সেখানকার ছবি। পাশে মাটি খনন করা হচ্ছে।

নলকূপের মুখে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল, ফলে কেউ বিপদের আশঙ্কা করেনি। এটি বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিএমডিএ’র) একটি পরীক্ষামূলক গভীর নলকূপ, যা বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় খোলা ছিল।

গ্রামবাসীরা দ্রুত ছুটে এলেও শিশুটি গভীরে সরে যাওয়ায় তারা কিছুই করতে পারেনি। বিকেল ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিস এসে পূর্ণাঙ্গ উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

ঢাকা থেকে ছুটে এলেন সাজিদের বাবা

সাজিদের বাবা মোহাম্মদ রাকিব ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। খবর পেয়ে গভীর রাতে বাড়িতে পৌঁছান।

তিনি বলেন, “আমি এসে দেখি উদ্ধার চেষ্টা চলছে। এখনো ছেলেকে দেখিনি। সে বেঁচে আছে কিনা জানি না। আল্লাহ যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে।”

অপেক্ষার প্রহর, বেড়েই চলেছে উদ্বেগ

কয়েলহাট গ্রামের বহু মানুষ রাতজেগে ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান করে। দীর্ঘ সময় ধরে পাইপের ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পাওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

এলাকাটি পানির স্বল্পতার কারণে ১৩০–১৪০ ফুট গভীরে পানি পাওয়া যায়। স্থানীয়দের ধারণা, শিশুটি আরও নিচে পড়ে যেতে পারে।

পরিত্যক্ত নলকূপটি এতদিন অরক্ষিত অবস্থায় থাকার জন্য গ্রামবাসী মালিকপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।

এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হয়ে কেউ প্রার্থনা করছেন, কেউবা নিঃশব্দে দেখছেন খননযন্ত্রের নিরন্তর মাটি কাটার দৃশ্য।

 

#SajidRescue #Rajshahi #BangladeshNews #ChildRescueOperation