চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ কোনো নতুন বিদেশি ঋণ প্রতিশ্রুতি পায়নি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রকাশিত সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়কালে ভারত, চীন, রাশিয়া ও জাপানসহ পাঁচটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার নতুন কোনো ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে আগের চুক্তিভিত্তিক ঋণের অর্থছাড় অব্যাহত ছিল।
ঋণ প্রতিশ্রুতি স্থবির, অর্থছাড় অব্যাহত
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই–নভেম্বর সময়ে নতুন প্রতিশ্রুতি না থাকলেও আগেই অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে উন্নয়ন অংশীদাররা অর্থ ছাড় করেছে। একই সময়ে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক থেকেও কোনো নতুন ঋণ প্রতিশ্রুতি আসেনি।
প্রায় সমপরিমাণ অর্থছাড় ও ঋণ পরিশোধ
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে উন্নয়ন অংশীদার ও বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় ১৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। বিপরীতে একই সময়ে আগের বিদেশি ঋণের মূলধন ও সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮৯ কোটি ডলার। ফলে জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত প্রায় পুরো বৈদেশিক ঋণের অর্থই ঋণসেবায় খরচ হয়ে গেছে, যা দেশের বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মোট প্রতিশ্রুতি ও মাসভিত্তিক চিত্র
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সূত্র জানায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে মোট ঋণ প্রতিশ্রুতি ছিল ১২২ কোটি ডলার। তবে শুধু নভেম্বর মাসে কোনো নতুন প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
এই সময়ে প্রতিশ্রুতির সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে, যার পরিমাণ ৫৮ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক প্রায় ২০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দেয়। অন্য উন্নয়ন অংশীদার ও দেশগুলো প্রথম চার মাসে মিলিয়ে প্রায় ৬২ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ভারত, চীন, রাশিয়া ও জাপানের মতো বড় দ্বিপক্ষীয় অংশীদারদের নাম নতুন তালিকায় ছিল না।
আগের বছরের সঙ্গে তুলনা
তুলনামূলকভাবে আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রায় ৫২ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি, যা চলতি বছরের চিত্রের তুলনায় বেশি।
অর্থছাড়ে কারা এগিয়ে
বাস্তব অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে জুলাই–নভেম্বর সময়ে সবচেয়ে বড় উৎস ছিল রাশিয়া, যারা চলমান বড় প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে। এরপর বিশ্বব্যাংক ৪৩ কোটি ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৩৩.৫ কোটি ডলার অর্থছাড় দেয়। একই সময়ে চীন থেকে আসে প্রায় ১৯.৫ কোটি ডলার, ভারত থেকে ৯ কোটি ডলার এবং জাপান থেকে ৮.৫ কোটি ডলার।
কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থছাড়ের এই ধারা মূলত আগেই অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। তবে প্রধান অংশীদারদের কাছ থেকে নতুন ঋণ প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ বৈদেশিক অর্থায়ন নিয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তাও সামনে আসছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















