০৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
শৈত্যপ্রবাহে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ: সারা দেশে কুয়াশা, শ্বাসকষ্ট আর জীবিকার ঝুঁকি খালেদা জিয়ার মৃত্যু: রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা মুন্সিগঞ্জে ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ড; দ্রুত নিয়ন্ত্রণে বড় ক্ষতি এড়ানো গেল এক চিলতে আগুনেই সর্বনাশ, খুলনার বাজারগুলোয় অগ্নিঝুঁকির নীরব আতঙ্ক খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা: জামায়াত নেতা তাহের ইসরায়েলের পদক্ষেপের পর তুরস্কে সোমালি প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক বৈঠক সুইস কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন এক এনআইডিতে পাঁচ সিম সীমা গুজব: টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনা নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ পল্লবীতে অস্ত্রসহ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

তুরস্কের পথে ইউরোপে রুশ জ্বালানি প্রবাহ, নিষেধাজ্ঞার মাঝেও বন্ধ হচ্ছে না তেলবাহী জাহাজ

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জোরদার হলেও তুরস্ক হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানি প্রবাহ কার্যত অব্যাহত রয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর শহর মারসিনে নিয়মিত ভিড়ছে রুশ তেলবাহী জাহাজ, আবার একই পথ ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর দিকে রওনা দিচ্ছে নতুন চালান। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

মারসিন বন্দরের নীরব তৎপরতা

প্রায় প্রতি মাসেই একাধিক ট্যাংকার মারসিন বন্দরের একটি সংরক্ষণ টার্মিনালে হাজার হাজার ব্যারেল ডিজেল ও জ্বালানি তেল খালাস করছে। এসব জাহাজের বড় অংশই সরাসরি রাশিয়া থেকে আসে। আবার একই পরিমাণ তেল নিয়ে ট্যাংকারগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্দরের দিকে যাত্রা করে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক যাতায়াত একটি বিকল্প পথ তৈরি করেছে, যা নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে রুশ জ্বালানি ইউরোপে পৌঁছাতে সহায়তা করছে।

নিষেধাজ্ঞার পর বদলে যাওয়া পথ

দুই হাজার তেইশ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ বন্দর থেকে তেলজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। আগে যেখানে মারসিনের ওই টার্মিনালে জাহাজ চলাচল ছিল খুবই সীমিত, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরপরই সেখানে রাশিয়া থেকে চালান আসতে শুরু করে। কয়েক বছরের মধ্যে এই বন্দর রুশ তেলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

পরিসংখ্যানে ধরা পড়া বাস্তবতা

জাহাজ পর্যবেক্ষণ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে ওই টার্মিনালে প্রায় পঁয়ষট্টি লক্ষ ব্যারেল তেলজাত পণ্য এসেছে। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চান্ন লক্ষ ব্যারেলই রাশিয়া থেকে, যার বাজারমূল্য কয়েক শ কোটি ডলার। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি হয়েছে প্রায় চুয়াল্লিশ লক্ষ ব্যারেল। বিশ্লেষকদের মতে, অন্য উৎস থেকে আসা তেলের তুলনায় এই পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় ইউরোপে পাঠানো চালানে রুশ তেলের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

ইউরোপীয় নজরদারি ও রাজনৈতিক চাপ

এই প্রবণতা নজরে আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন মারসিনসহ অনুরূপ টার্মিনালগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে। প্রয়োজনে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে। কারণ জ্বালানি রপ্তানিই রুশ অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও তুরস্ক ও অন্যান্য বড় ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়ানো হয়েছে, যাতে রুশ জ্বালানি কেনাবেচা বন্ধ হয়।

তুরস্কের অবস্থান

তুরস্ক বর্তমানে রুশ ডিজেল ও জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতাদের একটি। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাণিজ্যিক গোপনীয়তার কারণে গ্রাহক বা চালানের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভৌগোলিক অবস্থান ও বিদ্যমান অবকাঠামোর কারণে তুরস্ক নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী জ্বালানি বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

যুদ্ধ ও জ্বালানি রাজনীতির নতুন অধ্যায়

ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে স্পষ্ট হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানি প্রবাহ পুরোপুরি থামাতে পারেনি। বরং নতুন নতুন পথ তৈরি হয়েছে, যার অন্যতম উদাহরণ মারসিন বন্দর। এই বাস্তবতা ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শৈত্যপ্রবাহে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ: সারা দেশে কুয়াশা, শ্বাসকষ্ট আর জীবিকার ঝুঁকি

তুরস্কের পথে ইউরোপে রুশ জ্বালানি প্রবাহ, নিষেধাজ্ঞার মাঝেও বন্ধ হচ্ছে না তেলবাহী জাহাজ

০১:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জোরদার হলেও তুরস্ক হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানি প্রবাহ কার্যত অব্যাহত রয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর শহর মারসিনে নিয়মিত ভিড়ছে রুশ তেলবাহী জাহাজ, আবার একই পথ ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর দিকে রওনা দিচ্ছে নতুন চালান। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

মারসিন বন্দরের নীরব তৎপরতা

প্রায় প্রতি মাসেই একাধিক ট্যাংকার মারসিন বন্দরের একটি সংরক্ষণ টার্মিনালে হাজার হাজার ব্যারেল ডিজেল ও জ্বালানি তেল খালাস করছে। এসব জাহাজের বড় অংশই সরাসরি রাশিয়া থেকে আসে। আবার একই পরিমাণ তেল নিয়ে ট্যাংকারগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্দরের দিকে যাত্রা করে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক যাতায়াত একটি বিকল্প পথ তৈরি করেছে, যা নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে রুশ জ্বালানি ইউরোপে পৌঁছাতে সহায়তা করছে।

নিষেধাজ্ঞার পর বদলে যাওয়া পথ

দুই হাজার তেইশ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ বন্দর থেকে তেলজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। আগে যেখানে মারসিনের ওই টার্মিনালে জাহাজ চলাচল ছিল খুবই সীমিত, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরপরই সেখানে রাশিয়া থেকে চালান আসতে শুরু করে। কয়েক বছরের মধ্যে এই বন্দর রুশ তেলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

পরিসংখ্যানে ধরা পড়া বাস্তবতা

জাহাজ পর্যবেক্ষণ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে ওই টার্মিনালে প্রায় পঁয়ষট্টি লক্ষ ব্যারেল তেলজাত পণ্য এসেছে। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চান্ন লক্ষ ব্যারেলই রাশিয়া থেকে, যার বাজারমূল্য কয়েক শ কোটি ডলার। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি হয়েছে প্রায় চুয়াল্লিশ লক্ষ ব্যারেল। বিশ্লেষকদের মতে, অন্য উৎস থেকে আসা তেলের তুলনায় এই পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় ইউরোপে পাঠানো চালানে রুশ তেলের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

ইউরোপীয় নজরদারি ও রাজনৈতিক চাপ

এই প্রবণতা নজরে আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন মারসিনসহ অনুরূপ টার্মিনালগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে। প্রয়োজনে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে। কারণ জ্বালানি রপ্তানিই রুশ অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও তুরস্ক ও অন্যান্য বড় ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়ানো হয়েছে, যাতে রুশ জ্বালানি কেনাবেচা বন্ধ হয়।

তুরস্কের অবস্থান

তুরস্ক বর্তমানে রুশ ডিজেল ও জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতাদের একটি। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাণিজ্যিক গোপনীয়তার কারণে গ্রাহক বা চালানের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভৌগোলিক অবস্থান ও বিদ্যমান অবকাঠামোর কারণে তুরস্ক নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী জ্বালানি বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

যুদ্ধ ও জ্বালানি রাজনীতির নতুন অধ্যায়

ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে স্পষ্ট হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানি প্রবাহ পুরোপুরি থামাতে পারেনি। বরং নতুন নতুন পথ তৈরি হয়েছে, যার অন্যতম উদাহরণ মারসিন বন্দর। এই বাস্তবতা ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।