দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের শান্ত নীল জলরাশির নিচে লুকিয়ে থাকা খনিজ সম্পদ এখন নতুন করে বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে। কুক দ্বীপপুঞ্জের রারোটোঙ্গার উপকূলে একের পর এক গবেষণা জাহাজের আনাগোনা স্থানীয়দের চোখে স্পষ্ট করে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবার গভীর সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছেছে।
গভীর সমুদ্রে নতুন দৌড়
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা জাহাজ সমুদ্রতলের উচ্চমানের ছবি ধারণ করতে আসে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে একই উদ্দেশ্যে পৌঁছে যায় চীনের আরেকটি জাহাজ। এই ঘটনাই দেখিয়ে দেয়, বৈদ্যুতিক যান, যুদ্ধবিমান ও ব্যাটারির জন্য অপরিহার্য বিরল খনিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পরাশক্তির নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পরিশোধিত বিরল খনিজের বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প উৎস খুঁজছে।
কুক দ্বীপপুঞ্জের কৌশল ও আশা
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রের উপকূলের নিচে ছড়িয়ে আছে অপ্রয়োজিত খনিজ ভাণ্ডার। সমুদ্রতলে ছোট পাথরের মতো গঠনে থাকা এসব নডিউলের ভেতরে কোবাল্ট, তামা, ম্যাঙ্গানিজসহ মূল্যবান উপাদান রয়েছে। সরকারি মহলের ধারণা, সঠিকভাবে উত্তোলন হলে এর রয়্যালটি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। অনেকের কাছে এটি নরওয়ের তেলসম্পদের মতো সম্ভাবনাময় উদাহরণ।
পরিবেশ বনাম অর্থনীতি
তবে এই সম্ভাবনার বিপরীতে রয়েছে গভীর উদ্বেগ। সমুদ্রতল খননের পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদীরা প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের আশঙ্কা, একবার সমুদ্রতল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর আগের অবস্থায় ফিরবে না। তবুও সরকার বলছে, সমুদ্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খোঁজা হচ্ছে।
কূটনীতির টানাপোড়েন
চীন দীর্ঘদিন ধরেই দ্বীপপুঞ্জে অবকাঠামো ও সহায়তা প্রকল্পে সক্রিয়। বিনিময়ে তারা সমুদ্রতল অনুসন্ধানের সুযোগ পেয়েছে। এই চুক্তির কিছু অংশ গোপন থাকায় রারোটোঙ্গায় বিক্ষোভও হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে যুক্তরাষ্ট্রও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, গবেষণা জাহাজ পাঠানো থেকে শুরু করে সম্ভাব্য অবকাঠামো সহায়তার প্রস্তাব দেয়। ফলে দ্বীপপুঞ্জ এখন দুই শক্তির কৌশলগত টানাপোড়েনের কেন্দ্রে।
ভবিষ্যতের দিশা
পর্যটন ও বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল কুক দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতি নতুন পথের সন্ধানে। গভীর সমুদ্রের খনিজ তাদের সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলতে পারে, আবার ভুল সিদ্ধান্তে পরিবেশ ও সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিও রেখে যেতে পারে। এই দ্বিধার মাঝেই দ্বীপবাসী ভাবছে, বড় শক্তির খেলায় তারা কতটা প্রস্তুত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















