প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং এর পেছনে রাজনৈতিক মদদ ও সমন্বিত চক্রান্ত কাজ করেছে।
প্রতিবাদ সভায় নাহিদের বক্তব্য
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। দেশে চলমান সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে সম্পাদক পরিষদ ও নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কী ধরনের ঘটনা ঘটানো হবে, তার একটি ছক অনেক আগেই তৈরি ছিল। তার মতে, ওই রাতে হামলার পেছনে সরকারের ভেতরের একটি অংশের সম্পৃক্ততা, রাজনৈতিক ব্যাকআপ এবং আগে থেকেই সম্মতি তৈরির প্রক্রিয়া একসঙ্গে কাজ করেছে। এই তিনটি বিষয় না থাকলে এমন দুঃসাহসী ঘটনা ঘটানো সম্ভব হতো না।
স্লোগান ব্যবহারের অভিযোগ
তিনি অভিযোগ করেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের স্লোগান এবং শরিফ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করেছে। নাহিদের ভাষায়, নিজেদের স্লোগানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

গণ-অভ্যুত্থান থেকে বর্তমান পরিস্থিতি
নাহিদ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, দেশ এখন সেই পথে এগোচ্ছে না। দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। তার মতে, বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানের সময় নানা বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে, কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা আর স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং সুপরিকল্পিত অপরাধ।
মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে অবস্থান
তিনি জানান, শুরুতে ‘মব ভায়োলেন্স’ শব্দটি ব্যবহার করতে তারা অনিচ্ছুক ছিলেন। কারণ, গণ-অভ্যুত্থানকে শুরু থেকেই বিরোধী পক্ষ ‘মব’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে বর্তমান বাস্তবতায় তিনি স্বীকার করেন, এখন যে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে তা পরিকল্পিত এবং দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনব্যবস্থাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
দায়িত্ব ও জবাবদিহির আহ্বান
নাহিদ ইসলাম বলেন, এই ঘটনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই এবং বিশেষ করে যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিলেন, তাদের দায়িত্ব আরও বেশি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার কথা উল্লেখ করে বিষয়টিকে নিজের জন্যও লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কারা ওই রাতে হামলা চালিয়েছে, কারা সমর্থন দিয়েছে এবং কারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লেখালেখি করেছে—সবই স্পষ্ট। এখন সবাইকে একসঙ্গে সরকারকে বাধ্য করতে হবে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে। একই সঙ্গে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনাটিরও দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।
সভায় উপস্থিত বক্তারা
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী রেহনুমা আহমেদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ আরও অনেকে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















