০৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৬) চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ

বৃহস্পতিবার বিকেলেই কারফিউ এর কথা বলেছিলেন

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৭:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪
  • 18

শিবলী আহম্মেদ সুজন

সপ্তাহের শেষদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার।দুপুরের খাবার খেয়ে ডেস্কে কাজ করছে জাহিদ।অফিস সহকারী আজ আসেনি,তাই সম্পাদক স্যার জাহিদের সিনিয়র স্যারকে ফোনে বললেন, জাহিদ ও তিনি যেন একটু সম্পাদক স্যারের রুমে আসেন।

যথারীতি সম্পাদকের কথামত সে ও তার সিনিয়র স্যার সম্পাদক স্যারের রুমে প্রবেশ করলেন। জাহিদ সম্পাদক স্যারের মুখের দিকে তাকাল,স্যারকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। সম্পাদক স্যার দু’জনকে বললেন, তোমরা আজ বরং বাসায় চলে যাও।

জাহিদ বললো স্যার, তাহলে যে কাজগুলো আছে সেগুলোর কি হবে? সম্পাদক স্যার বললেন,বাকি কাজগুলো না হয় বাসায় গিয়ে করো। দেশের যা পরিস্থিতি যেকোন সময় সরকার কারফিউ জারি করতে পারে।

সে ও তার সিনিয়র স্যার একটু সময়ও নষ্ট করলো না। সম্পাদক স্যারের কথামত তারা দুজনই অফিস থেকে বের হয়ে গেল বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। সে তার সিনিয়র স্যারকে বিদায় জানিয়ে হাঁটা শুরু করলো। রাস্তায় হাঁটছে জাহিদ আর দেখতে পাচ্ছে সবারই যেন আজ বাড়ি ফেরার তাড়া।

সৈনিক ক্লাবের ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পাড় হয়ে রাস্তার পূর্বপাশ থেকে পশ্চিমপাশে এসে নামল সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল কুন্ডলী পাকিয়ে কালো ধোঁয়া আকাশে উড়ছে। লোকজনের মুখে সে শুনতে পেল চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় দূর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।জাহিদ আরও দেখতে পেল লোকজন বিশাল লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রথমে সে ভাবলো এটা বোধহয় বাসে উঠার লম্বা লাইন,কৌতুহলি জাহিদ একটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেল এটা যে কোন বাসে উঠার লাইন নয়, ক্যান্টনম্যান্টের ভিতরে ঢোকার লম্বা একটা লাইন লেগে আছে।

রাস্তায় কোন বাস নেই। অন্যকোন যানবাহন ও খুব একটা চোখে পড়ছে না।দু’একটা সিএনজি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।জাহিদ সিএনজি চালককে জিজ্ঞেস করল, মামা মিরপুর-১৪ যাবেন নাকি?উওরে,সিএনজি চালক বললো যাবো কিন্তু ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

দেশের এই খারাপ পরিস্থিতিতে সিএনজি চালকও তার রং দেখিয়ে দিল ২০ টাকার ভাড়া গিয়ে দাঁড়াল ১০০ টাকায়। সে সিদ্ধান্ত নিল হেঁটেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।একবার ক্যান্টনম্যান্টে প্রবেশ করতে পারলে তার আর কোন ভয়  নেই।

বাসায় ফিরে গোসল করে খাবার খেয়ে ল্যাপটপ ওপেন করে যেইনা জাহিদ কাজ করতে শুরু করেছে ঠিক তখনই হঠাৎ ব্রডব্যান্ড লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রথমে সে মনে করেছে এমনিতেই লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়েছে, কিন্তু না পরবর্তীতে টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে জানতে পেল দূর্বৃত্তরা ডাটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগ করার ফলে পুরো দেশজুড়ে ডাটা সেবা অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

দেশের অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু -করেছে।দেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাচাঁ-বাজারে শাক-সবজির দাম বেড়ে গিয়ে প্রায় সবজি  ১০০ টাকা কেজি হয়েছে।আজকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই আকাশ ছোঁয়া দাম।নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের এ দাম ছুঁতে গেলে প্যারাস্যুট ব্যবহার করতে হবে।তবুও যদি দামটা একটু হাতের নাগালে আসে।

তেমনি ডাটা সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে অনলাইন ভিত্তিক অনেক ব্যবসা-বানিজ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার কারফিউ জারি করলো এবং দেশে দুইদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল। সরকারের প্রচেষ্টায় আবারও জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

এদিকে আবার ব্রডব্যান্ড লাইন বিচ্ছিন্ন অফিসেও যেতে পারছে না জাহিদ। অনেকটা অলস সময় যেন কাটছে তার। গ্রাম থেকে তার এক বন্ধু তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে,ডাটা সংযোগ কবে চালু হবে এ বিষয়ে সে কিছু জানে কিনা?

তার বন্ধু আরও জানলো ওদের ঐখানে ক্যাবল কানেকশন নেই, আর বিদ্যুৎ হচ্ছে ক্ষণিকের মেহমান। এই যেন হঠাৎ আসে আবার হঠাৎ চলেও যায়। সে তার বন্ধুকে জানালো ডাটা সেবা চালু হতে আরও বেশকিছুদিন সময় লাগতে পারে।

তার বন্ধু বললো ফোনে ডাটা কানেকশন নেই তাই ভালো লাগছে না,খুব অস্থির লাগছে।ডাটা ছাড়া মনে হচ্ছে বিচিত্র এক গ্রহে বসবাস করছি। বন্ধুর মুখে এমন কথা শুনে জাহিদের মনে পড়ে গেল বাল্যকালের সেদিনগুলোর কথা।

প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান এই পৃথিবী। অবশ্য বাল্যকালটা এর বিপরীত ছিল। তখন যে কেউ অকপটে তার মনের কথাগুলো গড়গড় করে বলে দিত। কোন রাগ-ঢাক থাকত না।হিংসা,রাগ,প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা এসব কোন কিছুই মনের মধ্যে সেসময়টাতে জায়গা করে নিতে পারত না।

আজ নাক ফাঁটিয়ে পরদিনেই একসাথে গোল্লাছুট খেলতে দেখা যেত। সেসময়কার সম্পর্কগুলো ছিল পাথরে খোদাইকৃত নকশার মত।যাতে ধুলো পড়লেও মুছে যেত না।মুছতে চাইলেও পাড়া যেত না।

বর্তমানে শিশুদের বাল্যকালটা বড় একপেশে।যান্ত্রিক এবং একঘরে।যেটাকে আমাদের সময়টাতে শাস্তি হিসেবে ধরা হত।অথচ আজ সেটাকেই ক্যারিয়ার গড়ার মাধ্যম ভাবা হয়।

ছোট থেকেই শিশুদেরকে বই,কম্পিউটার,স্মার্টফোন,আর কোচিং এর মধ্যে বন্দি করে ফেলা হয়। এরা সেই গোল্লাছুটের মজা বুঝবে না।বুঝবে না দুই টাকার ঝালমুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি করে জামায় দাগ পড়ানোর সেই ঝগড়ার স্বাদ।

জাহিদের মনে পড়ে বাল্যকালে মায়ের শাসনের কথা।রুটি বেলার বেলুন,খুন্তি,ঝাড়ু,চামচ এসব কিছু দিয়ে আবদ্ধ ছিল সেই বাল্যকাল। মায়ের সেই বৈচিত্রময় শাসনগুলো না পেলে হয়তো বাল্যকালটা নষ্ট স্মৃতিতে তলিয়ে যেত।

বর্তমানে মায়েদের শাসন, অ্যাই এখন পড়তে বসো।নইলে কিন্তু ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দেব।পাসওয়ার্ড হারানোর ভয়ে বাচ্চারা পড়তে বসে।পড়া শেষ হলেই আবার পুনরায় পাসওয়ার্ডের জগতে প্রবেশ করে।

বড় মধুর ছিল জাহিদের বাল্যকালের সেইদিনগুলি।বাল্যকালের স্মৃতিগুলো মনে পড়তেই কেন জানি মনের অজান্তেই তার চোখের কোণে পানি চলে আসলো।সত্যিই যদি আবার সেই বাল্যকালে ফিরে যেতে পারতাম।তাহলে এই যন্ত্রের যুগে আর ফিরে আসতাম না ….

 

ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা

বৃহস্পতিবার বিকেলেই কারফিউ এর কথা বলেছিলেন

০৩:৪৭:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪

শিবলী আহম্মেদ সুজন

সপ্তাহের শেষদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার।দুপুরের খাবার খেয়ে ডেস্কে কাজ করছে জাহিদ।অফিস সহকারী আজ আসেনি,তাই সম্পাদক স্যার জাহিদের সিনিয়র স্যারকে ফোনে বললেন, জাহিদ ও তিনি যেন একটু সম্পাদক স্যারের রুমে আসেন।

যথারীতি সম্পাদকের কথামত সে ও তার সিনিয়র স্যার সম্পাদক স্যারের রুমে প্রবেশ করলেন। জাহিদ সম্পাদক স্যারের মুখের দিকে তাকাল,স্যারকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। সম্পাদক স্যার দু’জনকে বললেন, তোমরা আজ বরং বাসায় চলে যাও।

জাহিদ বললো স্যার, তাহলে যে কাজগুলো আছে সেগুলোর কি হবে? সম্পাদক স্যার বললেন,বাকি কাজগুলো না হয় বাসায় গিয়ে করো। দেশের যা পরিস্থিতি যেকোন সময় সরকার কারফিউ জারি করতে পারে।

সে ও তার সিনিয়র স্যার একটু সময়ও নষ্ট করলো না। সম্পাদক স্যারের কথামত তারা দুজনই অফিস থেকে বের হয়ে গেল বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। সে তার সিনিয়র স্যারকে বিদায় জানিয়ে হাঁটা শুরু করলো। রাস্তায় হাঁটছে জাহিদ আর দেখতে পাচ্ছে সবারই যেন আজ বাড়ি ফেরার তাড়া।

সৈনিক ক্লাবের ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পাড় হয়ে রাস্তার পূর্বপাশ থেকে পশ্চিমপাশে এসে নামল সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল কুন্ডলী পাকিয়ে কালো ধোঁয়া আকাশে উড়ছে। লোকজনের মুখে সে শুনতে পেল চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় দূর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।জাহিদ আরও দেখতে পেল লোকজন বিশাল লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রথমে সে ভাবলো এটা বোধহয় বাসে উঠার লম্বা লাইন,কৌতুহলি জাহিদ একটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেল এটা যে কোন বাসে উঠার লাইন নয়, ক্যান্টনম্যান্টের ভিতরে ঢোকার লম্বা একটা লাইন লেগে আছে।

রাস্তায় কোন বাস নেই। অন্যকোন যানবাহন ও খুব একটা চোখে পড়ছে না।দু’একটা সিএনজি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।জাহিদ সিএনজি চালককে জিজ্ঞেস করল, মামা মিরপুর-১৪ যাবেন নাকি?উওরে,সিএনজি চালক বললো যাবো কিন্তু ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

দেশের এই খারাপ পরিস্থিতিতে সিএনজি চালকও তার রং দেখিয়ে দিল ২০ টাকার ভাড়া গিয়ে দাঁড়াল ১০০ টাকায়। সে সিদ্ধান্ত নিল হেঁটেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।একবার ক্যান্টনম্যান্টে প্রবেশ করতে পারলে তার আর কোন ভয়  নেই।

বাসায় ফিরে গোসল করে খাবার খেয়ে ল্যাপটপ ওপেন করে যেইনা জাহিদ কাজ করতে শুরু করেছে ঠিক তখনই হঠাৎ ব্রডব্যান্ড লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রথমে সে মনে করেছে এমনিতেই লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়েছে, কিন্তু না পরবর্তীতে টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে জানতে পেল দূর্বৃত্তরা ডাটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগ করার ফলে পুরো দেশজুড়ে ডাটা সেবা অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

দেশের অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু -করেছে।দেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাচাঁ-বাজারে শাক-সবজির দাম বেড়ে গিয়ে প্রায় সবজি  ১০০ টাকা কেজি হয়েছে।আজকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই আকাশ ছোঁয়া দাম।নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের এ দাম ছুঁতে গেলে প্যারাস্যুট ব্যবহার করতে হবে।তবুও যদি দামটা একটু হাতের নাগালে আসে।

তেমনি ডাটা সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে অনলাইন ভিত্তিক অনেক ব্যবসা-বানিজ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার কারফিউ জারি করলো এবং দেশে দুইদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল। সরকারের প্রচেষ্টায় আবারও জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

এদিকে আবার ব্রডব্যান্ড লাইন বিচ্ছিন্ন অফিসেও যেতে পারছে না জাহিদ। অনেকটা অলস সময় যেন কাটছে তার। গ্রাম থেকে তার এক বন্ধু তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে,ডাটা সংযোগ কবে চালু হবে এ বিষয়ে সে কিছু জানে কিনা?

তার বন্ধু আরও জানলো ওদের ঐখানে ক্যাবল কানেকশন নেই, আর বিদ্যুৎ হচ্ছে ক্ষণিকের মেহমান। এই যেন হঠাৎ আসে আবার হঠাৎ চলেও যায়। সে তার বন্ধুকে জানালো ডাটা সেবা চালু হতে আরও বেশকিছুদিন সময় লাগতে পারে।

তার বন্ধু বললো ফোনে ডাটা কানেকশন নেই তাই ভালো লাগছে না,খুব অস্থির লাগছে।ডাটা ছাড়া মনে হচ্ছে বিচিত্র এক গ্রহে বসবাস করছি। বন্ধুর মুখে এমন কথা শুনে জাহিদের মনে পড়ে গেল বাল্যকালের সেদিনগুলোর কথা।

প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান এই পৃথিবী। অবশ্য বাল্যকালটা এর বিপরীত ছিল। তখন যে কেউ অকপটে তার মনের কথাগুলো গড়গড় করে বলে দিত। কোন রাগ-ঢাক থাকত না।হিংসা,রাগ,প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা এসব কোন কিছুই মনের মধ্যে সেসময়টাতে জায়গা করে নিতে পারত না।

আজ নাক ফাঁটিয়ে পরদিনেই একসাথে গোল্লাছুট খেলতে দেখা যেত। সেসময়কার সম্পর্কগুলো ছিল পাথরে খোদাইকৃত নকশার মত।যাতে ধুলো পড়লেও মুছে যেত না।মুছতে চাইলেও পাড়া যেত না।

বর্তমানে শিশুদের বাল্যকালটা বড় একপেশে।যান্ত্রিক এবং একঘরে।যেটাকে আমাদের সময়টাতে শাস্তি হিসেবে ধরা হত।অথচ আজ সেটাকেই ক্যারিয়ার গড়ার মাধ্যম ভাবা হয়।

ছোট থেকেই শিশুদেরকে বই,কম্পিউটার,স্মার্টফোন,আর কোচিং এর মধ্যে বন্দি করে ফেলা হয়। এরা সেই গোল্লাছুটের মজা বুঝবে না।বুঝবে না দুই টাকার ঝালমুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি করে জামায় দাগ পড়ানোর সেই ঝগড়ার স্বাদ।

জাহিদের মনে পড়ে বাল্যকালে মায়ের শাসনের কথা।রুটি বেলার বেলুন,খুন্তি,ঝাড়ু,চামচ এসব কিছু দিয়ে আবদ্ধ ছিল সেই বাল্যকাল। মায়ের সেই বৈচিত্রময় শাসনগুলো না পেলে হয়তো বাল্যকালটা নষ্ট স্মৃতিতে তলিয়ে যেত।

বর্তমানে মায়েদের শাসন, অ্যাই এখন পড়তে বসো।নইলে কিন্তু ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দেব।পাসওয়ার্ড হারানোর ভয়ে বাচ্চারা পড়তে বসে।পড়া শেষ হলেই আবার পুনরায় পাসওয়ার্ডের জগতে প্রবেশ করে।

বড় মধুর ছিল জাহিদের বাল্যকালের সেইদিনগুলি।বাল্যকালের স্মৃতিগুলো মনে পড়তেই কেন জানি মনের অজান্তেই তার চোখের কোণে পানি চলে আসলো।সত্যিই যদি আবার সেই বাল্যকালে ফিরে যেতে পারতাম।তাহলে এই যন্ত্রের যুগে আর ফিরে আসতাম না ….