নির্বাচনের শেষ প্রস্তুতিতে বড় পরিবর্তন
নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য তিনটি আসনে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। মাঠপর্যায়ের জরিপ, দলীয় অসন্তোষ এবং জোটগত হিসাব মিলিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত’ করতেই এসব পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
খালেদা জিয়ার তিন আসনে প্রস্তুতি ও বিকল্প ব্যবস্থা
দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বগুড়া, দিনাজপুর ও ফেনীর তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিটি আসনে বিকল্প প্রার্থীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দলটির ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সংকটময় সময় পার করছেন।
ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন ওই আসনের নির্বাচন সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। প্রয়োজনে তিনিই সেখানে দলের প্রার্থী হতে পারেন।
বগুড়া-৭ আসনে বিকল্প হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। দিনাজপুর-৩ আসনে বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত রয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তাঁরা দুজনই জানিয়েছেন, দলীয় উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় নিজেদের জন্যও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
তারেক রহমানের নির্বাচনী পরিকল্পনা
একই সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনী পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছে। তিনি বগুড়া-৬ আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ আসন থেকেও নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১৭ আসনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে। এর আগে এই আসনে জোটপ্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করা আন্দালিভ রহমান পার্থ এখন ভোলা সদর আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন
মনোনয়ন তালিকায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামানের অনীহার কারণে সেখানে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের একাধিক আসনেও নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। রাউজান আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সেখানে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করা হয় এবং গোলাম আকবরের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়। দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে প্রার্থীদের সাম্প্রতিক মতবিনিময় সভাতেও তাঁকে ডাকা হয়নি।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি আগে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও পরে অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ায় সেখানে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। চট্টগ্রাম-১১ থেকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবর্তন
উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এসেছে। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখানে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে প্রার্থী করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে একমি গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে প্রার্থী করা হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর পরিবর্তে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-১, যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনেও দলীয় ও জোটগত সমীকরণে নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামাল মোল্লার পরিবর্তে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন চূড়ান্তের দাবি
বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও পরে মিত্রদের জন্য আরও ১৫টি আসন ছেড়ে দেয়। বাকি আসনগুলোর মনোনয়নও চূড়ান্ত হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁর জানা মতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত। তবে প্রতিদিন একাধিক পরিবর্তনের কারণে একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
প্রার্থী পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা
প্রার্থী বদলের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, ততই বাস্তবতা বদলায়। সমীকরণ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















