মেঝেতে শুয়ে দিন শুরু করা এক কিশোরীর কাছে দৌড় ছিল জীবনের একমাত্র আশ্রয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর ঘৃণার শব্দ পেছনে ফেলে ট্র্যাকে নামা ছিল তার প্রতিদিনের যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের এক কিশোরী দৌড়বিদের গল্প আজ কেবল খেলাধুলার নয়, এটি পরিচয়, অধিকার আর টিকে থাকার গল্পও।
শৈশব থেকে অনিশ্চিত জীবন
ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া এই কিশোরীর শৈশব কেটেছে ভাড়া বাসা বদলাতে বদলাতে। বাবার অনুপস্থিতি, সৎ বাবার মৃত্যু আর পরে ওয়াশিংটনে নতুন শহরে এসে এক ঘরে পরিবারের সঙ্গে বসবাস তাকে অল্প বয়সেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে। লকডাউনের সময় একাকিত্ব আরও বেড়ে যায়। শরীর আর মন যেন একে অপরের সঙ্গে মানানসই নয়, এমন অনুভূতিতে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলছিল।
দলের খোঁজে দৌড়
বিদ্যালয় খুললে এক শিক্ষক তার দৌড়ের প্রতিভা লক্ষ্য করেন। দলবদ্ধ খেলায় যোগ দেওয়ার পর প্রথমবার সে অনুভব করে কোথাও সে জায়গা পাচ্ছে। ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় নিয়ে স্পষ্ট হয় তার ভাবনা। মেয়েদের দলে দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে, যদিও আশপাশের রক্ষণশীল পরিবেশে ভয় ছিল প্রবল। তবু কোচ তাকে গ্রহণ করেন, আর সেই স্বীকৃতি তার জীবনে নতুন আশার দরজা খুলে দেয়।

ট্র্যাকে সাফল্য, বাইরে ঝড়
অনুশীলনে সময়ের উন্নতি হতে থাকে। হরমোন চিকিৎসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় সে, জেনেও যে এতে গতি কমতে পারে। তার কাছে জেতার চেয়ে নিজেকে হওয়াই ছিল বড়। তবু রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে চারশো মিটারে সে সবার আগে ফিনিশ করে। পদক জয়ের মুহূর্তেই শুরু হয় আরেক দৌড়, সামাজিক মাধ্যম আর জনপরিসরে অপমান আর বিদ্বেষের দৌড়। তাকে নিয়ে অভিযোগ, ভিডিও ছড়ানো, কটূক্তি আর হুমকি একের পর এক আসতে থাকে।
আইন আর রাজনীতির চাপ
ট্রান্স ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তখন রাজনৈতিক উত্তেজনা। একের পর এক অঙ্গরাজ্যে নিষেধাজ্ঞা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কড়াকড়ি সিদ্ধান্তের ঘোষণা তার ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলে। কলেজে দৌড়ানোর স্বপ্ন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। তবু রাজ্যের গভর্নরের প্রশংসাপত্র প্রমাণ করে দেয়, প্রতিকূলতার মাঝেও তার অর্জন স্বীকৃত।
পোডিয়াম ছাড়ার পরের জীবন
শেষবার ইউনিফর্ম জমা দেওয়ার দিনটি ছিল সবচেয়ে কঠিন। প্রতিযোগিতা শেষ হলেও লড়াই থামেনি। বাড়ি হারানো, আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটানো, সহিংসতার শিকার হওয়া তাকে আরও ভেঙে দেয়। তবু সহযাত্রীদের সহানুভূতি, কোচের আশ্রয় আর নতুন জুতোর খোঁজে পাওয়া সামান্য আনন্দ তাকে আবার দৌড়াতে শেখায়, অন্তত নিজের জন্য।
এই গল্প দেখায়, দৌড়ই ছিল তার সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ নয়। কঠিন ছিল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনীতির সিদ্ধান্ত আর প্রতিদিন টিকে থাকার সংগ্রাম। তবু সূর্যাস্তের আলোয় আবার দৌড়ানো সেই কিশোরী জানে, সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগোনোর শক্তি তার ভেতরেই আছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















