শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজেডিকে এত দিন প্রতিশোধ আর সহিংসতার চোখে দেখা হয়েছে। কিন্তু নতুন চলচ্চিত্র হ্যামনেট সেই পরিচিত ব্যাখ্যাকে নাড়িয়ে দিয়ে সামনে এনেছে এক ভিন্ন, কোমল সত্য। গল্পের কেন্দ্রে এবার শেক্সপিয়ারের স্ত্রী অ্যাগনেস এবং তাদের একাদশ বছর বয়সী পুত্র হ্যামনেটের মৃত্যুজনিত শোক। এই শোকই বদলে দিয়েছিল শেক্সপিয়ারের সৃষ্টির পথ, এমনটাই বলছে চলচ্চিত্রটি।
শোক থেকে সৃষ্টির পথে
পরিচালক ক্লোয়ে ঝাও জানাচ্ছেন, হ্যামলেটকে তিনি আগে প্রতিশোধের নাটক হিসেবেই ভাবতেন। কিন্তু ম্যাগি ও’ফ্যারেলের উপন্যাস হ্যামনেট অবলম্বনে ছবি বানাতে গিয়ে তাঁর উপলব্ধি পাল্টে যায়। এখানে সহিংসতার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ক্ষতি, ভালোবাসা আর ভাঙনের অনুভব। ঝাওর মতে, এই গল্পে জীবনের বিপরীত শক্তিগুলো পাশাপাশি দাঁড়ায়, মৃত্যু আর সৃষ্টি, হারানো আর নতুন করে বলা।
অ্যাগনেসের চোখে ইতিহাস
উপন্যাসে ম্যাগি ও’ফ্যারেল ইতিহাসের আড়ালে পড়ে থাকা অ্যাগনেসকে সামনে এনেছেন। বহু বছর ধরে শেক্সপিয়ারের স্ত্রীর পরিচয়কে একপেশে ভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। প্রমাণ ছাড়াই বলা হয়েছে, শেক্সপিয়ার নাকি স্ত্রীকে ভালোবাসতেন না। এই ধারণাকে প্রশ্ন করতেই অ্যাগনেসকে গল্পের কেন্দ্রে বসানো। উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র দুটিতেই উঠে আসে, হয়তো এই সম্পর্কই শেক্সপিয়ারের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণা ছিল।

দূরত্ব পেরিয়ে যৌথ নির্মাণ
লস অ্যাঞ্জেলেস আর এডিনবরার দূরত্ব পেরিয়ে ঝাও ও ও’ফ্যারেলের যৌথ চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে দীর্ঘ ছয় মাসে। অসংখ্য কণ্ঠবার্তার মাধ্যমে তারা চরিত্র, আবহ আর থিম নিয়ে আলোচনা করেছেন। কখনও ছোট দৃশ্য, কখনও দীর্ঘ ভাবনার ধারা। এই প্রক্রিয়াতেই উপন্যাসের চারশো পাতার শোকগাঁথা রূপ পেয়েছে পর্দার সংক্ষিপ্ত ভাষায়।
অভিনয়ে নতুন ব্যাখ্যা
অ্যাগনেসের চরিত্রে জেসি বাকলির অভিনয় ছবির আবেগের মূল ভরকেন্দ্র। তাঁর শরীরী ভাষা আর নীরব দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে এক মায়ের অসীম ক্ষতি। শেক্সপিয়ারের ভূমিকায় পল মেস্কালকে বেছে নেওয়াও চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত। ঝাও মনে করেন, তাঁর ভেতরে থাকা অদম্য শক্তি আর অস্থিরতা সৃষ্টিশীল মানুষের অন্তর্লোককে প্রকাশ করে।

মঞ্চ থেকে পর্দায় রূপান্তর
উপন্যাসে গ্লোব থিয়েটারের দৃশ্য ছিল একান্ত ব্যক্তিগত অনুভবের। চলচ্চিত্রে সেই আবেগকে দৃশ্যমান করতে যোগ হয়েছে সংলাপ আর চরিত্রের উপস্থিতি। শেষ অংশে নাটকের ভেতর নাটক দেখানোর মাধ্যমে শোকের ক্যাথারসিসে পৌঁছাতে চেয়েছেন নির্মাতারা। প্রাথমিক প্রদর্শনের পর দর্শকের প্রতিক্রিয়াও এই সিদ্ধান্তকে শক্ত করেছে।
সমালোচনা ও স্বীকৃতি
প্রদর্শনের পরপরই ছবিটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। আবেগঘন নির্মাণ আর জেসি বাকলির অভিনয় সমালোচকদের নজর কেড়েছে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শীর্ষ পুরস্কার জয়ের পর ছবিটি পুরস্কার মৌসুমের আলোচনায় উঠে এসেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















