০৫:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নাইজেরিয়ায় অপহরণ আতঙ্ক ও নিরাপত্তা সংকট, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে টিনুবু সরকার চীনের ‘শাস্তির কূটনীতি’: আপত্তি করলেই বাণিজ্য, ভ্রমণ ও সংস্কৃতিতে চাপ ব্যাংক একীভূতকরণে উচ্ছ্বসিত ওয়াল স্ট্রিট, নতুন জোয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাত ইইউর বড় সিদ্ধান্ত: রাশিয়ার সম্পদ অনির্দিষ্টকালের জন্য জব্দ, ইউক্রেন ঋণে বাধা কাটল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বদলাচ্ছে পুলিশিং, বাড়বে গতি নাকি বাড়বে নজরদারি থাইল্যান্ড–কাম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত কি আগাম নির্বাচনে আনুটিনের পাল্লা ভারী করবে ইউক্রেন শান্তির পথে ইউরোপের বড় শত্রু রাশিয়া নয়, ট্রাম্পই চাকরি কমছে শহরে, গ্রামে ফিরছেন চীনের শ্রমিকরা—থেমে যাওয়া নগর জীবনের নতুন বাস্তবতা ভারতের ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন, চীনা পেশাজীবীদের জন্য প্রক্রিয়া সহজ ভূমিকম্পে কাঁপা জাপান: ভ্রমণে গেলে এখন যা জানা জরুরি

ব্রাজিলের ‘রোলিউডে’ নতুন স্বপ্ন: খরা, সংকট আর প্রযুক্তির ধাক্কায় বদলে যাচ্ছে সিনেমার শহর

ক্যাবাসেইরাস, ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বের সেই ধুলোমাখা পাহাড়ি জনপদ, যেখানে সুউচ্চ ‘রোলিউডে’ সাইনবোর্ড যেন দূর আমেরিকার হলিউডের স্বপ্নকে স্থানীয়ভাবে নতুন করে লিখে দিয়েছে। পাঁচ হাজারের মতো জনসংখ্যার এই নিস্তব্ধ শহর গত শতাব্দীর শুরু থেকে হয়ে উঠেছে ব্রাজিলের নিজস্ব চলচ্চিত্র রাজধানী। প্রায় পঞ্চাশেরও বেশি সিনেমা ও ধারাবাহিকের দৃশ্যধারণ হয়েছে এখানে। খরা আর নীল আকাশ মিলিয়ে এই শহর যেন পরিচালক-প্রযোজকদের প্রাকৃতিক স্টুডিও।

অভিনেতারা অপেশাদার, কিন্তু অভিনয়ে পটু
একটা সাধারণ অডিশন রুম। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দাড়িওয়ালা রাখাল, রান্নাঘরের নীরব রাঁধুনি কিংবা সত্তরোর্ধ্ব চঞ্চল দাদি—সকলেই নিজের মতো করে পর্দা মাতিয়েছেন বহুবার। মারিয়া এডিতে সান্তোস ফ্রাঁসা, যার প্রথম অভিনয় দুই দশকেরও বেশি আগে, বলছিলেন—হাসতে বললে হাসব, কাঁদতে বললে কাঁদব। ক্যামেরা সামনে এলেই তাদের ভেতরের শিল্পী যেন জেগে ওঠে।

পরিচালক নিবালদো রদ্রিগেস বলছিলেন, এবার শুধু দৃশ্যধারণ নয়, স্থানীয় শিল্পীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। লক্ষ্য একটাই—শহরটিকে কেবল লোকেশন নয়, প্রতিভার ঘর করে তোলা।

খরার অভিশাপই শহরের আশীর্বাদ
বছরের পর বছর বৃষ্টি না হওয়ায় বাসিন্দাদের জীবন কঠিন। কিন্তু সেই একই খরা চলচ্চিত্রের জন্য নিখুঁত পরিবেশ তৈরি করেছে। নীল আকাশ, রুক্ষ পাহাড় আর অনাবাদি ভূমি ব্রাজিলের নানাদিকের প্রযোজকদের চোখে অমূল্য সম্পদ।

শহরের প্রবেশমুখে বড় ক্ল্যাপবোর্ড, তারার নকশা করা পথ—সবকিছুই মনে করিয়ে দেয় আসল হলিউডকে। কসাইখানা থেকে পিৎজার দোকান—সবখানে ‘রোলিউডে’ নামের ছোঁয়া।

সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সবকিছুই বদলে দিয়েছে সিনেমা
নীরব চরিত্রে অভিনয় করলেও এক দিন প্রায় ত্রিশ ডলার আয়। সংলাপ থাকলে তিনশ ডলার—যা ব্রাজিলের ন্যূনতম মাসিক আয়কে ছাড়িয়ে যায়। বাড়ি, খামার, গবাদিপশু—সবকিছুই ভাড়া দিয়ে আয় গুনছে লোকজন।

তবে উন্নতির পথ মসৃণ নয়। পানির অভাব এখন বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এখন অদ্ভুত ল্যান্ডস্কেপও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়। ফলে নতুন প্রযোজনা আগের মতো বেশি আসছে না।

সবচেয়ে জনপ্রিয় কমেডির সাম্প্রতিক সিক্যুয়েল শহরে না শুট করে রিও দে জেনেইরোর স্টুডিওতে করা হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের মন ভাঙা।

পর্যটনই এখন বড় ভরসা
তবু শহর ছাড়েনি নিজের পরিচয়। র‍্যাঞ্চার আমিলতোঁ দে ফারিয়াস কুনহা এখন অভিনয়ের পোশাক পরে পর্যটকদের স্বাগত জানান। তার বাড়ি আজ লজ। তিনি বলছেন—ছবি থেকে পাওয়া পোশাকই এখন রোজগারের হাতিয়ার।

পাথুরে পাহাড়ি পথ ধরে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখান জনপ্রিয় সিরিজের শুটিং স্পট। একসময় যেখানে ছাগল ছিল উপার্জনের ভরসা, আজ সেই জায়গার পাথরই এনে দিচ্ছে বেশি আয়। নতুন কক্ষ, সুইমিং পুল—সব মিলিয়ে তিনি নিজের লজ বড় করতে চাইছেন। পানি নিশ্চিত করতে খনন করেছেন গভীর নলকূপ। ঈশ্বর ভরসা—এ যেন কখনো শুকিয়ে না যায়।

শহরের ভবিষ্যৎ কোন পথে
রোলিউডের স্বপ্ন এখন দুই দিক থেকে চাপে—প্রাকৃতিক সংকট আর প্রযুক্তির অগ্রগতি। তবু এখানকার মানুষ অভিনয়, পর্যটন আর নিজেদের শিল্পীসত্তায় বাঁচতে চায়। খরার বুকে দাঁড়িয়ে তৈরি এই লোকাল হলিউডের গল্প তাই থেমে নেই—বরং বদলে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে।

#ব্রাজিল #রোলিউডে #ক্যাবাসেইরাস #সিনেমাশহর #চলচ্চিত্রসংস্কৃতি #জলবায়ুপরিবর্তন #পর্যটন #ব্রাজিলচলচ্চিত্র #স্থানীয়শিল্পী #সারাক্ষণ

জনপ্রিয় সংবাদ

নাইজেরিয়ায় অপহরণ আতঙ্ক ও নিরাপত্তা সংকট, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে টিনুবু সরকার

ব্রাজিলের ‘রোলিউডে’ নতুন স্বপ্ন: খরা, সংকট আর প্রযুক্তির ধাক্কায় বদলে যাচ্ছে সিনেমার শহর

০২:২৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ক্যাবাসেইরাস, ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বের সেই ধুলোমাখা পাহাড়ি জনপদ, যেখানে সুউচ্চ ‘রোলিউডে’ সাইনবোর্ড যেন দূর আমেরিকার হলিউডের স্বপ্নকে স্থানীয়ভাবে নতুন করে লিখে দিয়েছে। পাঁচ হাজারের মতো জনসংখ্যার এই নিস্তব্ধ শহর গত শতাব্দীর শুরু থেকে হয়ে উঠেছে ব্রাজিলের নিজস্ব চলচ্চিত্র রাজধানী। প্রায় পঞ্চাশেরও বেশি সিনেমা ও ধারাবাহিকের দৃশ্যধারণ হয়েছে এখানে। খরা আর নীল আকাশ মিলিয়ে এই শহর যেন পরিচালক-প্রযোজকদের প্রাকৃতিক স্টুডিও।

অভিনেতারা অপেশাদার, কিন্তু অভিনয়ে পটু
একটা সাধারণ অডিশন রুম। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দাড়িওয়ালা রাখাল, রান্নাঘরের নীরব রাঁধুনি কিংবা সত্তরোর্ধ্ব চঞ্চল দাদি—সকলেই নিজের মতো করে পর্দা মাতিয়েছেন বহুবার। মারিয়া এডিতে সান্তোস ফ্রাঁসা, যার প্রথম অভিনয় দুই দশকেরও বেশি আগে, বলছিলেন—হাসতে বললে হাসব, কাঁদতে বললে কাঁদব। ক্যামেরা সামনে এলেই তাদের ভেতরের শিল্পী যেন জেগে ওঠে।

পরিচালক নিবালদো রদ্রিগেস বলছিলেন, এবার শুধু দৃশ্যধারণ নয়, স্থানীয় শিল্পীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। লক্ষ্য একটাই—শহরটিকে কেবল লোকেশন নয়, প্রতিভার ঘর করে তোলা।

খরার অভিশাপই শহরের আশীর্বাদ
বছরের পর বছর বৃষ্টি না হওয়ায় বাসিন্দাদের জীবন কঠিন। কিন্তু সেই একই খরা চলচ্চিত্রের জন্য নিখুঁত পরিবেশ তৈরি করেছে। নীল আকাশ, রুক্ষ পাহাড় আর অনাবাদি ভূমি ব্রাজিলের নানাদিকের প্রযোজকদের চোখে অমূল্য সম্পদ।

শহরের প্রবেশমুখে বড় ক্ল্যাপবোর্ড, তারার নকশা করা পথ—সবকিছুই মনে করিয়ে দেয় আসল হলিউডকে। কসাইখানা থেকে পিৎজার দোকান—সবখানে ‘রোলিউডে’ নামের ছোঁয়া।

সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সবকিছুই বদলে দিয়েছে সিনেমা
নীরব চরিত্রে অভিনয় করলেও এক দিন প্রায় ত্রিশ ডলার আয়। সংলাপ থাকলে তিনশ ডলার—যা ব্রাজিলের ন্যূনতম মাসিক আয়কে ছাড়িয়ে যায়। বাড়ি, খামার, গবাদিপশু—সবকিছুই ভাড়া দিয়ে আয় গুনছে লোকজন।

তবে উন্নতির পথ মসৃণ নয়। পানির অভাব এখন বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এখন অদ্ভুত ল্যান্ডস্কেপও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়। ফলে নতুন প্রযোজনা আগের মতো বেশি আসছে না।

সবচেয়ে জনপ্রিয় কমেডির সাম্প্রতিক সিক্যুয়েল শহরে না শুট করে রিও দে জেনেইরোর স্টুডিওতে করা হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের মন ভাঙা।

পর্যটনই এখন বড় ভরসা
তবু শহর ছাড়েনি নিজের পরিচয়। র‍্যাঞ্চার আমিলতোঁ দে ফারিয়াস কুনহা এখন অভিনয়ের পোশাক পরে পর্যটকদের স্বাগত জানান। তার বাড়ি আজ লজ। তিনি বলছেন—ছবি থেকে পাওয়া পোশাকই এখন রোজগারের হাতিয়ার।

পাথুরে পাহাড়ি পথ ধরে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখান জনপ্রিয় সিরিজের শুটিং স্পট। একসময় যেখানে ছাগল ছিল উপার্জনের ভরসা, আজ সেই জায়গার পাথরই এনে দিচ্ছে বেশি আয়। নতুন কক্ষ, সুইমিং পুল—সব মিলিয়ে তিনি নিজের লজ বড় করতে চাইছেন। পানি নিশ্চিত করতে খনন করেছেন গভীর নলকূপ। ঈশ্বর ভরসা—এ যেন কখনো শুকিয়ে না যায়।

শহরের ভবিষ্যৎ কোন পথে
রোলিউডের স্বপ্ন এখন দুই দিক থেকে চাপে—প্রাকৃতিক সংকট আর প্রযুক্তির অগ্রগতি। তবু এখানকার মানুষ অভিনয়, পর্যটন আর নিজেদের শিল্পীসত্তায় বাঁচতে চায়। খরার বুকে দাঁড়িয়ে তৈরি এই লোকাল হলিউডের গল্প তাই থেমে নেই—বরং বদলে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে।

#ব্রাজিল #রোলিউডে #ক্যাবাসেইরাস #সিনেমাশহর #চলচ্চিত্রসংস্কৃতি #জলবায়ুপরিবর্তন #পর্যটন #ব্রাজিলচলচ্চিত্র #স্থানীয়শিল্পী #সারাক্ষণ