জুলাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ বৈজ্ঞানিকভাবে উত্তোলন ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ শুরু হওয়া বাংলাদেশে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও পরিবারগুলোর সত্য জানার অধিকারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টাইডবল-বিন্জ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ফরেনসিক মানদণ্ড অনুসরণ করে এত বড় পরিসরে মরদেহ উদ্ধার, বিশ্লেষণ ও পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ শুরু হলো। জেনেভা থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি জানান, এটি নিহতদের পরিবারকে ন্যায়বিচার ও সত্যের সন্ধান দিতে সহায়তা করবে।
উত্তোলন ও ফরেনসিক পরীক্ষার গুরুত্ব
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) সাময়িক মরচুয়ারি স্থাপন করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মরদেহগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করছে। কয়েক দিনব্যাপী এই প্রক্রিয়ায় ডিএনএ বিশ্লেষণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা অজ্ঞাত মরদেহের বৈজ্ঞানিক শনাক্তকরণকে নিশ্চিত করবে।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের পূর্ববর্তী সহযোগিতা
২০২৫ সালের জুলাইয়ে ফরেনসিক চিকিৎসক টাইডবল-বিন্জ ঢাকায় এসে সিআইডি ও মেডিকো-লিগ্যাল সেবাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফরেনসিক তদন্ত বিষয়ে কারিগরি পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শই ২০২৪ সালের ঘটনার শিকার নিহতদের বৃহৎ পরিসরে উদ্ধার, নথিভুক্তকরণ ও শনাক্তকরণ পরিকল্পনায় মূল ভূমিকা রাখে।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে ‘মিনেসোটা প্রোটোকল’, যা সম্ভাব্য বেআইনি মৃত্যুর তদন্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড।
চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও উত্তোলন অভিযান
ওএইচসিএইচআর-এর আমন্ত্রণে ১ ডিসেম্বর বিশেষ প্রতিবেদকের আহ্বানে গঠিত ফরেনসিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপের একজন সদস্য বাংলাদেশে এসে উত্তোলন কাজের প্রস্তুতিকে সহায়তা করেন। এরপর ৭ ডিসেম্বর মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়।
নিহতদের পরিচয় ও দাফনের প্রেক্ষাপট
মরদেহগুলো ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেগুলো ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে মুসলিম দাতব্য সংস্থা অঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করেছিল। দাফনের সময় মরদেহের প্রতি সম্মান বজায় রাখার চেষ্টা করা হলেও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ফরেনসিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ
টাইডবল-বিন্জ বলেন, এই তদন্ত কেবল পরিবারগুলোকে সত্য ও ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করবে না; বরং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নিজস্ব ফরেনসিক ও মেডিকো-লিগ্যাল সক্ষমতা উন্নয়নের এক অনন্য সুযোগ পেয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ এই অগ্রগতি যেমন প্রয়োজন, তেমনি এর যোগ্যও।
#tags July_Uprising Accountability Bangladesh_UN Forensic_Investigation
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















