০৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ বাড়ছে, সতর্কতা জারি ভালুকায় পোশাক শ্রমিক হত্যা: ১০ জন গ্রেপ্তার সাভারে ৫০৮ লিটার অবৈধ মদ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১ রাঙামাটির পুরাতন বাস টার্মিনালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়লো তিনটি বাস সুদানে ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন সমন্বিত প্রবৃদ্ধির পথে মালয়েশিয়া, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মাঝেও অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার বার্তা ৫৩ বছরে বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যম এমন অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়নি: মাহফুজ আনাম আইন নিজের হাতে নেওয়া সুশাসনের বড় বাধা: উপদেষ্টা খালিদ বিদেশি সহায়তা কমায় বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন: পাচার, নির্যাতন আর বাল্যবিবাহের ফাঁদে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব শেয়ারবাজারে সূচক পতন, ডিএসইতে লেনদেন কমলেও সিএসইতে বাড়তি গতি

বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস রোগীদের করনীয়

  • Sarakhon Report
  • ১২:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪
  • 84

ডাঃ মোঃ জাহিদুর রহমান

বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস (যা ডায়াবেটিস মেলাইটাস নামেও পরিচিত) হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কারণ হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। উপসর্গগুলো হলো ঘনঘন প্রস্রাব (পলিইউরিয়া), অত্যধিক তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া) এবং অত্যধিক ক্ষুধা (পলিফেজিয়া)। চিকিৎসা না করালে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়।

বহুমূত্ররোগের তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে:

১) টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয় যখন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না। পূর্বে এটি ইনসুলিন-নির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস অথবা জুভিনাইল ডায়াবেটিস নামে পরিচিত ছিল । বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার কারণ হলো অটোইমিউন বিক্রিয়া অটোইমিউনের সঠিক কারণ এখনও অজানা। বিটা কোষ ধ্বংসের হার বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। এটি যে-কোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশু ও তরুণদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। ১০-১৪ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এই হার শিখরে পৌঁছে।

২) টাইপ ২ ডায়াবেটিস শুরু ইনসুলিন রোধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে কোষ ইনসুলিনের প্রতি যথাযথ সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়। রোগের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইনসুলিনের ঘাটতিও তৈরি হয়। এটি পূর্বে ইনসুলিন-অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস নামে পরিচিত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো শরীরের অত্যধিক ওজন ও কায়িকশ্রমের অভাব।

৩) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলো তৃতীয় প্রধান ধরন। এটি হয় যখন একজন গর্ভবতী মহিলা যার ইতঃপূর্বে কখনো ডায়াবেটিসের ইতিহাস ছিল না কিন্তু গর্ভধারণ করার পর রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা বেড়ে যায়।

যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:

১) ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা;
২) দুর্বল লাগা’ ঘোর ঘোর ভাব আসা;
৩) ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া;
৪) সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া;
৫) মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া;


৬) কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া;
৭) শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা;
৮) চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব;
৯) বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা;
১০) চোখে কম দেখতে শুরু করা;

গর্ভকালীন বহূমূত্ররোগ- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কিছুটা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অনুরূপ। এতে ইনসুলিন ক্ষরণ ও সাড়াপ্রদান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ২-১০% গর্ভধারণের ক্ষেত্রে হতে পারে এবং প্রসবের পরে উন্নতি হতে পারে অথবা ভালো হয়ে যায়। সকল গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভধারণের ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রায়শই দেখা যায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টার বা ত্রিমাসে এটি বেশি হয় কারণ এই সময়ে ইনসুলিন-বিরোধী হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের ৫-১০% প্রসবের পরে ডায়াবেটিসের অন্য ধরন, বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।

লেখক: ডাঃ মোঃ জাহিদুর রহমান
এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য)
সিসিডি(বারডেম)
এমডি রেসিডেন্ট,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ বাড়ছে, সতর্কতা জারি

বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস রোগীদের করনীয়

১২:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

ডাঃ মোঃ জাহিদুর রহমান

বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস (যা ডায়াবেটিস মেলাইটাস নামেও পরিচিত) হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কারণ হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। উপসর্গগুলো হলো ঘনঘন প্রস্রাব (পলিইউরিয়া), অত্যধিক তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া) এবং অত্যধিক ক্ষুধা (পলিফেজিয়া)। চিকিৎসা না করালে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়।

বহুমূত্ররোগের তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে:

১) টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয় যখন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না। পূর্বে এটি ইনসুলিন-নির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস অথবা জুভিনাইল ডায়াবেটিস নামে পরিচিত ছিল । বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার কারণ হলো অটোইমিউন বিক্রিয়া অটোইমিউনের সঠিক কারণ এখনও অজানা। বিটা কোষ ধ্বংসের হার বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। এটি যে-কোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশু ও তরুণদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। ১০-১৪ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এই হার শিখরে পৌঁছে।

২) টাইপ ২ ডায়াবেটিস শুরু ইনসুলিন রোধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে কোষ ইনসুলিনের প্রতি যথাযথ সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়। রোগের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইনসুলিনের ঘাটতিও তৈরি হয়। এটি পূর্বে ইনসুলিন-অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস নামে পরিচিত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো শরীরের অত্যধিক ওজন ও কায়িকশ্রমের অভাব।

৩) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলো তৃতীয় প্রধান ধরন। এটি হয় যখন একজন গর্ভবতী মহিলা যার ইতঃপূর্বে কখনো ডায়াবেটিসের ইতিহাস ছিল না কিন্তু গর্ভধারণ করার পর রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা বেড়ে যায়।

যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:

১) ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা;
২) দুর্বল লাগা’ ঘোর ঘোর ভাব আসা;
৩) ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া;
৪) সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া;
৫) মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া;


৬) কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া;
৭) শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা;
৮) চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব;
৯) বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা;
১০) চোখে কম দেখতে শুরু করা;

গর্ভকালীন বহূমূত্ররোগ- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কিছুটা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অনুরূপ। এতে ইনসুলিন ক্ষরণ ও সাড়াপ্রদান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ২-১০% গর্ভধারণের ক্ষেত্রে হতে পারে এবং প্রসবের পরে উন্নতি হতে পারে অথবা ভালো হয়ে যায়। সকল গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভধারণের ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রায়শই দেখা যায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টার বা ত্রিমাসে এটি বেশি হয় কারণ এই সময়ে ইনসুলিন-বিরোধী হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের ৫-১০% প্রসবের পরে ডায়াবেটিসের অন্য ধরন, বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।

লেখক: ডাঃ মোঃ জাহিদুর রহমান
এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য)
সিসিডি(বারডেম)
এমডি রেসিডেন্ট,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়