অবসরের দিন যত কাছে আসে, ততই এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন মাথায় ঘোরে—আর কত বছর বাঁচব। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর না জানা থাকায় অবসরকালীন সঞ্চয় পরিকল্পনায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বলছে, ব্যক্তিগত তথ্যভিত্তিক দীর্ঘায়ু নির্ণায়ক পদ্ধতি অবসর পরিকল্পনায় নতুন দিশা দেখাতে পারে ।
দীর্ঘায়ু অনিশ্চয়তা ও সঞ্চয়ের ঝুঁকি
যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশে পেনশনের বদলে ব্যক্তিগত সঞ্চয় নির্ভর অবসর ব্যবস্থার বিস্তার হয়েছে। ফলে মানুষকে নিজেই অনুমান করতে হচ্ছে কত বছর পর্যন্ত সঞ্চয় টিকিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ গড় হিসাবের ওপর ভর করলে কেউ কম সঞ্চয় করে বিপদে পড়ছেন, আবার কেউ অযথা বেশি সঞ্চয় করে বর্তমান জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য হারাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যই বড় ইঙ্গিত
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যক্তিগত মূল্যায়ন দীর্ঘায়ু অনুমানের ক্ষেত্রে বিস্ময়করভাবে কার্যকর। যারা নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো বা চমৎকার বলে মনে করেন, তারা সাধারণত দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষের তুলনায় অনেক বেশি বছর বাঁচেন। ধূমপান না করা, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মতো বিষয় ও দীর্ঘায়ুতে বড় ভূমিকা রাখে।
হিসাবের ভিন্নতা ও বাস্তবতা
বিভিন্ন দীর্ঘায়ু নির্ণায়ক পদ্ধতিতে একই ব্যক্তির সম্ভাব্য আয়ু নব্বই থেকে একশ দুই বছর পর্যন্ত দেখাতে পারে। এই পার্থক্যের কারণ হলো কোন তথ্যভান্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ও অভ্যাসের জন্য কতটা অতিরিক্ত বছর যোগ করা হচ্ছে। তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, বাস্তবে প্রতিটি ভালো অভ্যাসের প্রভাব হিসাবের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।
ভুল অনুমানের খেসারত
অনেক পরিবার আগের প্রজন্মের আয়ুর ওপর ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গড় আয়ু বেড়েছে—এই বাস্তবতা উপেক্ষা করলে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা নেওয়ার সময় ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে। কম বয়সে ভাতা নেওয়ায় আজীবন আয়ের বড় অংশ হারানোর উদাহরণও রয়েছে।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিকল্পনার গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের ব্যক্তিগত দীর্ঘায়ু নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়নি, তাদের অবসর পরিকল্পনায় বড় ঘাটতি থেকে যায়। আবার দুর্বল স্বাস্থ্যের কারও জন্য অযৌক্তিক দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা করাও বাস্তবসম্মত নয়, যদি না পরিবারের অন্য সদস্যের দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা থাকে।
সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির পথ
কিছু মানুষ এখন বেশি বছর বাঁচবেন ধরে নিয়ে অবসর পরিকল্পনা করছেন। এর অর্থ আরও সঞ্চয়, কিছুটা বেশি সময় কাজ করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা দেরিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। এতে মাসিক আয় বাড়ে এবং দীর্ঘ অবসর জীবনে আর্থিক চাপ কমে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















