পেশাদার নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম লিংকডইনে একটি ব্যক্তিগত পরীক্ষা নতুন করে আলোচনায় এনেছে লিঙ্গভিত্তিক ভাষা ও অ্যালগরিদমিক পক্ষপাতের প্রশ্ন। একজন নারী মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী নিজের প্রোফাইল সামান্য বদলে পুরুষালি রূপ দেওয়ার পর মাত্র এক সপ্তাহে তাঁর পোস্টের দৃশ্যমানতা চার গুণ বেড়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই বহু নারী একই ধরনের পরিবর্তন করে মিলছে ভিন্ন ভিন্ন ফল, তৈরি হচ্ছে তীব্র বিতর্ক
প্রোফাইল বদলাতেই চার গুণ পৌঁছানো
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত মেগান কর্নিশ কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করছিলেন, লিংকডইনে তাঁর লেখা ও মতামত আগের মতো মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বিষয়টি বোঝার জন্য তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নিজের প্রোফাইলের ভাষা বদলান। যোগাযোগ দক্ষতা বা ক্লিনিক্যাল সহায়তার মতো শব্দ বাদ দিয়ে যুক্ত হয় নেতৃত্ব, নৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কৌশলগত প্রভাবের মতো শব্দ। পরিবর্তনের পরপরই তাঁর প্রোফাইল ও পোস্টের দর্শকসংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়।
ভাইরাল অভিজ্ঞতা ও নারীদের প্রতিক্রিয়া
এই অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বহু নারী জানান, নিজেদের লিঙ্গ গোপন করা বা পুরুষালি ভাষা ব্যবহার করার পর তাঁদের পোস্ট আগের চেয়ে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। আবার কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেন, সামান্য শব্দচয়ন বদলেই কীভাবে এত বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে। এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, পেশাদার অনলাইন পরিসরে নারীদের কণ্ঠস্বর কি এখনো অতিরিক্ত পরিশ্রমের শিকার।

কোম্পানির অবস্থান
লিংকডইনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ব্যবস্থা বয়স, লিঙ্গ বা জাতিগত তথ্য ব্যবহার করে না। কোম্পানির দাবি, প্রোফাইলে লিঙ্গ পরিবর্তন করলে কনটেন্টের দৃশ্যমানতায় প্রভাব পড়ে না। তবে সমালোচকদের মতে, ব্যবহারকারীদের আচরণ ও ভাষার মধ্যকার সামাজিক পক্ষপাতই অ্যালগরিদমকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্র বিষয়ক গবেষকেরা বলছেন, ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষালি ভাষাকে অনেক সময় বেশি মূল্য দেওয়া হয়। প্রযুক্তি ও অর্থনীতির মতো উচ্চ আয়ের খাতে পুরুষের আধিপত্য এবং শিক্ষা বা পরিচর্যার মতো খাতে নারীদের আধিক্য এই বৈষম্যকে আরও জোরালো করে। গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো নারীরা পুরুষের আয়ের তুলনায় কম মজুরি পান।
জাতি ও লিঙ্গের জটিল বাস্তবতা
সব পরীক্ষার ফল একরকম নয়। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী লেখক জানান, নিজের প্রোফাইল সাদা পুরুষের মতো দেখালে তাঁর পোস্টের পৌঁছানো বরং কমে যায়। আবার কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ পরিচয়ে ফল আরও খারাপ হয়। এতে স্পষ্ট হয়, দৃশ্যমানতার প্রশ্নটি শুধু লিঙ্গ নয়, জাতিগত পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।
ফের নিজের পরিচয়ে ফেরা
মেগান কর্নিশ শেষ পর্যন্ত নিজের প্রকৃত পরিচয়েই ফিরে যান। তাঁর মতে, নিজের কণ্ঠ বদলে ফেলার প্রয়োজন হওয়াটাই সমস্যার মূল। অন্যদিকে ব্যবসা ও প্রযুক্তি খাতের আরও কয়েকজন নারী নেতা একই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলছেন, অ্যালগরিদম বদলের পর নারীবান্ধব বিষয়গুলো আগের মতো গুরুত্ব পাচ্ছে না। এই বিতর্ক এখন লিংকডইনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, প্রশ্ন তুলছে ডিজিটাল পেশাদার পরিসরের ন্যায্যতা নিয়ে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















