লন্ডনের ইস্ট এন্ডের সিডনি স্ট্রিট এক সকালে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। বন্ধ জানালার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র নৈরাজ্যবাদীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পুলিশ যখন দরজায় দরজায় ডাক দিচ্ছিল, তখনই গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। শতাধিক পুলিশ দেয়াল, দরজা আর বাতিস্তম্ভের আড়ালে অবস্থান নেয়। ওপরতলার জানালা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় সব দেখছিলেন।
গোপন খোঁড়াখুঁড়ি থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
এই নাটকীয় ঘটনার সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে। এক গহনার দোকানের পেছনে দিনের পর দিন খোঁড়াখুঁড়ির শব্দে সন্দেহ জাগে প্রতিবেশীদের। পুলিশ ভেবেছিল সাধারণ চুরির চেষ্টা। কিন্তু বাস্তবে সেখানে কাজ করছিল লাটভিয়ান নৈরাজ্যবাদীদের একটি দল। তাদের লক্ষ্য ছিল দোকানের সিন্দুক ভেঙে অর্থ সংগ্রহ, যাতে রাজনৈতিক তৎপরতার খরচ জোগানো যায়। রাশিয়ার বিপ্লব দমনের পর লন্ডনে আশ্রয় নেওয়া এই দলটি ধীরে ধীরে ভয়ংকর হয়ে উঠছিল।
হঠাৎ হামলায় লন্ডনের স্তব্ধতা
পুলিশের নিরস্ত্র সদস্যরা নিয়মিত তল্লাশির উদ্দেশ্যে দোকানে ঢুকতেই তাদের ওপর চালানো হয় গুলি। মুহূর্তে প্রাণ হারান কয়েকজন কর্মকর্তা। শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরদিন দলনেতার মরদেহ পাওয়া যায়, তবে দলের কয়েকজন সদস্য পালিয়ে যায়।
সিডনি স্ট্রিটের অবরোধ
নতুন বছরের শুরুতে পুলিশের কাছে গোপন খবর আসে যে পলাতক দুই নৈরাজ্যবাদী সিডনি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে লুকিয়ে আছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়। আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতেই ওপরতলা থেকে আবার গুলি ছোড়া হয়। এক গোয়েন্দা গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকারের নির্দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়।
আগুন, ধোঁয়া আর অনিশ্চিত পরিণতি
দুপুরের দিকে বাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশ ঢেকে ফেলে। আগুন নেভার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই নৈরাজ্যবাদীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে দলের অন্যতম রহস্যময় সদস্য আর কখনো ধরা পড়েননি। অনেকে মনে করেন, তিনি ছদ্মনামে ইউরোপে ফিরে গিয়েছিলেন।
ইতিহাসের পাতায় বিতর্কিত উপস্থিতি
এই অবরোধের সময় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। পরে সংসদে এই উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক হয়, কেউ কেউ একে অতিরিক্ত প্রচারপ্রবণতা বলেও কটাক্ষ করেন। বহু বছর পর নিহত পুলিশ ও দমকল কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















