শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৩৪)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

স্বাধীনতা-টাধিনতা বুঝি না, পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি দেশটা একটা বৈপ্লবিক পরিণতির দিকে লেজ তুলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে।’

‘পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিস তুই?’

‘পরিষ্কার-‘

‘ধর বেধড়ক মার দিয়ে যদি সবকিছু আবার ঠাণ্ডা ক’রে দেয়, তখন?’

একটু ভেবে নিয়ে মুরাদ বললে, ‘এখন যে পরিস্থিতি তাতে সেটাই স্বাভাবিক। যতই ট্রেনিং নিক, কুচকাওয়াজ করুক, দেশের লোকের হাতে আছেটা কি? বাঁশের লাঠি আর পায়খানা ঘরের ঝাড়, ব্যাস্! এই কিছু না থাকাটাই মারমুখী হ’তে প্রলুব্ধ করবে সামরিক শক্তিকে, আর সত্যি কথা বলতে কি এই মারটাই আমাদের ভয়ঙ্কর রকম দরকার। চিন্তা ক’রে দেখ, সামুদ্রিক বান আর ঝড়-ঝাপটায় যেখানে এক কথায় ঝট ক’রে পনেরো-বিশ লাখ লোক গরু-ছাগলের মতো বেঘোরে মারা পড়ে সেখানে দেশের আমূল পরিবর্তনের খাতিরে দু’দশ হাজার লোকের আত্মাহুতি তেমন কোনো বড় ব্যাপার নয়।

মোদ্দা কথা, ওরা যদি ভুল ক’রে সামরিক শক্তি প্রয়োগের দিকটাই বড় ক’রে দেখে থাকে তাহলে বিপ্লবের জন্যে এটাই হবে সোনায় সোহাগা; তখন কোন্ শালা আর ঠেকিয়ে রাখে বিপ্লব। খ্যাংরাকাঠি আর মচকানো বংশদণ্ড ফেলে ঠিক তখনই হবে সশস্ত্র সংঘর্ষ। চেগুয়েভারার মতো ধ’রে নিতে পারিস বিপ্লবের জন্যে তখন আর মাথা কুটে মরতে হবে না আমাদের, বিপ্লব নিজেই কলকাঠি নেড়ে দুদ্দাড় ক’রে টেনে নিয়ে যাবে মানুষকে। সামরিক শক্তি প্রয়োগ হবে সব কথার শেষ কথা, মানে নির্লজ্জ শেষ চেষ্টা, মরণ কামড়। সেটা যদি কোনোক্রমে একটু চিড় খায়, তাহলে ব্যাস্, তোর ওই খেল খতম, পয়সা হুজম, গানের বই গানের বই গানের বই’ খোকা দাঁত দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের নখ কাটতে লাগলো কুট কুট ক’রে। অসম্ভব দুশ্চিন্তাকাতর মনে হয় তাকে। অকূল পাথারে ভাসছে, থৈ পাচ্ছে না।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মুরাদ বললে, ‘এই চান্সে আমি কি করেছি জানিস, আড়াইখানা কবিতার পত্রিকায় হাত দিয়েছি। এইবার সব লীশা হিজড়েগুলোর পিলে ফাটিয়ে দেব। যা একখানা মাল ছাড়বো না, দেখে নিস। একটা তো বেরিয়েই গেছে-‘

‘লীশা কিরে?’

‘শালী থেকে লী, শালা থেকে শা, বুঝলে চাঁদ ?’

‘তুই এখনো সেই আগের মতো ঈশ্বর অন্ধকার চিৎকার কবোষ্ণ- টবোষ্ণ চালাচ্ছিস নাকি?’

‘তোর শালা সেই পাঁচ বছর আগেকার কথা ভুলে খোঁচা দেওয়াটা একটা রোগ হ’য়ে দাঁড়িয়েছে! নিজে শালা এ পর্যন্ত কি এমন হাতি- ঘোড়া, বাঘ-ভাল্লুক মেরেছিস শুনি?’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024